গাজীপুরের টঙ্গী

পুলিশের জিম্মায় ডেসটিনির জমি, ভরাট করছে অন্যরা

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

গাজীপুরের টঙ্গী শিল্প এলাকায় বহুল আলোচিত মাল্টিলেভেল মার্কেটিং (এমএলএম) কম্পানি ডেসটিনি গ্রুপের কয়েক শ কোটি টাকার জমি ও স্থাপনা রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব এখন পুলিশের। গত শনিবার দুপুর দেড়টার দিকে সোনালী টোব্যাকো রোডের ওই জমিতে গিয়ে দেখা গেছে, সীমানাপ্রাচীর ভেঙে ট্রাক দিয়ে বালুমাটি ফেলে জমি ভরাট চলছে। দাঁড়িয়ে থেকে ভরাটকাজ তদারক করছেন গাজীপুর জেলা কাভার্ড ভ্যান-ট্রাক মালিক সমিতি ও গাজীপুর জেলা কাভার্ড ভ্যান-ট্রাক শ্রমিক ইউনিয়নের নেতারা।

আদালতের নির্দেশে ২০১৩ সাল থেকে ডেসটিনির জমি ও স্থাপনা রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব পুলিশের।

এর পরও ভ্যান-ট্রাক মালিক সমিতি কিভাবে জমি ভরাট করছে—জানতে চাইলে সমিতির নেতারা বলেন, ডেসটিনি নয়, এখন জমির মালিক পুলিশ। তাঁদের সমিতির গাড়ি রাখার জায়গা

না থাকায় kalerkantho

পুলিশের অনুমতি নিয়ে সংগঠনের টাকায় ওই জমি ভরাট করা হচ্ছে। তাঁদের গাড়ির সঙ্গে ইজতেমা মাঠে থাকা পুলিশের ডাম্পিং করা গাড়িও এখানে রাখা হবে।

জেলা কাভার্ড ভ্যান-ট্রাক মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আজাদ হোসেন জানান, তাঁদের পাঁচ হাজারের বেশি গাড়ি আছে। এসব গাড়ি রাখার কোনো স্ট্যান্ড নেই। সামনে বিশ্ব ইজতেমা। তা ছাড়া সড়কে বিআরটির কাজও চলছে। তাই ইজতেমার সময় যাতে যানজট না হয় তাই এ জায়গাটি ট্রাক-কাভার্ড ভ্যানের স্ট্যান্ড হিসেবে ব্যবহার করা হবে। জমি পুলিশই ভরাট করছে। সমিতির নেতারা শুধু তদারক করছেন আর টাকাও দিচ্ছে সমিতি। তিনি আরো জানান, গত মঙ্গলবার থেকে জমি ভরাট শুরু হয়েছে। ভরাটকাজ শেষ করতে আনুমানিক ৫০ থেকে ৬০ লাখ টাকা লাগতে পারে।

কাভার্ড ভ্যান-ট্রাক শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি হাজি আবদুর রশিদ বলেন, পুলিশের সঙ্গে আলোচনা করেই তাঁরা ভরাটের কাজ করছেন। মালিক সমিতি ও শ্রমিক ইউনিয়ন-এই দুই সংগঠনের সদস্যসংখ্যা আড়াই হাজারের বেশি। গাড়ির সংখ্যা পাঁচ হাজার। দুই সংগঠন প্রতিদিন গাড়িপ্রতি ১০০ টাকা করে চাঁদা নেয়। মাসে দেড় কোটি টাকা আদায় হয়। এই টাকায় ২৫ জন নাইটগার্ডের বেতন এবং সংগঠনের সদস্যদের জরুরি প্রয়োজনে ব্যয় করা হয়।

সাময়িক সুবিধার জন্য জমি ভরাট বাবদ এত টাকা খরচ করছেন কেন জানতে চাইলে শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি জানান, দীর্ঘমেয়াদি ব্যবহারের আশ্বাসেই তাঁরা টাকা ব্যয় করছেন। তাঁদের দুই সমিতির গাড়ির পাশাপাশি পুলিশের ডাম্পিং করা গাড়িগুলোও ইজতেমা মাঠ থেকে এনে এখানে রাখা হবে।

