গোদাগাড়ীতে নদীর পলি কেটে হচ্ছে ইট, জমি হারাচ্ছে উর্বরতা

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

সাধারণত বালুঘাট ইজারা দেওয়া হয় নদী থেকে বালু উত্তোলন করার জন্য। কিন্তু রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার ভাটোপাড়া ফুলতলা বালুঘাট দিয়ে বালু উত্তোলনের পাশাপাশি নদীর পলিমাটি কেটে ইটভাটায় বিক্রি করছেন ইজারাদার।

এতে নদীর কূলসংলগ্ন জমিগুলো উর্বরতা হারাচ্ছে। স্থানীয় লোকজন এ নিয়ে প্রশাসনের কাছে অভিযোগও করেছে। এর পরও ইজারাদারের দাপটে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। ফলে প্রতিদিন শত শত ট্রাক জমির পলিমাটি যাচ্ছে ইটভাটায় ইট তৈরির কাজে। এ নিয়ে চরম ক্ষোভ দেখা দিয়েছে স্থানীয় লোকজনের মধ্যে।

অভিযোগ রয়েছে, ইজারাদারের লোকজন নদী থেকে বালুর পরিবর্তে বেশির ভাগ সময় পলিমাটি কেটে নিয়ে যাচ্ছে।

এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, অন্তত এক মাস ধরে গোদাগাড়ী উপজেলার ভাটোপাড়া ফুলতলা এলাকায় গোদাগাড়ী রক্ষা বাঁধের নিচেই কাশবন ধ্বংস করে পলিমাটি উত্তোলন করা হচ্ছে। এর জন্য নদীর পাড় কেটে রাস্তা তৈরি করা হয়েছে। আর পাড়ে নিচের চর থেকে শুকনো পলিমাটি উত্তোলন করা হচ্ছে। এতে যেমন নদীর তীর সংরক্ষণ বাঁধ হুমকির মুখে পড়েছে, তেমনি জমি হারাচ্ছে তার উর্বরতা। আবার বর্ষা মৌসুমে এ পলিমাটি ভেসে গিয়ে নদীর উপকূলসংলগ্ন জমিতে গিয়ে উর্বরতা সৃষ্টি করে। কিন্তু জমির পলিমাটি কেটে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে ইট তৈরির জন্য। ইজারাদার প্রতিদিন অন্তত ৪০০ ট্রাক বা ট্রলিতে করে পলিমাটি কেটে নিয়ে যান ইটভাটায়।

মাটি উত্তোলনের সঙ্গে জড়িত লরি ড্রাইভার আব্দুল হামিদ বলেন, ‘প্রতি ট্রাক মাটির জন্য বালুর ঘাট ইজাদারকে ৭০০ টাকা দিতে হয়। প্রতি ট্রাক মাটি ইটভাটায় বিক্রি করে দুই হাজার ৫০০ থেকে তিন হাজার টাকা পর্যন্ত আসে। ইটভাটা ছাড়াও পুকুর ভরাটসহ নানা কাজের জন্যও এই পলিমাটি কিনে নিয়ে যাচ্ছে লোকজন। তবে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হচ্ছে উপজেলার ২৫টি ইটভাটায়। এসব ইটভাটায় একমাত্র উপাদান হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে নদীর পলিমাটি। ’

ভাটোপাড়া গ্রামের মনিরুল ইসলাম, সাইফুল ইসলাম, আকবর হোসেনসহ আরো অনেকে জানায়, এত দিন বর্ষা শেষে ভাটোপাড়া ফুলতলা এলাকায় জেগে ওঠা চরে বিভিন্ন ফসল চাষ করে আসছিল স্থানীয় দুই শতাধিক কৃষক। যেসব জমিতে পলি পড়েছে, সেসব জমিগুলোও তাদের। বছরের পর বছর ধরে নদী ভাঙতে ভাঙতে সেগুলো এখন পলিমাটির চরে পরিণত হয়েছে। কিন্তু ঘাট ইজারা নিয়ে সেখান থেকে বালু ও পলিমাটি কেটে নেওয়ায় এবার কৃষকরা কোনো ফসল করতে পারেনি।

স্থানীয় কৃষক মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘এ ঘাট ইজারা না দেওয়ার জন্য আমরা প্রশাসনকে অনুরোধ করেছি। কিন্তু প্রশাসন আমাদের কোনো কথা শোনেনি। ঘাটটি স্থানীয়দের বাধা উপেক্ষা করেই ইজারা দেওয়া হয়েছে। ’