ক্ষমা চাইলেন সিইসি, দুষলেন গণমাধ্যমকে

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্কঃ

নির্বাচনে কেউ তলোয়ার নিয়ে দাঁড়ালে তা প্রতিরোধ করতে রাইফেল নিয়ে দাঁড়াতে হবে—এমন বক্তব্য দেওয়ায় এবার ক্ষমা চাইলেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল। তিনি বলেন, ‘আমরা কখনো কখনো ভুল করে ফেলি। এ জন্য আমি অনুতপ্ত। ’ একই সঙ্গে তিনি দুষলেন সংবাদমাধ্যমকে।

সংলাপের আলোচনা সাংবাদিকরা আগামী দিনে শুনতে পারবেন কি না, সে বিষয়েও চিন্তা-ভাবনা করবেন বলে জানান তিনি।গতকাল মঙ্গলবার নির্বাচন ভবনে ইসলামী ঐক্যজোটের সঙ্গে সংলাপে  সিইসি বলেন, ‘আমাদের কিছু শক্তি থাকবে, সেগুলো আমরা নির্বাচনে প্রয়োগ করব। কিন্তু প্রতিটি কেন্দ্রে তো আমরা যেতে পারব না। কেন্দ্রে আপনাদের অবস্থান নিতে হবে। কেন্দ্রে শক্তিশালী পার্টির পাশাপাশি দুর্বল পার্টিকেও থাকতে হবে। শক্তিশালী পার্টির একজন, দুর্বল পার্টির তিনজন যদি থাকে, তাহলে সম্ভাব্য যে সহিংসতা সেটা অনেকটা প্রতিরোধ করা সম্ভব; আপনারা যেটা বারবার বলছেন—অর্থশক্তি, পেশিশক্তি, এসবের সঙ্গে অস্ত্রশক্তি। ’

সিইসি বলেন, “পরশু দিন যা বলেছি তা নিয়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়েছে। সেটা হলো, কেউ তলোয়ার নিয়ে এলে বন্দুক নিয়ে আসবেন। এখন আপনাকে বুঝতে হবে যে একজন প্রধান নির্বাচন কমিশনার এই কথাটা কখনো ‘মিন’ করে বলতে পারেন না। ”

কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, ‘আমি হয়তো অল্প শিক্ষিত, তবে অল্প শিক্ষিত মানুষও এ ধরনের কথা বলতে পারেন না। ববি হাজ্জাজের কথার পিঠে হেসে বললাম, বন্দুক নিয়ে দাঁড়াবেন। এটা হচ্ছে কথার পিঠে কথা। এটা কখনোই সিইসি মিন করতে পারেন না। যদি মিন করতে পারতাম তবে আমি প্রতিনিয়ত বলতাম, আপনারা অস্ত্র সংগ্রহ করুন। আপনারা নিজেদের শক্তিশালী করুন। আমরা অনেক সময় হিউমার বা কৌতুক করে ফেলি। ’

সিইসি বলেন, ‘আমরা মিডিয়ার স্বাধীনতায় বিশ্বাস করি। যতগুলো আলোচনা করেছি, আমরা কোনো রাখঢাক করিনি। আমাদের কথা ও ছবি বাইরে স্ক্রিন দেওয়া আছে, সেখানে যায়। এখন আমাদের সাংবাদিকরা কেন এটা করলেন? বুঝে নাকি না বুঝে? আমার শ্রদ্ধা তাঁদের প্রতি এখনো আছে। কিন্তু এটা করে আমার মর্যাদাটা একেবারেই ক্ষুণ্ন করে দেওয়া হয়েছে। ’

সিইসি বলেন, ‘আপনারা বিষয়টি বিশ্বাস করছেন। আমার বাবা বেঁচে থাকলেও বিশ্বাস করতেন ও বলতেন যে আমার ছেলে এমন বাজে পরামর্শ দিল কেন? আমার মা-ও বলতেন, বাবা এত খারাপ পরামর্শ দিলে কেন? আমি এ জন্য বলব, কখনো কখনো আমরা ভুল করে থাকি, এ জন্য আমি অনুতপ্ত। আমি হিউমার করতে গিয়েছিলাম। কিন্তু এটাকে যদি ওইভাবে প্রচার না করে বস্তুনিষ্ঠভাবে বলা হতো, হিউমার করেছেন…। কারণ এটা তো আমার ভাইও বিশ্বাস করেছেন। কিন্তু আমি এটা মিন করিনি। এ জন্য আমাকে ক্ষমা করবেন। ’

তিনি আরো বলেন, ‘আমরা নিরপেক্ষ নির্বাচন চাই। আমরা সৎ। আমার সহকর্মীরা আছেন। সবাই কঠোর অবস্থানে আছেন। সবাই সৎ এবং স্বচ্ছ নির্বাচনের জন্য দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। আমরা সর্বাত্মভাবে সে চেষ্টা করব। ’

