গুপ্তচরবৃত্তি’ ধারায় হয়রানির আশঙ্কা সাংবাদিকদের

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

বহুল আলোচিত নিপীড়নমূলক আইসিটি অ্যাক্টের ৫৭সহ ৫টি ধারা বিলুপ্ত করে ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন-২০১৮’র খসড়া অনুমোদন করেছে মন্ত্রিসভা। তবে বিলুপ্ত করা আইসিটি অ্যাক্টের এই ধারাগুলো প্রস্তাবিত নতুন আইনে বিভিন্নভাবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এছাড়া অনুমোদন পাওয়া আইনের খসড়ায় কম্পিউটার বা ডিজিটাল গুপ্তচরবৃত্তির অপরাধ সংক্রান্ত ৩২ ধারায় সাংবাদিকরা হয়রানির শিকার হতে পারে বলে আশঙ্কা সংশ্লিষ্টদের।

সোমবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার বৈঠকে প্রস্তাবিত আইনটির খসড়ায় চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়া হয়। আইনটি সংসদে পাস হলে আইসিটি অ্যাক্টের ৫৪, ৫৫, ৫৬, ৫৭ ও ৬৬ ধারাগুলো বিলুপ্ত হবে। মন্ত্রিসভার বৈঠকের সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে প্রস্তাবিত আইনের খসড়া অনুমোদন পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম। তিনি আরও জানান, জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত নারী আসন আরও ২৫ বছর বাড়ানোর প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা।

অনুমোদন পাওয়া ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে ‘কম্পিউটার বা ডিজিটাল গুপ্তচরবৃত্তির অপরাধ’ সংক্রান্ত ৩২ ধারায় বলা হয়েছে, ‘যদি কোনো ব্যক্তি বেআইনি প্রবেশের মাধ্যমে সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত বা সংবিধিবদ্ধ সংস্থার কোনো ধরনের গোপনীয় বা অতি গোপনীয় তথ্য-উপাত্ত কম্পিউটার, ডিজিটাল ডিভাইস, কম্পিউটার নেটওয়ার্ক বা অন্য কোনো ইলেকট্রনিক মাধ্যমে ধারণ, প্রেরণ বা সংরক্ষণ করেন বা সংরক্ষণে সহায়তা করেন তাহলে কম্পিউটার বা ডিজিটাল গুপ্তচরবৃত্তির অপরাধ বলে গণ্য হবে। এজন্য সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির শাস্তি অনধিক ১৪ বছর কারাদণ্ড বা অনধিক ২৫ লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবে। আর এই অপরাধ যদি একই ব্যক্তি দ্বিতীয়বার করেন বা বারবার করেন তাহলে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড বা এক কোটি টাকা অর্থদণ্ড অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।’

সংবাদকর্মীসহ সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ, আইসিটি অ্যাক্টের ৫৭ ধারা বিলুপ্ত করা হলেও প্রস্তাবিত আইনের ৩২ ধারায় হয়রানির আশঙ্কা করছেন সাংবাদিকরা। তাদের মতে, এ ধারার আওতায় গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে নতুন করে নিপীড়ন ও হয়রানির শিকার হতে পারেন। এ বিষয়ে সাংবাদিক নেতারা বলেছেন, আইনটি সংসদে পাস করার আগে বিস্তারিত আলোচনার দরকার আছে। গণমাধ্যম সংশ্লিষ্টদের মতামত নিয়ে আইনটি সংসদে পাস করা উচিত। অন্যদিকে আইন বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, এ আইনে বাকস্বাধীনতাকে অপরাধে পরিণত করা হয়েছে। ফিরে যাওয়া হয়েছে মধ্যযুগে।

আইসিটি অ্যাক্টের ৫৭ ধারাটিই ডিজিটাল আইনের ৩২ ধারা হিসেবে ফিরে এলো কিনা সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম বলেন, ‘না’। এ আইনে কোথাও কোনো ধারায় সাংবাদিকদের টার্গেট করা হয়নি। ‘যে কোনো ব্যক্তির’ আওতায় গণমাধ্যমকর্মীরা পড়েন কিনা- জানতে চাওয়া হলে তিনি কোনো জবাব দেননি।