হাজি আবদুর রশিদ আরো বলেন, ‘মঙ্গলবার থেকে ভরাটের কাজ শুরু হয়েছে। শনিবার পর্যন্ত পাঁচ দিনে মাত্র তিন-চার কাঠা ভরাট করা হয়েছে। প্রথম দুই দিন রাস্তার পাশে বালু ও মাটি ফেলা হয়, তখন বোঝা যায়নি জায়গাটা এত গভীর। এ পর্যন্ত সাত-আট শ ট্রাক বালুমাটি ফেলা হয়েছে। শুধু বালু ফেললে পানির সঙ্গে মিশে যায়। তাই শনিবার থেকে আবর্জনা, পুরনো ইট-সুরকি, ঝুট ফেলা হচ্ছে। এরই মধ্যে ছয়-সাত লাখ টাকা শেষ। ’

ট্রাক-কাভার্ড ভ্যান শ্রমিক ইউনিয়নের একজন নেতা নাম না প্রকাশের শর্তে বলেন, চট্টগ্রাম বন্দর থেকে গাজীপুর শিল্পাঞ্চলে প্রতিদিন শত শত গাড়ি পণ্য নিয়ে গাজীপুর যাতায়াত করে। এসব পণ্য নামিয়ে বিশ্রাম বা নতুন করে ভাড়ার জন্য গাড়িচালকরা টঙ্গীতে অবস্থান করেন। এসব থেকে চাঁদা ওঠানো হয়। এসব আয়ের ভাগ সংগঠন ছাড়াও স্থানীয় প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতাসহ কয়েক স্তরে ভাগ হয়।

জানা গেছে, ২০০৫ সালে ডেসটিনি মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের জন্য টঙ্গীতে ২৯ বিঘা জমি কেনা হয়। ২০০৮ সালে জমিটির ওপর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল তৈরির জন্য ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়। ২০১২ সালে হাসপাতাল নির্মাণের কাজের প্রস্তুতি নেওয়ার পর ওই বছরই অর্থপাচার মামলা হয় ডেসটিনি মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক রফিকুল আমীন ও চেয়ারম্যান সাবেক সেনাপ্রধান হারুন-অর-রশীদসহ ৫৩ জনের বিরুদ্ধে। এর পর থেকে টঙ্গীর জমিটি পরিত্যক্ত। পরে আদালতের নির্দেশে এই জমি দেখাশোনার দায়িত্ব পায় পুলিশ। এই প্লটের সম্মুখভাগে গত বুধবারও সাইনবোর্ড টানানো দেখা গেছে, যাতে লেখা-‘মহানগর বিশেষ মামলা নং ২৪/১৩ইং মূলে বিজ্ঞ মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ, ঢাকা এর আদেশক্রমে অত্র সম্পত্তির রিসিভার কমিশনার, গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ, গাজীপুর। ’

এ প্রসঙ্গে টঙ্গী পূর্ব থানার ওসি আশরাফুল ইসলাম কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘ডাম্পিংয়ের জন্য ইজতেমা মাঠে পুলিশের এক-দেড় শ গাড়ি রাখা আছে। ইজতেমা শুরু হলে গাড়ির জন্য মুসল্লিদের যাতায়াতে সমস্যা হবে। তাই ডেসটিনির জমিতে গাড়িগুলো সাময়িকভাবে রাখা হবে। ইজতেমা শেষে গাড়ি আবার ইজতেমা মাঠে ফিরিয়ে নেওয়া হবে। ’

জমি ভরাটের টাকার উত্স সম্পর্কে জানতে চাইলে ওসি বলেন, ‘যারা ভরাট করছে তারাই টাকা দিচ্ছে। ’ রক্ষণাবেক্ষণের জমি ভরাটের সুযোগ রয়েছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘জমি খালি পড়ে আছে। ভরাটে সমস্যা তো দেখছি না। ’

তবে গাজীপুরের পুলিশ কমিশনার মোল্লা নজরুল ইসলাম গতকাল সোমবার মোবাইল ফোনে কালের কণ্ঠকে বলেন, ডেসটিনির জমির রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব পুলিশের। কোনোভাবেই জমি ভরাট করার সুযোগ নেই। বিষয়টি তিনি খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবেন।সূত্র: কালের কণ্ঠ