দলগুলোর উদ্দেশে সিইসি বলেন, ‘আপনারা নির্বাচন করবেন। সিইসি হিসেবে অনুরোধ করব, আপনারাও আন্তর্দলীয় সংলাপ করেন, মিটিং করেন। কিছু কিছু প্রশ্নে মোটাদাগে ঐকমত্যে পৌঁছার চেষ্টার করেন। অর্থশক্তি, পেশিশক্তির যে কথা আসছে, সমঝোতা না থাকলে সেটা চট করে সমাধান করা ইসির একার পক্ষে কষ্টসাধ্য হতে পারে। আমাদের দায়িত্ব হচ্ছে নির্বাচন অনুষ্ঠান করা। আইন অনুসরণ করতে আমরা বাধ্য। সরকারের সীমা কতটুকু হবে, সেগুলো নিয়ে সরকারের কাছে উপস্থাপন করুন। আমি দ্বিমত-একমত পোষণ করছি না। আমরা চাই সুন্দর নির্বাচন। সব দেশেই নির্বাচনকালীন সরকার রুটিন ওয়ার্ক করে। বর্তমান সরকারে যাঁরা আছেন, তাঁরা রুটিন ওয়ার্ক করতে পারেন। উনাদের আমরা বাধ্য করতে পারব না। ’

গতকালের সংলাপে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি, ইসলামী ঐক্যজোট, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, বাংলাদেশের সাম্যবাদী দল (এমএল)—এ চারটি দলকে। এর মধ্যে কল্যাণ পার্টি নির্বাচন কমিশনের আমন্ত্রণে সাড়া দেয়নি।

সংলাপে ইসলামী ঐক্যজোট নির্বাচনের সময় স্পর্শকাতর এলাকায় সেনা মোতায়েন এবং ইভিএম সম্পর্কে জনসচেতনতা বাড়ানোর প্রস্তাব দেয়। খেলাফত মজলিস নির্বাচনের সময় সব নির্বাচনী এলাকায় সেনা মোতায়েনের এবং ইভিএম ব্যবহার না করার প্রস্তাব রাখে। এ ছাড়া মামুনুল হকের মুক্তির দাবি জানায় দলটি। আর সাম্যবাদী দল বর্তমান সরকারের অধীনেই নির্বাচন এবং ইভিএম ব্যবহার করার প্রস্তাব রাখে।

সাংবাদিকদের জন্য দরজা বন্ধ করার ইঙ্গিত

খেলাফত মজলিসের সঙ্গে সংলাপে সিইসি বলেন, ‘আমরা অবাধ সুযোগ মিডিয়াকে দিয়েছি। আমি আগে মিনিস্ট্রিতে সচিব ছিলাম। মিটিং কখনো ওপেন করা হয় না। মিটিং অলওয়েজ কনফিডেনশিয়াল। এর পরে একজন মুখপাত্র মিটিংয়ে আলোচনার বিষয়টি সাংবাদিকদের অবহিত করেন। কিন্তু এখানে ( ইসিতে) কোনো একটা সময় এটা চালু হয়েছে। আমরা এটা বন্ধ করিনি। এখানে সবাই শুনতে পারেন। এ স্বচ্ছতাটা আমরা ধরে রাখতে চেয়েছিলাম। কিন্তু যেভাবে আমাদের বক্তব্য বিকৃত হচ্ছে এবং মান-সম্মান যেভাবে বিকিয়ে যাচ্ছে, এটা নিয়েও আমাদের এখন চিন্তাভাবনা করতে হবে যে আমরা কতটা ওপেন হব। আর সবার প্রতি আমাদের অনুরোধ থাকবে যে আমাদের মিডিয়ার ভাইয়েরা যাঁরা আছেন, তাঁরা যেন আমাদের বক্তব্যটাকে সঠিকভাবে উপস্থাপন করেন। ’

এনআইডিতে ভুল

সাম্যবাদী দলের সঙ্গে সংলাপে দলটির সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়ার অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, ‘আমার মনে হয়, জাতীয় পরিচয়পত্রে (এনআইডি) কোটি কোটি ভুল। আ-কার, ই-কার, ঈ-কার নিয়ে অনেকে বিপদে পড়ছে। এয়ারপোর্টে বিপদে পড়ছে। তথ্য মিলছে না। ’ সিইসি এ প্রসঙ্গে জানান, তিনি নিজে এবং তাঁর বন্ধুরাও এর ভুক্তভোগী। এনআইডিতে অনেকের মায়ের নাম ও বাবার নাম ভুল আছে। অনেকে তা সংশোধন করতে চাচ্ছেন। আবার অনেকে হঠাৎ করেই নাম থেকে ‘মোহাম্মদ’ বাদ দিতে চাচ্ছেন। ‘মোহাম্মদ’ ছোট না বড় হবে, সে বিষয়েও সংশোধনের দাবি আসছে।

এ সময় এনআইডি মহাপরিচালক এ কে এম হুমায়ুন কবীর বলেন, ‘অনেক ইচ্ছাকৃত ভুল আছে। আবার অনিচ্ছাকৃত ভুল হয়েছে। সবার শিক্ষা সনদ থাকলে সুবিধা হতো। আমরা মানুষকে সন্তুষ্ট করার চেষ্টা করছি। আমাদের ভুল হচ্ছে। তবে কমিশনের নির্দেশ আমরা প্রতিপালন করার চেষ্টা করছি। ’

আজ যে দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ

নির্বাচন কমিশনের সংলাপে আজ বুধবার আমন্ত্রিত দলগুলো হচ্ছে গণতন্ত্রী পার্টি, বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি ও বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)। এর মধ্যে বিএনপি আগেই জানিয়ে রেখেছে যে তারা এ সংলাপে অংশ নেবে না।