কেন ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন করতে হল- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রিপরিষদ সচিব শফিউল আলম বলেন, ‘সাইবার ক্রাইমের আধিক্য এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির মতো ঘটনা ঘটেছে। ফলে এ আইন করার প্রয়োজন হয়েছে। আগে সাইবার ক্রাইমের জন্য কোনো আইন ছিল না। এখন এ জাতীয় সব অপরাধের বিচার এ আইনের আওতাভুক্ত করা হয়েছে। আইনে ডিজিটালের সংজ্ঞা, ডিজিটাল ফরেনসিক ল্যাব করা, ইমার্জেন্সি রেসপন্স টিম গঠন, প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে ১১ সদস্যের একটি ডিজিটাল নিরাপত্তা কাউন্সিল গঠনের কথা বলা হয়েছে। নতুন আইনের ১৭ থেকে ৩৮ ধারায় বিভিন্ন অপরাধ ও শাস্তির বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে।’

মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘কেউ যদি বেআইনিভাবে কারও ওয়েবসাইটে প্রবেশ করে তাহলে তাকে সাত বছরের জেল ও ২৫ লাখ টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ড দেয়া হবে। বেআইনিভাবে অন্য সাইটে প্রবেশ করার পর যদি ওয়েবসাইটের মাধ্যমে কেউ ক্ষতিগ্রস্ত হন তবে ১৪ বছরের জেল ও এক কোটি টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ড দেয়া হবে। আবার কেউ যদি বেআইনিভাবে কারও ডিভাইসে প্রবেশ করে তাহলে এক বছরের জেল ও তিন লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ড। কেউ যদি কারও ডিভাইসে প্রবেশে সহায়তা করে তাহলে তাকে তিন বছরের জেল ও তিন লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ড দেয়া হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘কেউ যদি কারও কম্পিউটারের সোর্স কোড পরিবর্তন বা ধ্বংস করে, তাহলে তিন বছরের জেল ও তিন লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ড দেয়ার বিধান রাখা হয়েছে। কেউ যদি ডিজিটাল মাধ্যম ব্যবহার করে মুক্তিযুদ্ধ, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা এবং জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কোনো ধরনের প্রপাগান্ডা চালায় তাহলে ১৪ বছরের জেল ও এক কোটি টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ড দেয়ার বিধান রাখা হয়েছে আইনটিতে।’

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের খসড়ার ১৭ ধারায় বলা হয়েছে, ডিজিটাল মাধ্যম ব্যবহার করে কেউ যদি জনগণকে ভয়ভীতি দেখায় এবং রাষ্ট্রের ক্ষতি করে তাহলে ১৪ বছরের জেল ও এক কোটি টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ড দেয়া যাবে। ২৫ ধারায় বলা হয়েছে, কেউ যদি ওয়েবসাইট বা ডিজিটাল মাধ্যমে আক্রমণাত্মক ভয়ভীতি দেখায় তাহলে তাকে তিন বছরের জেল ও তিন লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ড দেয়া যাবে। খসড়া আইনের ২৮ ধারায় ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে। এতে কেউ যদি ধর্মীয় বোধ ও অনুভূতিতে আঘাত করে তাহলে তাকে ১০ বছরের জেল ও ২০ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ড দেয়ার বিধান রাখা হয়েছে।

প্রস্তাবিত আইনের ২৯ ধারায় মানহানির শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে। যা আগে ছিল আইসিটি অ্যাক্টের ৫৭ ধারায়। ওই আইনে শাস্তি ছিল ১৪ বছর এবং ধারাটি ছিল জামিন অযোগ্য। কিন্তু নতুন আইনে সাজা কমানো হয়েছে এবং ধারাটি জামিনযোগ্য করা হয়েছে। এতে বলা হয়, ‘কেউ মানহানিকর কোনো তথ্য দিলে তাকে তিন বছরের জেল ও পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করা যাবে।

