গুলশান সেন্টারে গ্রেনেড হামলার এক যুগ

 সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

সিলেট নগরীর তালতলাস্থ গুলশান সেন্টারে গ্রেনেড হামলার এক যুগ পূর্তি হচ্ছে আজ রোববার। ২০০৪ সালের ৭ আগস্ট ওই সেন্টারে আওয়ামী লীগের কার্যকরী সভা শেষে গ্রেনেড হামলার ঘটনা ঘটে। ওই হামলায় নগর আওয়ামী লীগের তৎকালীন প্রচার সম্পাদক ইব্রাহিম আলী নিহত হন।

গ্রেনেডের স্প্লিন্টারের আঘাতে আহত হন ২০ জন নেতা-কর্মী। আহত সেই নেতা-কর্মীদের অনেকেই এখনো ফিরতে পারেননি স্বাভাবিক জীবনে। স্প্লিন্টার শরীরে বয়ে, অসহ্য যন্ত্রণা ভোগ করে চলেছেন তারা।

হামলার পর তৎকালীন সরকারের পক্ষ থেকে ঘটনাকে ‘আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের ফল’ বলে উল্লেখ করা হয়। ওই সময় প্রবাসী আওয়ামী লীগ নেতা নুনু মিয়া, সিলেট মহানগর ছাত্রলীগের তৎকালীন আহ্বায়ক হাবিবুর রহমান, যুগ্ম আহ্বায়ক ইলিয়াসুর রহমান, তৎকালীন ছাত্রলীগ নেতা বিধান কুমার সাহা, রণজিৎ সরকারসহ কয়েকজনকে আটকও করা হয়।

ঘটনার পরদিন সিলেট কোতোয়ালি থানার তৎকালীন এসআই এনামুল হক বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামাদের আসামি করে হত্যা মামলা ও বিস্ফোরক মামলা দায়ের করেন।

পরবর্তী সময়ে ২০০৮ সালের ২০ সেপ্টেম্বর সিআইডির তৎকালীন পরিদর্শক জুবায়ের আহমদ নিষিদ্ধঘোষিত জঙ্গি সংগঠন হরকাতুল জিহাদের (হুজি) নেতা মুফতি হান্নান, মুহিবুল্লাহ, শরীফ সাহেদুল আলম ওরফে বিপুলসহ ৬ জঙ্গিকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেন। আদালতে হামলার দায় স্বীকার করেন শরীফ সাহেদুল আলম।

আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর ২০১০ সালের ২ আগস্ট আদালতে মামলা পরিচালনাকারী আওয়ামী লীগ নেতা ও পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ মামলার পুনঃতদন্তের আবেদন জানান। আদালত আবেদন আমলে নেন।

অধিকতর তদন্ত শেষে সিআইডির সিলেট অঞ্চলের জ্যেষ্ঠ সহকারী পুলিশ সুপার রওনকুল হক চৌধুরী ২০১৩ সালের ১৭ জুলাই আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করেন। তাজ উদ্দিন ও আবদুল মাজেদ ভাট ওরফে ইউসুফ ভাটকে যুক্ত করে ৮ জঙ্গির বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়।

বর্তমানে মামলা দুটির অবস্থা সম্পর্কে সিলেট জেলা জজকোর্টের অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর শামসুল ইসলাম জানান, হত্যা মামলায় অভিযোগ গঠনের প্রক্রিয়া চলছে। অন্যদিকে বিস্ফোরক মামলায় সাক্ষ্য গ্রহণ চলছে।

এদিকে ওই গ্রেনেড হামলায় আহতদের অনেকেই এখনো যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন। শরীর বিদ্ধ থাকা স্প্লিন্টারের নির্মম যন্ত্রণা সহ্য করে চলেছেন তারা।

হামলায় আহতদের মধ্যে ছিলেন সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমানে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ, আওয়ামী লীগ নেতা মফুর আলী, এনামুল হক, তুহিন কুমার দাস, কাউন্সিলর ফয়জুল আনোয়ার, অধ্যাপক জাকির হোসেন, অ্যাডভোকেট রাজ উদ্দিন, কবীর আহমদ, তপন মিত্র, জুবের খান, শেখ মখলু মিয়া, প্রদীপ পুরকায়স্থ, এ টি এম হাসান জেবুল, ফাহিম আনোয়ার, আজম খান, সোবহান আহমদ, মুক্তিযোদ্ধা শওকত আলী, আনোয়ার হোসেন রানা ও জামাল চৌধুরী।

এদের অনেকেই এখনো স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারেননি। কেউ কেউ খুঁড়িয়ে চলেন, কেউ কেউ ক্রাচে ভর দিয়ে চলেন।

গ্রেনেড হামলায় আহত আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ বলেন, ‘দুঃসহ স্মৃতি ভুলতে পারি না। কীভাবে যেন বেঁচে গেলাম! তবে এখনো শরীরে স্প্লিন্টার বিদ্ধ। চলাফেরা করতে পারলেও স্প্লিন্টারের যন্ত্রণা প্রায়ই কাতর করে তুলে।’

সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সিনিয়র সদস্য শওকত আলী বলেন, ‘গ্রেনেডের স্প্লিন্টার আমার বাঁ পায়ের দুই ইঞ্চি উড়িয়ে নিয়ে গেছে। ক্রাচে ভর দিয়ে কোনোরকমে চলাফেরা করি।’

মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন বলেন, ‘আমার মাথা, চোখ, পেট ও পায়ে স্প্লিন্টার লেগেছিল। তাৎক্ষণিকভাবে ওসমানী হাসপাতালে পেট কেটে অপারেশন করা হয়। বর্তমানে শরীরে থাকা স্প্লিন্টারের কারণে প্রায়ই চোখ ফুলে যায়, হাঁটু ফুলে যায়।’

সেদিন কার্যকরী সভা শেষে তৎকালীন সিটি মেয়র বদর উদ্দিন আহমদ কামরান বেরিয়ে যাওয়ার পরই গ্রেনেড হামলা হয়েছিল। ভাগ্যক্রমে বেঁচে যাওয়া কামরান ওই হামলা প্রসঙ্গে বলেন, ‘সিলেটে আওয়ামী লীগের নেতাদের নিশ্চিহ্ন করতেই হামলা করা হয়েছিল। কিন্তু ষড়যন্ত্রকারীরা ব্যর্থ হয়েছে।’

এদিকে ৭ আগস্ট ওই গ্রেনেড হামলার পর, ১২ আগস্ট তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী শেখ হাসিনা আহতদের দেখতে সিলেট এসেছিলেন। এর কদিন পর, ২১ আগস্ট ঢাকায় তার জনসভাতেই গ্রেনেড হামলা চালানো হয়। সেদিন ভাগ্যক্রমে বেঁচে যান শেখ হাসিনা।

সূত্র :রাইজিংবিডি