রাজশাহীতে গরিবদের জমাকৃত বীমার টাকা ফেরত দিচ্ছে না গোল্ডেন লাইফ

নিজস্ব প্রতিবেদক:
মেয়াদ শেষ হওয়ার পরেও রাজশাহীর গরিব শ্রেণির কয়েক শ গ্রাহক গোল্ডেন লাইফ ইন্সুরেন্স লিমিটেড থেকে জীবন বীমার অর্থ ফেরত পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ উটেছে। এ নিয়ে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন আমনত জমাকারী গ্রাহকরা। জমাকৃত আমনাতসহ লাভ ফের পেতে ৩৯ জন গ্রাহক একসঙ্গে লিগ্যাল নোটিশও পাঠিয়েছেন ওই প্রতিষ্ঠানটির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের। কিন্তু এখনো গ্রাহকদের টাকা ফেরতের কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি প্রতিষ্ঠানটি। এরই মধ্যে এই বীমা প্রতিষ্ঠানটি রাজশাহী থেকে তাদের কার্যক্রমও গুটিয়ে নিয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ নিয়ে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন আমনত জমাকারী গ্রাহকরা। তাদের মাঝে দেখা দিয়েছ ক্ষোভ।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, রাজশাহীতে ২০০২ সাল থেকে কার্যক্রম শুরু করে গোল্ডেন লাইফ ইন্সুরেন্স লিমিটেড নামের একটি বেসরকারী জীমন বীমা প্রতিষ্ঠান। এরপর থেকেই প্রতিষ্ঠানটির মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তারা ‘বন্ধু বীমা প্রকল্পের নামে গ্রাহক সংগ্রহ করতে থাকেন। মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের কথা বিশ্বাস রেখে গ্রাহকরা দিনের পর দিন মাসিক হারে বীমার টাকা আমানত হিসেবে জমা করতে থাকেন। এভাবে অন্তত এক হাজার গ্রাহক সংগ্রহ করেন রাজশাহীর কর্মকর্তারা। যাদের অধিকাংশই নিন্মবিত্ত পরিবারের সদস্য। এসব গ্রাহকদের মধ্যে কেউ ভিক্ষুকও রয়েছেন। তারা কেউ মাসে ৫০০ কেউ, কেউ ২০০ কেউ বা ১৫০ টাকা করে জমা করতে থাকেন। এভাবে মাসের পর মাস তাঁদের কষ্টে অর্জিত টাকাগুলোর একটি অংশ ওই বীমা প্রতিষ্ঠানটিতে জমা করতে থাকেন দরিদ্র শ্রেণির গ্রাহকরা। তাদের আশা ছিল ১০-১২ বছর পরে তারা একসঙ্গে তিনগুন লাভসহ কিছু মোটা টাকা পাবেন। কিন্তু সেই লাভ তো দূরের কথা, এখন আসল টাকাও ফেরত পাচ্ছেন না তারা। এরই মধ্যে প্রতিষ্ঠানটি রাজশাহী থেকে তাদের কার্যক্রম গুটিয়ে নেয়। ফলে টকা না পেয়ে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন গ্রাহকরা।

এদিকে ভূক্তভোগী গ্রাহকদের পক্ষে টাকা ফেরত চেয়ে গত ২০১৫ সালের ২৫ নভেম্বর একসঙ্গে ৩৯ জন গ্রাহক তাঁদের টাকা ফেরতের জন্য লিগ্যাল নোটিশ পাঠিয়েছিলেন গোল্ডেন লাইফ ইন্সুরেন্স লিমিটেডের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের। কিন্তু অদ্যবধি টাকা ফেরতের কথা দূরের কথা সেই নোটিশের জবাবও দেননি তাঁরা।

এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে রাজশাহী নগরীর বিনোদপুর এলাকার বাসিন্দা নাইম সরকার নামের এক গ্রাহক বলেন, ‘আমরা দিন আনি দিন খাই। তারপরেও অনেক কষ্টে প্রতি মাসে ৫০০ টাকা করে জমা করতাম ওই প্রতিষ্ঠানে। ২০০২ সাল থেকে শুরু করে ২০১২ সাল পর্যন্ত ১০ বছরে ৫ হাজার ২৭৮ টাকা জমা হয়। ২০১২ সালে মেয়াদ শেষে কিন্তু সেই টাকার তিন গুন লাভসহ ফেরত দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু এখন পর্যন্ত লাভ তো দূরের কথা আসল টাকাও ফেরত পাইনি। টাকা ফেরত দেওয়ার সময় হয়ে যাওয়ার পর একাধিকবার রাজশাহী অফিসে গেছি আমরা, কিন্তু কোনো লাভ হয়নি। তারা ঢাকার কর্মকর্তাদের দোহায় দিত। একসময় রাজশাহীর অফিসটিই বন্ধ করে দিয়ে সবাই পালিয়ে গেছে।’

এতই এলাকার আরেক গ্রাহক বেবি বেগম বলেন, ‘পরের বাড়িতে কাজ করে ১০ বছর ধরে টাকা জমা করেছি। এখন সেই টাকা আর ফেরত পাচ্ছি না। টাকাগুলো পেলে হয়তো সেগুলো দিয়ে নতুন কিছু করতে পারতাম।’

নগরীর বুধপাড়া এলাকার আরেক গ্রাহক পারুল বেগম বলেন, ‘আমাদের টাকা অল্প। আমরা গরিব মানুষ। কিন্তু সেই অল্প টাকায় মাসে মাসে দিতে গিয়ে আমাদের অনেক কষ্ট করতে হয়েছে। তারপরেও জমা করেছি এই ভেবে যে একসঙ্গে কিছু টাকা পাবো। কিন্তু সব কষ্টই পানিতে ভেসে গেছে। টাকাগুলো আর ফেরত পাচ্ছি না। টাকার জন্য কতবার গেছি রাজশাহী অফিসে। কিন্তু তারাও কোনো উত্তর দেয় না। বার বার তাড়িয়ে দেয়। বলে আমরা কিছু করতে পারবো না। ঢাকা তেকে টাকা আসছে না, তাই দিতে পারছি না।’

জানতে চাইলে গোল্ডেন লাইফ ইন্সুরেন্স লিমিডিটের রাজশাহীর ব্যবস্থাপক আক্তার হোসেন বলেন, ‘আমি এ বিষয়ে কিছু বলতে পারবো না। টাকা ফেরতের দায়িত্ব আমার না।’ টাকা পেলে আমি ফেরত দিতে পারবো শুধু। কিন্তু অফিস থেকে না পেলে কোথায় থেকে দিব।’

এদিকে টাকা আত্মসাতের বিষয়ে জানতে চাইলে গোল্ডেন লাইফ ইন্সুরেন্স লিমিটেডের রাজশাহীসহ উত্তরাঞ্চলের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রিয়াজ মোর্শেদ বলেন, আসলে আমাদের ফান্ডের কিছু সঙ্কটের কারণে এই সমস্যা হচ্ছে। তবে এরই মধ্যে কিছু কিছু টাকা অনেকে ফেরতও পেয়েছেন। যারা টাকার জন্য একটু চেষ্টা করছেন, তারা হয়তো ফেরত পাচ্ছেন, যারা বসে আছেন, তারা হয়তো পাচ্ছেন না। তবে সবাই একসময়ে টাকা ফেরত পাবেন। কারো টাকাই বিফলে যাবে না।’

স/আর