প্রস্তাবিত আইনের ৩০ ধারায় বলা হয়েছে, না জানিয়ে কোনো ইলেকট্রনিক্স ডিভাইস ব্যবহার করে ব্যাংক-বীমায় ই-ট্রানজেকশন করলে পাঁচ বছরের জেল ও পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ড বিধান রাখা হয়েছে। ৩১ ধারায় বলা হয়েছে, ডিজিটাল মাধ্যম ব্যবহার করে কেউ অরাজকতা সৃষ্টি করলে সাত বছরের জেল ও পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ৫৪(ক) ধারা অনুযায়ী আইনটির ১৭, ১৯, ২১, ২২, ২৩, ২৪, ২৬, ২৭, ২৮, ৩০, ৩১, ৩২ ও ৩৪ ধারার অপরাধ জামিন অযোগ্য। আর ৫৪(খ) ধারা অনুযায়ী আইনের ২০, ২৫, ২৯ এবং ৪৮ ধারার অপরাধ জামিনযোগ্য।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ৬২ ধারায় উল্লেখ করা হয়েছে- আইসিটি অ্যাক্টের ৫৪, ৫৫, ৫৬, ৫৭ ও ৬৬ ধারা পুরোপুরি বিলুপ্ত করা হবে। ইতিমধ্যে ৫৭ ধারার করা চলমান মামলাগুলোর ভবিষ্যৎ কী হবে? জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘অতীতের মামলাগুলো যথারীতি চলবে। তবে আদালতকে মনে করতে হবে এ সংক্রান্ত কোনো আইন নেই। তিনি যে রায় দেবেন সেটাই চূড়ান্ত।’

এদিকে প্রস্তাবিত আইনের ৩২ ধারা প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি মনজুরুল আহসান বুলবুল বলেন, জঙ্গি-সন্ত্রাসীরা আধুনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে বা গুপ্তচরবৃত্তি করে কোনো অপরাধ করলে তাদের জন্য ধারাটি প্রযোজ্য হতে পারে। কিন্তু আইনটি গণমাধ্যম কর্মীদের ক্ষেত্রে কীভাবে ব্যবহার করা হবে, তার একটা ব্যাখ্যা থাকা দরকার। আইনটি সংসদে পাস করার আগে সাংবাদিক প্রতিনিধি, শিক্ষক ও মানবাধিকারকর্মীদের মতামত নেয়া উচিত। সুনির্দিষ্ট করতে হবে গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগটি কার জন্য করা হয়েছে। আমি মনে করি, আসল গুপ্তচরদের ধরা হোক। কিন্তু সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে ধারাটি ব্যবহার করা ঠিক হবে না। আইনটি সংসদে পাস করার আগে ব্যাপক আলোচনার দরকার আছে বলে আমি মনে করি।

মধ্যযুগে ফিরে যাওয়ার আইন : সংবিধান বিশেষজ্ঞ ড. শাহদীন মালিক বলেছেন, ৫৭ ধারাকে ভেঙে চারটি ধারা করা হয়েছে। এখানে বিভিন্ন ধরনের বাকস্বাধীনতাকে অপরাধে পরিণত করা হয়েছে। এ সম্পর্কে কোনো রিরূপ মন্তব্য করা যাবে না, প্রশ্ন করা যাবে না, সমালোচনা করলে সর্বোচ্চ ১৪ বছর কারাদণ্ড হবে। এসব আইন শুনে খুব দুঃখ লাগে। আমেরিকার সংবিধানে ১৭৯১ সালে তারা বলেছিল, সংসদ বাকস্বাধীনতা খর্ব করে কোনো আইন পাস করতে পারবে না। ওটা হল গণতন্ত্র। এটা পনের’শ, ষোল’শ এবং সতের’শ সালে ইংল্যান্ড, ফ্রান্স, জার্মানিতে বড় বড় রাজা করতেন। তারা তখন আইন করতেন রাজার ব্যাপারে, তাদের পুত্র, কন্যা, তাদের ড্রেস ও মুকুটের ব্যাপারে- কোনো বিরূপ মন্তব্য করলে শূরে চড়ানো হবে। হাজার হাজার লোককে মধ্যযুগে শূরে চরানো হয়েছে। মধ্যযুগ আর গণতন্ত্রের পার্থক্য হল- গণতন্ত্রে সবাই কথা বলতে পারবে। আমরা সোয়া দুইশ’ বছর আগের আমেরিকাকে অতটা গণতান্ত্রিক না বলি, কিন্তু এখন এতকিছুতে কথা বলা যাবে না। আমি তো বলব, এটা মধ্যযুগে ফিরে যাওয়ার আইন।

