ক্ষুধা মেটাবে ‘নকল কলা’র গাছ

পূর্ব আফ্রিকার দেশ ইথিওপিয়ার মানুষের অন্যতম প্রধান খাবার এনসেট। চলতি নাম নকল কলা! আমাদের যেমন, ভাত। গরিবগুরবো খাবার হিসেবে এতদিন তেমন নজরে না পড়লেও বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের মুখে এই হেলাফেলার ‘ফসল’ই হয়ে উঠতে পারে এক ‘সুপারফুড’। বাঁচিয়ে দিতে পারে লাখো মানুষের প্রাণ।

একটি নতুন সমীক্ষা বলছে, ক্রমশ উষ্ণ হয়ে ওঠা বিশ্বে কলার মতো এই গাছের ১০ কোটির বেশি মানুষকে খাওয়ানোর সম্ভাবনা রয়েছে। উদ্ভিদটি ইথিওপিয়ার বাইরে প্রায় অজানা। দেশটিতে এটি পরিজ এবং রুটি তৈরিতে ব্যবহৃত হয়।

গবেষণায় দেখা গেছে, আফ্রিকাতে আরো অনেক বড় পরিসরে ফসলটি উৎপাদন করা যেতে পারে। একটা বড় ‍সুবিধা হচ্ছে, এনসেট গাছ খরার মধ্যে জন্মাতে পারে। এটি ৩০ ফুট পর্যন্ত দীর্ঘ হয়।

‘এটি এমন এক ফসল যা খাদ্য নিরাপত্তা আর টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে,’ বলেছেন ইথিওপিয়ার হাওয়াসা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ডক্টর ওয়েন্ডাওয়েক আবেবে।

এনসেট বা ‘নকল কলা’ সত্যিকারের কলারই ‘ঘনিষ্ঠ স্বজন’। এ কলা খাওয়া যায় না। খাওয়া হয় গাছের অন্য অংশ। তবে ইথিওপিয়ার একটিমাত্র অংশেই কেবল তা খাওয়া হয়।

এনসেট গাছের শ্বেতসারে ভরা কান্ড এবং শিকড় গঁজিয়ে তা দিয়ে পরিজ ও রুটি তৈরি করা হয়। ইথিওপিয়ার অন্যতম প্রধান খাদ্য এনসেট। দেশটির দুই কোটির মতো মানুষ খাদ্যের জন্য এর ওপর নির্ভরশীল। কিন্তু এ দেশের বাইরে আর কোথাও এর চাষ হয় না। অথচ বুনো জাতের এনসেট আফ্রিকার অনেক জায়গায়ই জন্মে। ইথিওপিয়ার ছয় হাজার কিলোমিটার দক্ষিণে সেই দক্ষিণ আফ্রিকা পর্যন্ত হয় তা । এ থেকে ধারণা করা হয়, গাছটি অনেক বড় এলাকাজুড়ে চাষ করা সম্ভব।

কৃষি জরিপ এবং মডেলিং ব্যবহার করে বিজ্ঞানীরা আগামী চার দশকে আফ্রিকায় এনসেট চাষের সম্ভাব্য এলাকার পূর্বাভাস দিয়েছেন। তারা দেখেছেন, ফসলটি ১০ কোটির বেশি মানুষের খাদ্যের সংস্থান করতে পারে। এর মাধ্যমে ইথিওপিয়া ছাড়াও কেনিয়া, উগান্ডা এবং রুয়ান্ডাসহ আফ্রিকার অন্যান্য দেশে খাদ্য নিরাপত্তা বাড়ানো সম্ভব।

লন্ডনের রয়্যাল বোটানিক গার্ডেনের (কিউ গার্ডেন নামেও পরিচিত)  গবেষক ড. জেমস বোরেলও বলেছেন, অন্য ফসল হয় না এমন সময়ে বাফার শস্য হিসাবে এনসেট চাষ করা খাদ্য নিরাপত্তা বাড়াতে সাহায্য করতে পারে।

ড.বোরেল বলেন, ‘এনসেটে কিছু বিশেষ বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা একে ফসল হিসাবে একেবারেই অনন্য করে তুলেছে। এটি যে কোনো সময় রোপণ করা যায় এবং যে কোনো সময় ফসল সংগ্রহ করা যায়। এছাড়া এ গাছ বহুবর্ষজীবী। এজন্যই একে বলা হয় ক্ষুধাজয়ী গাছ। ’

বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তন আফ্রিকা এবং তার বাইরেও প্রধান খাদ্যশস্যের ফলন এবং বিতরণকে মারাত্মকভাবে প্রভাবিত করবে বলে পূর্বাভাস দিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। কয়েকটি প্রধান ফসলের ওপর আমাদের নির্ভরতার কারণে সারা বিশ্বের বিশাল জনগোষ্ঠীকে খাওয়ানোর জন্য নতুন ফসল খোঁজার তাগিদ বাড়ছে। আমরা যত ক্যালরি খাই তার প্রায় অর্ধেকই আসে ধান, গম এবং ভুট্টা এই মাত্র তিনটি প্রজাতির শস্য থেকে ।

ড. বোরেল বলেন, ‘বিশ্বব্যাপী মানবজাতি একটি প্রজাতি হিসেবে খাদ্যের জন্য যেসব উদ্ভিদ ব্যবহার করে তাতে বৈচিত্র্য আনতে হবে। কারণ, এই মুহূর্তে আমাদের সমস্ত ডিমই রয়েছে খুব ছোট একটি ঝুড়িতে। ’

প্রসঙ্গত, এ সংক্রান্ত গবেষণাটি প্রকাশিত হয়েছে এনভায়রনমেন্টাল রিসার্চ লেটার্স-এ ।

 

সূত্রঃ কালের কণ্ঠ