ক্ষুরা রোগের ভ্যাক্সিন আবিষ্কার

সিল্কসিটিনউজ ডেস্ক:

দেশে উদ্ভাবিত হল গবাদিপশুর ক্ষতিকর সংক্রামক ক্ষুরা রোগের ভ্যাক্সিন। এই ভ্যাক্সিন আমদানি করা ভ্যাক্সিনের তুলনায় অনেক বেশি কার্যকর। দামও তুলনামূলক অনেক কম।

ক্ষুরা রোগের কারণে দেশে বছরে প্রায় ১২৫ মিলিয়ন ইউএস ডলারের আর্থিক ক্ষতি হয়ে থাকে। নতুন উদ্ভাবিত ভ্যাক্সিন ব্যবহারের ফলে এ ক্ষতি কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হবে।

মঙ্গলবার বিকালে রাজধানীর সেগুনবাগিচার আধুনিক ভাষা ইন্সটিটিউট মিলনায়তনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানানো হয়। বাংলাদেশে ক্ষুরা রোগের নতুন ট্রাইভ্যালেন্ট টিকা উদ্ভাবন উপলক্ষে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের উচ্চশিক্ষা মানোন্নয়ন প্রকল্প সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে। সংবাদ সম্মেলনে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ।

তিনি বলেন, ক্ষুরা রোগ বাংলাদেশের গবাদিপশুর অন্যতম প্রধান সংক্রামক রোগ। এটি গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়া, শূকরসহ বিভিন্ন প্রাণীকে আক্রমণ করে। ক্ষুরা রোগ দেশব্যাপী বিরাজমান।

এ রোগের ভাইরাসের ৭টি সেরোটাইপের মধ্যে তিনটি সেরোটাইপ ‘ও’ ‘এ’ এবং ‘এশিয়াল’ দেশে সঞ্চারণশীল আছে। টিকা প্রদান এ রোগ নিয়ন্ত্রণের প্রধান উপায়। সাধারণত আমদানি করা এবং দেশে উৎপাদিত টিকা বা ভ্যাক্সিন এক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়ে থাকে।

কিন্তু এসব টিকায় সঞ্চারণশীল ভাইরাস হতে ভিন্ন ভাইরাস ব্যবহার করায় এবং পর্যাপ্ত এন্টিজেন ব্যবহার না করায় অনেকাংশে অকার্যকর। তাই এ সমস্যা সমাধানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুজীব বিজ্ঞানের অধ্যাপক বর্তমানের যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড. মো. আনোয়ার হোসেনের নেতৃত্বে ১৭ সদস্যের একটি গবেষক দল নতুন টিকা আবিষ্কার করেছে।

শিক্ষামন্ত্রী এ ধরনের আবিষ্কারের জন্য গবেষক দলকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এ ধরনের আবিষ্কার অব্যাহত থাকবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

সংবাদ সম্মেলনে গবেষক দলের প্রধান অধ্যাপক ড. মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, বাংলাদেশ এফএও ও ওআইই প্রস্তাবিত প্রোগ্রেসিভ কন্ট্রোল ফর এফএমডি বাস্তবায়ন করছে।

প্রস্তাবনা অনুযায়ী ২০২০ সালের মধ্যে টিকাদানের মাধ্যমে দেশকে চতুর্থ ধাপে অর্থাৎ ক্ষুরা রোগমুক্ত করার কথা। কিন্তু বাংলাদেশ এখনও প্রথম ধাপেই অবস্থান করছে। দেশে ৫৫ দশমিক ১৩ মিলিয়ন গবাদিপশু রয়েছে।

যাদের একটি বড় অংশ এ রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকে। তিনি জানান, ক্ষুরা রোগের ভ্যাক্সিন আবিষ্কারের লক্ষ্যে ২০১২ থেকে ২০১৮ পর্যন্ত দেশব্যাপী এ রোগের টিস্যু নমুনা সংগ্রহ করা হয় এবং পিসিআরের মাধ্যমে ভাইরাস শনাক্ত করা হয়।

গবেষণায় এ রোগের ভাইরাসের ৭টি সেরোটাইপের মধ্যে তিনটি সেরোটাইপ যথা ‘ও’ ‘এ’ এবং ‘এশিয়াল’ এ দেশে সঞ্চারণশীল আছে বলে প্রতীয়মান হয়। যার মধ্যে সেরোটাইপ ‘ও’ ৮০ থেকে ৮৫ ভাগ, ‘এ’ ১০ থেকে ১৫ ভাগ সঞ্চারণশীল রয়েছে।

এ তিনটি সেরোটাইপ বিশ্লেষণের মাধ্যমে ভাইরাস স্ট্রেইনাগুলোকে ভ্যাক্সিন ক্যান্ডিডেট হিসেবে নির্বাচন করা হয় এবং এদের জীবনরহস্য উন্মোচন করে আমদানি করা ভ্যাক্সিনের সঙ্গে পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়।

তাই দেশীয় গবাদিপশু সুরক্ষায় দেশীয় সেরোটাইপ অনুসারে নতুন টিকা উদ্ভাবন করা হয়েছে। গিনিপিগে উদ্ভাবিত টিকা পরীক্ষা করে দেখা গেছে আমদানি করা টিকার তুলনায় এটি অধিক কার্যকর।

সংবাদ সম্মেলনে সিলেট শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক ড. জাফর ইকবাল বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় কখনই বিশ্ববিদ্যালয় হয় না, যদি না জ্ঞান সৃষ্টি করতে পারে। এতদিন আমাদের দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো জ্ঞান বিতরণ করেছে। এই প্রথম আমরা জ্ঞান সৃষ্টির সুযোগ পাচ্ছি। আশা করি এটা অব্যাহত থাকবে।

সংবাদ সম্মেলনে আরও বক্তব্য দেন ইউজিসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবদুল মান্নান, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মো. সোহরাব হোসেন, ইউজিসির সদস্য ড. আক্তার হোসেন, ড. ইউসুফ আলী মোল্লা প্রমুখ।