ডিজিটাল আইন নাগরিক অধিকারের ওপর প্রভাব ফেলবে কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আইনে যেটা বলা হচ্ছে, এই ব্যাপারে ওই ব্যাপারে কথা বললে, সমালোচনা করলে ১৪ বছর পর্যন্ত জেল হবে। আমি বুঝি গণতন্ত্র মানে হল কথা বলার স্বাধীনতা। যেই আইন কথা বলার স্বাধীনতাকে কেড়ে নেয়, সেটা গণতান্তিক আইন নয়। সেটা মধ্যযুগে ফিরে যাওয়ার আইন।

৫৭ ধারায় দায়ের হওয়া মামলাগুলো চলবে : ৫৭ ধারা বাতিল হলেও এই ধারায় দায়ের হওয়া মামলাগুলোর কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছেন পুলিশের মহাপরিদর্শক একেএম শহীদুল হক। সোমবার বিকাল ৩টায় পুলিশ সদর দফতরে মুক্তিযুদ্ধে প্রথম প্রতিরোধ বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন। আইজিপি বলেন, নতুন যে আইন হচ্ছে সেটা না দেখে কোনো মন্তব্য করা যাবে না। বইটি সম্পর্কে আইজিপি বলেন, পুলিশ সদস্যরা যাতে সে সময়ের পুলিশ বাহিনীর অবদান সম্পর্কে জানতে পারে, সেজন্যই এ প্রচেষ্টা। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে পুলিশ প্রথম যে প্রতিরোধ গড়ে তোলে, তার পেছনের মনোবল ছিল বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ। বইটির মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। উল্লেখ্য, সোমবার মন্ত্রিসভায় জেল জরিমানার বিধান রেখে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন-২০১৮’র খসড়া চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়া হয়। আইনটি সংসদে পাস হলে আইসিটি অ্যাক্টের ৫৪, ৫৫, ৫৬, ৫৭ ও ৬৬ ধারা পুরোপুরি বিলুপ্ত করা হবে।

প্রসঙ্গত, ২০১৬ সালের ২২ জুলাই মন্ত্রিসভা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের খসড়াটি নীতিগতভাবে অনুমোদন করে। খসড়ায় জাতির পিতা, মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিরুদ্ধে প্রোপাগান্ডা, প্রচারণা এসবে মদদ দেয়ার শাস্তি যাবজ্জীবন কারাদণ্ড বা এক কোটি টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডের বিধান রাখা হয়েছিল।

সংরক্ষিত নারী আসন আরও ২৫ বছর : মন্ত্রিপরিষদ সচিব সোমবার সাংবাদিকদের জানান, মন্ত্রিসভার বৈঠকে জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত নারী আসনের মেয়াদ ২৫ বছর বাড়াতে ‘সংবিধান (সপ্তদশ সংশোধন) আইন-২০১৮’র খসড়া চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ আইন-২০১৮ খসড়ায় অনুমোদন দেয়া হয়েছে।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম আরও বলেন, ‘আমাদের সংবিধানে সংরক্ষিত নারী আসনের সংখ্যা কম ছিল, ওটা বাড়িয়ে ৫০ করা হয়েছে। ২০১১ সালে এটা করা হয়। সংরক্ষিত নারী আসনের মেয়াদ শেষ হয়ে যাচ্ছে বলে আবার নতুনভাবে মেয়াদ কার্যকর করার জন্য প্রস্তাবটা আনা হয়েছে। এ ৫০টি আসন আগামী ২৫ বছরের জন্য আবার সংরক্ষিত থাকবে।’ তিনি বলেন, ‘এটা এমনভাবে হবে যে, পরবর্তী সংসদের (একাদশ সংসদ) প্রথম বৈঠক (অধিবেশন) থেকে শুরু করে ২৫ বছর পর্যন্ত সংসদ না ভেঙে যাওয়া পর্যন্ত এসব আসন সংরক্ষিত থাকবে।’ এর আগে তিন দফায় ৩৫ বছর বাড়ানো হয় সংসদে সংরক্ষিত নারী আসনের মেয়াদ। আগামী বছরের ২৪ জানুয়ারি শেষ হবে সর্বশেষ বাড়ানো নারী আসনের ১০ বছর মেয়াদ।

