গভীর রাতে রাজশাহীর পদ্মার বুকে নির্মাণ হচ্ছে রাস্তা


নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজশাহীর পদ্মা নদী থেকে বালু উত্তোলনের জন্য আবারো নদীর মধ্য দিয়েই রাস্তা নির্মাণ করছেন ওয়ার্ড কাউন্সিলর এক আওয়ামী লীগ নেতা। রাজশাহী সিটি করপোরেশনের ১ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রজব আলী নগরের তালাইমারী এলাকা দিয়ে এই রাস্তা নির্মাণ করছেন। তিনি মঙ্গলবার গভীর রাতে শ্রমিক দিয়ে পদ্মার বুকে রাস্তা নির্মাণের কাজ করান।

এর আগে গত রোববার ও সোমবার গভীর রাতে রজব আলীর শ্রমিকরা রাস্তা নির্মাণের কাজ করে। খবর পেয়ে মঙ্গলবার বিকেলে সেখানে রাজশাহী জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হয়। জেলা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মাহামুদুল হাসানের নেতৃত্বে এ ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা কালে সেখানে রজব আলী বা তার লোকজনকে পাওয়া যায়নি।

রাজশাহী জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, নগরের তালাইমারি কাজলা মৌজা এলাকা দিয়ে বালু উত্তোলন ও পরিবহনের উপর হাইকোট ও জেলা প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। আনোয়ার হোসেন নামে এক বালু ব্যবসায়ী গত বছর রিট করলে হাইকোর্ট নিষেধাজ্ঞা দেয়। এর প্রেক্ষিতে জেলা বালুমহাল ব্যবস্থাপনা কমিটির সভায় তালাইমারি এলাকা দিয়ে বালু উত্তোলন ও পরিবহন না করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

জানা গেছে, রজব আলী এই বছর রাজশাহীর পবা উপজেলার ‘দিয়াড়খিদিরপুর’ ও ‘চরশ্যামপুর’ বালুমহাল ইজারা নিয়েছেন। জেলা প্রশাসনের শর্ত অনুযায়ী তিনি বালু উত্তোলন, মজুদ ও পরিবহনের জন্য শুধুমাত্র চরশ্যামপুর এলাকা ব্যবহার করতে পারবেন। কিন্তু তিনি জেলা প্রশাসনের আদেশ অমান্য করে বালু উত্তোলন করছেন ইজারা নেওয়া বালুমহালের ৬/৭ কিলোমিটার দূরে তালাইমারি কাজলা মৌজা এলাকায়। দুটি ড্রেজিং মেশিন দিয়ে সেখনে বালু তোলে মজুদ করা হচ্ছে। সেই বালু পরিবহনের জন্য পদ্মার বুকে অবৈধভাবে নির্মাণ করা হয়েছে রাস্তা। এ আগে গত নভেম্বরের শেষ সপ্তাহের দিকে সেখানে ড্রেজিং মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলন ও পদ্মার বুকে রাস্তা নির্মাণ কাজ করেন এ নিয়ে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হলে তা সরিয়ে নেয়।

বুধবার দুপুরে সরেজমিনে দেখা যায়, রাজশাহী নগরের তালাইমারী ঘাট থেকে খানিকটা দূরে পদ্মা নদীর চর জেগেছে। ওই চরের পর (দক্ষিণে) নদীর মূল ধারা প্রবাহিত। ওই চরে ড্রেজিং করে বালু মজুদ করা হচ্ছে। সেখান থেকে সরাসরি ট্রাকে করে বালু আনতেই নদী ভরাট করে রাস্তা তৈরি করা হচ্ছে। রাস্তা তৈরি করতে মঙ্গলবার গভীর রাতে নদীর বাঁ তীর থেকে ইট ও কংক্রিটের বর্জ্য ফেলা রাস্তা তৈরীর কাজ করা হয় বলে স্থানীয়রা জানান।

রাজশাহী পরিবেশ আন্দোলন ঐক্য পরিষদের উপদেষ্টা ডা. মাহফুজুর রহমান বলেন, গত বছর একইভাবে নদী ভরাট করে রাস্তা করা হয়েছিল। ওই সময় পরিবেশবাদীরা প্রতিবাদে সোচ্চার হন। এছাড়া স্থানীয় এক ব্যক্তির করা রিটে হাইকোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী জেলা প্রশাসন পদ্মার বুকে রাস্তা নির্মাণ বন্ধ করে দিয়েছিল। একই সঙ্গে ইজারাদারকে রাস্তা অপসারণ করে নিতে বাধ্য করে। হাইকোর্টের সেই আদেশ এখনো বলাবদ রয়েছে। কিন্তু হাইকোর্টের সেই আদেশ অমান্য করে আবারো পদ্মার বুকে ইট ও কংক্রিটের বর্জ্য ফেলে রাস্তা তৈরী করা হচ্ছে।

তিনি বলেন, পদ্মার বুকে ইট ও কংক্রিটের বর্জ্য ফেলে রাস্তা তৈরীর ফলে শহরের তীর ঘেঁষে যে জলাধার আছে সেটি থাকবে না। পুরোটা চর পরে যাবে। এতে শহরের পরিবেশ হুমকির মুখে পড়বে। এছাড়াও বিনোদনের জন্য লোকজন আর পদ্মা পাড়ে যেতে পারবে না। ধুলা-বালিতে ওই এলাকার পরিবেশ বসবাসের অনুপযোগি হয়ে পড়বে।

বালু মহালের ইজারাদার ওয়ার্ড কাউন্সিলর রজব আলী বলেন, হাইকোট থেকে যে কোন স্থান থেকে বালু তোলা ও পরিবহনের আদেশ পেয়েছি। সেই আদেশ বলে তালাইমারি এলাকায় বালু উত্তোলন করে পরিবহনের জন্য এই রাস্তা তৈরি করা হচ্ছে। এখনো কোন অনিয়ম হচ্ছে না বলে দাবি এই জনপ্রতিনিধির।

রাজশাহী জেলা প্রশাসক আব্দুল জলিল বলেন, ‘‘কোনভাবেই পদ্মার বুকে রাস্তা তৈরী করতে দেয়া হবে না। মঙ্গলবার জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে ভ্রাম্যমাণ আদালত পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু সেখানে কাউকে পাওয়া যায়নি। সেখানে যে শ্রমিকরা ছিল তাদের রাস্তা নির্মাণ ও বালু উত্তোলন নিষেধ করা হয়েছে। এর পরও রাস্তা নির্মাণ ও বালু উত্তোলন করা হয় তবে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।’’

ইজারাদারে দাবি করা যে কোন স্থান থেকে বালু উত্তোলন ও পরিবহনে হাইকোর্টের আদেশের বিষয়ে জেলা প্রশাসক বলেন, ‘‘হাইকোর্ট থেকে এ ধরণের কোন আদেশ আমরা পায়নি। হাইকোর্ট থেকে কোন আদেশ হলে রাতের আধারে রাস্তা নির্মাণ করার কথা নয়। তার পরও যদি হাইকোট থেকে কোন আদেশ হয়ে থাকে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।’’

জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, এ বছর রাজশাহীতে সাতটি বালুমহাল ইজারা দেয়া হয়। এর মধ্যে পবা উপজেলায় একটি, গোদাগাড়ীতে দুইটি, চারঘাটে দুইটি ও বাঘায় দুইটি বালুমহাল।

আরো পড়ুন …

রাজশাহীতে পদ্মার বুকে রাস্তা নির্মাণে নিষেধাজ্ঞা