‘গরুর দাম বাড়ে, চামড়ার কমে’

নিজস্ব প্রতিবেদক

কোরবানির সপ্তা দুয়েক বাকি। তাই গরু ও চামড়া কেনাবেচা নিয়ে আনাগোনা শুরু হয়েছে ক্রেতা ও বিক্রেতাদের মধ্যে। কোরবানির সময় একজন পশু ক্রেতা হয়ে যান চামড়া বিক্রেতা। তাই গরু নিয়ে দর কষাকষির মধ্যে চামড়াও আলোচ্য বিষয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে চামড়া ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, গরুর দামের তুলনায় চামড়া পানির দারে বিক্রি হচ্ছে। বাজারে চামড়ার দাম না থাকায় লোকসান হচ্ছে ব্যবসায়ীদের।
দেখা গেছে, দেশের বাজারে গরু ও মাংসের দাম বাড়ছে প্রতি বছরই। সেই সঙ্গে কমছে চামড়ার দাম। ২০১৭ সালে ঢাকার বাইরে চামড়া বিক্রি হয়েছে ৪০ থেকে ৪৫ টাকা। এ ছাড়া সারা দেশে খাসির চামড়া ২০-২২ টাকা এবং বকরির চামড়া ১৫-১৭ টাকা নির্ধারণ করা হয়। আর গেলো বছর (২০১৮) ঢাকায় প্রতি বর্গফুট লবণযুক্ত গরুর চামড়ার ৪৫ থেকে ৫০ টাকা। ঢাকার বাইরে ৩৫ থেকে ৪০ টাকা। এছাড়া সারা দেশে খাসির চামড়া প্রতি বর্গফুট ছিলো ১৮ থেকে ২০ টাকা। বকরির চামড়া ১৩ থেকে ১৫ টাকা দরে সংগ্রহ করে ব্যবসায়ীরা।
রাজশাহী জেলা চামড়া গ্রুপের সভাপতি আসাদুজ্জামান মাসুদ বলেন, রাজশাহী জেলায় প্রতি ঈদে ৬০ থেকে ৭০ হাজার পশু কোরবানি করা হয়। সেই চামড়াগুলো নাটোরের ব্যবসায়ীদের মাধ্যমে ঢাকার ট্যানারি মালিকদের কাছে বিক্রি করা হয়। ট্যানারি মালিকরা ব্যবসায়ীদের জানিয়েছন, তারা ঋণগ্রস্ত। তাই ব্যাংক নতুন করে ঋণ না পেলে ব্যবসায় আসতে পারবে না তারা।
তিনি বলেন, চামড়া কেনার খরচ বেড়ে গেছে। তাই চামড়া কিনে সুবিধা করা সম্ভব হচ্ছে না ব্যবসায়ীদের। এটি বর্তমান চিত্র। ঈদের মৌসুমে বেশি চামড়ার আমদানি থাকবে। তখন চামড়ার যোগান বাড়ে, তাই চামরা দাম কমে যায়। তবে সরকারি নির্ধারিত দামেও চামড়া বিক্রি করেও লোকসান হয়। এতে করে অল্প টাকায় সন্তষ্ট থাকতে হয় ফকির মিসকিনদের। কিন্তু বিদেশে চামড়ার কদর থাকলেও দেশে কেনো এতো অবহেলা চামড়া নিয়ে। চামড়ার এই রকম দাম থাকলে আগামীতে গরুর ও ছাগলের চামড়া মাটিতে পুঁতে ফেলার আশঙ্কা রয়েছে বলে মনে করেন তিনি।
তিনি আরো বলেন, রাজশাহীতে বর্তমানে ৮০ থেকে ১ লাখ টাকা দামের গরুর চামড়া ঢাকায় ট্যানারি মালিকরা কিনছেন ৪০০ থেকে ৫০০ টাকায়। বকনা গরুর চামড়া ২০০ থেকে ৩০০ টাকা। গড়ে গরুর চামড়া ৩০০ থেকে ৬০০ টাকা দরে কেনা-বেচা হচ্ছে। শুধু চামড়া ছাড়াও সঙ্গে খরচ রয়েছে, শ্রমিক, লবণ ও আড়তদারি।
চামড়া গ্রুপের সভাপতি আসাদুজ্জামান মাসুদ আরো বলেন, মহিষের চামড়াও প্রায় একই দামে বিক্রি হচ্ছে। ছাগল ২০ থেকে ৩০ টাকা। খাসি ও ভেড়ার চামড়া ৩০ থেকে ৪০ টাকা দামে কেনা বেচা হচ্ছে। এছাড়া লবণ, শ্রমিক ও পরিবহণ খরচ মিলে ট্যানারি মালিকদের কাছে চামড়া বিক্রি করে সুবিধা করতে পারছে না ব্যবসায়ীরা। ফলে লোকসানের শঙ্কা থেকেই যায়।
কয়েকজন ব্যবসায়ী জানায়, ঢাকার ট্যানারি মালিকদের কাছে তাদের লাখ লাখ টাকা পড়ে আছে। তারা দিতে পারছে না। ট্যানারি মালিকরা জানাচ্ছে, লোকসানে আছি। ঋণগ্রস্ত অবস্থায় আছি। চামড়ার বাজার চাঙ্গা হলে পাওনা টাকা ফেরত দিবে তারা।
এদিকে আসন্ন কোরবানিতে চামড়ার দাম আগেও মত থাকলেও অর্থের অভাবে অল্প করে চামড়া কিনবে ব্যবসায়ীরা। তাদের দাবি চামড়ার বাজার চাঙ্গা হলে কোরবানির মাঠে থেকে বেশি দামে চামড়া কিনে বেশি দামে বিক্রি করতে পারবে না।
আবদুর রাশিদ নামের এক চামড়া ব্যবসায়ী জানান, চামড়া বাংলাদেশের কাঁচামাল। বছর বছর গরুর দাম বাড়লেও কমছে চামড়ার দাম। পাঁচ থেকে সাত বছর আগে একটা গরুর চামড়া বিক্রি হয়েছে সাড়ে তিন থেকে চার হাজার টাকায়। সেই চামড়া এখন বিক্রি হচ্ছে ২০০ থেকে ৬০০ টাকার মধ্যে। চামড়ার বাজার প্রতিনিয়তই নিম্নমুখি হচ্ছে। তিনিও ট্যানারি মালিকের কাছে কয়েক লাখ টাকা পাবেন চার বছর আগের।
তিনি আরো বলেন, চামড়ার টাকা গরিবের হক। এই দিকে সরকারের গুরুত্ব দেওয়া জরুরি। আর চামড়া শিল্প দেশের অর্থনীতিতে বড় ভূমিকা অতীতে রেখে এসেছে, আগামীতেও রাখবে। চামড়া দামের এই অবস্থা থাকলে চামড়া ব্যবসায়ীরা মুখ ফিরিয়ে নেবে। এছাড়া রাজশাহীর অনেক চামড়া ব্যবসায়ীদের টাকা আটকে আছে ট্যানারি মালিকদের কাছে।

 

স/আ