২০০৪ সালে সংবিধানের চতুর্দশ সংশোধনে নারী আসন ৩০ থেকে বাড়িয়ে ৪৫ করা হয়। ২০০৯ সালে ৪৫ থেকে তা ৫০ করা হয়। ২০০৪ সালে অষ্টম জাতীয় সংসদে সংরক্ষিত ৪৫টি নারী আসনের মেয়াদকাল নির্ধারণ করা হয় পরবর্তী সংসদের অর্থাৎ নবম সংসদের প্রথম বৈঠক থেকে ১০ বছর। নবম জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশন বসে ২০০৯ সালের ২৫ জানুয়ারি। সেই হিসাবে সংরক্ষিত নারী সংসদ সদস্যের মেয়াদ আছে ২০১৯ সালের ২৪ জানুয়ারি পর্যন্ত। ২০১১ সালে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে সংরক্ষিত নারী সদস্যদের সংখ্যা ৪৫ থেকে বাড়িয়ে ৫০ করা হয়। তবে ওই সময় আর মেয়াদ বাড়ানো হয়নি।

নারীর ক্ষমতায়নের বিষয়ে সংবিধান বিশেষজ্ঞ ড. শাহদীন মালিক বলেন, ’৭২ সালে যখন সংরক্ষিত নারী আসনের কথা সংবিধানে বলা হয়েছিল, তখন আমরা অনেক পিছিয়ে ছিলাম। নারীদের অধিকার অনেক পিছিয়ে ছিল। তার প্রায় ৫০ বছরের মাথায় এসেও সরকার নারীদের জন্য সংরক্ষিত আসনে সরাসরি ভোটের অধিকার করছে না। ভোটের ব্যবস্থা করছে না। প্রতিটি জেলায় একটি আসন থাকবে, যেখানে সব রাজনৈতিক দল নারী প্রার্থী দেবে এবং ওই আসনে ভোটাররা সরাসরি ভোটে নারী সংসদ সদস্যকে নির্বাচিত করবে। সরকারকে নারীদের এখনও কেন সংরক্ষণ করতে হবে, আঁচলে ঢেকে রাখতে হবে। এটা সরকার কেন ভাবছে, তা বোধগম্য না। প্রত্যাশা ছিল সরকার বলবে ৫০টি বা প্রত্যেকটি জেলায় অর্থাৎ ৬৪ জেলায় একটি করে সংরক্ষিত নারী আসন থাকবে। যেখানে প্রতি জেলায় নারীরা সরাসরি ভোটারদের ভোটে নির্বাচিত হবেন। তাহলে আমরা বুঝতাম নারীর ক্ষমতায়নে আমরা একধাপ এগিয়ে যাচ্ছি। এখন কিন্তু আমরা বাহাত্তরের জায়গায়ই রয়ে গেছি। পঞ্চাশ বছরের পেছনের জায়গায়ই রয়ে গেছি। শুধু সংখ্যাটা বেড়েছে, তখন ছিল ১৫ এখন ৫০শে এসেছি। কিন্তু আর সবই তো সমান রয়েছে। এটা নারীর ক্ষমতায়নের জন্য মোটেও যুগোপযোগী সংবিধান সংশোধন হচ্ছে বলে আমার মনে হয়নি। যুগান্তর