কৌশলগত অংশীদারিত্বে উন্নীত ঢাকা-টোকিও সম্পর্ক

সিল্কসিটি নিউজ ডেস্ক :
বুধবার (২৬ এপ্রিল) স্থানীয় সময় সন্ধ্যায় টোকিও-তে জাপানের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে দেশটির প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদার সঙ্গে বৈঠক শেষে যৌথ সংবাদ বিবৃতিতে শেখ হাসিনা এ কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পর একই স্থানে জাপানের প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদা বিবৃতি দেন।

শীর্ষ পর্যায়ের প্রতিনিধিদের নিয়ে দুই প্রধানমন্ত্রী দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের পর দুই দেশের মধ্যে ৮টি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সই হয়।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, প্রধানমন্ত্রী কিশিদা এবং আমি আমাদের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের সব কিছু নিয়ে আলোচনা করেছি। আমরা আনন্দিত যে বাংলাদেশ ও জাপান সফল ভাবে বিদ্যমান সম্পর্ককে ‘ব্যাপক অংশীদারিত্ব’ থেকে ‘কৌশলগত অংশীদারিত্বে’ উন্নীত করেছে।

শেখ হাসিনা আশা প্রকাশ করেন বলেন, আমি নিশ্চিত আমাদের দুই দেশের জনগণ এবং আমাদের সরকারের মধ্যেকার বিদ্যমান চমৎকার বোঝাপড়া, বন্ধুত্ব এবং সহযোগিতা আগামী বছরগুলোতে আরও শক্তিশালী হবে।

দুই দেশের মধ্যেকার সহযোগিতা বাড়াতে চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সইয়ের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কৃষি, শুল্ক বিষয়ক, প্রতিরক্ষা, আইসিটি এবং সাইবার-নিরাপত্তা, শিল্প আপগ্রেডিং, বুদ্ধিভিত্তিক সম্পদ, জাহাজ পুনর্ব্যবহার এবং মেট্রোরেল বিষয়ে আমরা দুই দেশ ৮টি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সই করেছি। এসব চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক আমাদের ভবিষ্যত সহযোগিতাকে আরও প্রাতিষ্ঠানিক করবে।

ঢাকা-নারিতা সরাসরি ফ্লাইট চালু প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, আনন্দের সঙ্গে জানাচ্ছি এই বছরের মধ্যে ঢাকা-নারিতা সরাসরি ফ্লাইট চালু হতে যাচ্ছে।

বৈঠকে বঙ্গোপসাগর এবং পার্শ্ববর্তী অঞ্চলগুলিকে সংযুক্ত করার জন্য বাংলাদেশ দক্ষিণাঞ্চলে উন্নয়নের জন্য মহেশখালী-মাতারবাড়ি ইন্ট্রিগ্রেটেড ইনফ্রাসট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট উদ্যোগ এবং বিগ-বি উদ্যোগ নিয়েও আলোচনা করার কথাও জানান বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী।

জাপান সরকারকে ধন্যবাদ জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশের বৃহত্তম উন্নয়ন অংশীদার হওয়ায় আমরা জাপান সরকারকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।

রোহিঙ্গা ইস্যুতে জাপানের সহযোগিতা চাওয়ার কথা জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, আমরা রোহিঙ্গা সংকট নিয়েও আলোচনা করেছি। রোহিঙ্গাদের দীর্ঘমেয়াদী উপস্থিতি বাংলাদেশের স্থানীয় জনগোষ্ঠীর জীবন ও জীবিকাকে মারাত্মকভাবে প্রভাবিত করছে। আমরা জাপানকে অনুরোধ করেছি মিয়ানমারের সঙ্গে যোগাযোগের মাধ্যমে এ সংকটের একটি টেকসই সমাধান খুঁজতে।

জাপানের আতিথেয়তার প্রশংসা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী কিশিদা এবং জাপান সরকার আমাকে এবং আমার প্রতিনিধিদলকে যে আতিথেয়তা দেখিয়েছে তাতে আমরা গভীরভাবে মুগ্ধ।

শেখ হাসিনা বলেন, সুন্দর দেশ জাপানে আসাটা আনন্দের। জাপান সব সময় আমাদের হৃদয়ে। দুই দেশের কুটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার ৫০ বছর পূর্তি সম্পন্ন করার পর সরকারি সফরে টোকিও-তে আসতে পেরে আমি বিশেষভাবে আনন্দিত।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাপান বাংলাদেশের মানুষের হৃদয়ে বিশেষ জায়গা করে নিয়েছে। স্বাধীনতার পর প্রথম দিকে ১৯৭২ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি যে কয়েকটি দেশ বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিয়েছে জাপান তাদের মধ্যে অন্যতম। ১৯৭৩ সালের অক্টোবরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঐতিহাসিক সফরের মধ্যে দিয়ে দুই দেশের দীর্ঘমেয়াদী সম্পর্কের ভিত্তি স্থাপন করেন।

এর আগে শেখ হাসিনা জাপানের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পৌঁছালে এখানে তাকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানান জাপানের প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদা। এ সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আনুষ্ঠানিকভাবে লাল গালিচা সংবর্ধনা ও সেরিমোনিয়াল গার্ড অব অনার প্রদান করা হয়।

জাপানের প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশাদার সঙ্গে বৈঠকের আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাজপ্রাসাদে (ইমপেরিয়াল প্যালেস) জাপানের সম্রাট নারুহিতোর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।

জাপানের প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদার আমন্ত্রণে মঙ্গলবার (২৫ এপ্রিল) দ্বিপক্ষীয় সফরে টোকিও আসেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এ যাত্রায় তিন দেশ সফর করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জাপান সফর শেষে শুক্রবার (২৮ এপ্রিল) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা টোকিও থেকে যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন যাবেন। যুক্তরাষ্ট্র সফর শেষে বৃহস্পতিবার (০৪ মে) যুক্তরাজ্যের লন্ডন যাবেন প্রধানমন্ত্রী।
তিন দেশ সফর শেষে মঙ্গলবার (০৯ মে) সকালে দেশে ফিরবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।