কোয়রেন্টিনের নামে সপ্তাহ ধরে ধর্মঘটে রামেক হাসপাতালের ইন্টার্নরা, ব্যাহত চিকিৎসা

নিজস্ব প্রতিবেদক:

প্রায় এক সপ্তাহ ধরে স্বেচ্ছায় কোয়ারেন্টিনের নামে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ রামেক হাসপাতালের ইন্টার্নরা চিকিৎসকরা। এতে মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে চিকিৎসা সেবা। হাসপাতালটিতে মূলত এখন সিনিয়র চিকিৎসক নির্ভর হয়ে পড়েছে। তার পরেও অনেকেই করোনা আক্রান্ত হয়ে পড়ায় ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে রয়েছে চরম চিকিৎসক সঙ্কট। এরই মধ্যে স্বেচ্ছায় কোয়ারেন্টিনের নামে ইন্টার্ন চিকিৎসকরা গত রবিবার থেকে কাজে যোগদান না করায় চিকিৎসা ব্যবস্থা একেবারে ভেঙে পড়েছে রামেকে। এমনিতেই করোনা দুর্যোগে চিকিৎসকদের যেমনস হিমশিম খেতে হচ্ছে রোগীর সেবা দিতে গিয়ে, তারপর রয়েছে নানা অব্যবস্থাপনার অভিযোগ। আবার চিকিৎসা না পাওয়ার অভিযোগের তো শেষ নেই। এই অবস্থায় ইন্টার্নদের আট দফা দাবি বাস্তবায়নের জন্য কোয়ারেন্টিনের নামে ধর্মঘট আরও বেগিতিক করে তুলেছে চিকিৎসা ব্যবস্থার।

রামেক হাসপাতালের সিনিয়র চিকিৎসকরা দ্রুত ইন্টার্নদের সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি করে তাদের কাজে ফেরানোর জন্য হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। পাশাপাশি ইন্টার্নদের মনোভাব পরিবর্তন করে কাজে যোগদানের আহ্বান জানিয়েছেন খোদ চিকিৎসকরায়।

রামেক ইন্টার্ন চিকিৎসক পরিষদের সভাপতি মিজানুর রহমান জানান, তিনিসহ বেশ কয়েকজন ইন্টার্ন চিকিৎসক করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। এ কারণে অন্য ইন্টার্নরা কোয়ারিন্টিনে আছেন। তবে তারা চিকিৎসাসেবা দিতে গিয়ে নানাভাবে অবহেলার শিকার হচ্ছেন। এ জন্য তারা কর্তৃপক্ষের কাছে আট দফা দাবি জানিয়েছেন। তাদের দাবিগুলো দ্রুত বাস্তবায়ন করারও আহ্বান জানিয়েছেন তারা।

তাদের আট দফা দাবির মধ্যে প্রথম দাবি—সংক্রমিত হওয়ার পর প্রত্যেক ইন্টার্ন চিকিৎসকের জন্য ন্যূনতম সুযোগ–সুবিধা, যেমন: ছেলে ও মেয়ে চিকিৎসকের জন্য আলাদা সুনির্দিষ্ট ও মানসম্মত থাকার জায়গা, মানসম্পন্ন খাবার, পর্যাপ্ত চিকিৎসা ব্যবস্থা, প্রয়োজনবোধে হাই ফ্লো অক্সিজেন থেরাপি (এইচএফওটি) ও আইসিইউ সাপোর্টের নিশ্চয়তা প্রদান করতে হবে।

দ্বিতীয় দাবি—কমিউনিটি ট্রান্সমিশনের কারণে বর্তমানে সব রোগীকেই কোভিড-১৯ ‘পজিটিভ’ ধরে কাজ করতে হবে। প্রায় সব ইন্টার্ন চিকিৎসককে ছয়টি করে এন-৯৫ মাস্ক দুই মাসের জন্য রোটেশন করে পরার জন্য দিতে হবে। সেই সঙ্গে নিয়মিত ডাবল গ্লাভস-পিপিই, ফেসশিল্ড, হেক্সিসল (স্যানিটাইজার) প্রদান করতে হবে।
তৃতীয়ত, এই ক্রান্তিকালে মূল ভাতার সঙ্গে ঝুঁকিভাতা হিসেবে মূল ভাতার ন্যূনতম ৫০ শতাংশ প্রতি মাসে প্রদান করতে হবে।  চতুর্থ দাবি—ইন্টার্ন চিকিৎসকদের সঙ্গে হাসপাতালের মিডলেভেল চিকিৎসকদের প্রতিদিন সশরীরে উপস্থিত থেকে দায়িত্ব পালন করতে হবে। পঞ্চম দাবি—একসঙ্গে সব ইন্টার্ন চিকিৎসককে ব্যবহার না করে যথাযথভাবে দায়িত্ব বিন্যাস করে একটানা ৭ দিন দায়িত্ব পালনের পর ১৪ দিন কোয়ারেন্টিনে থাকার ব্যবস্থা করতে হবে।
ছয় নম্বর দাবি—জরুরি বিভাগ থেকে প্রত্যেক রোগীকে ভালোভাবে স্ক্রিনিংয়ের ব্যবস্থা করতে হবে। সাত নম্বর দাবি—হাসপাতালের অভ্যন্তরে একজন রোগীর সঙ্গে দুজনের বেশি স্বজনের প্রবেশ রোধ করতে হবে। আর ওয়ার্ডের ভেতরে একই সঙ্গে একজনের বেশি স্বজন অবস্থান করতে পারবেন না। আট নম্বর দাবি—প্রত্যেক ওয়ার্ডের জন্য অন্তত একটি ইনফ্রারেড থার্মোমিটার ও ডিজিটাল বিপি মেশিনের ব্যবস্থা করতে হবে।
তবে ইন্টার্নদের দাবিগুলো নিয়ে কর্তৃপক্ষ ভেবে দেখছে বলে জানিয়েছেন রামেক হাসপাতালের উপপরিচালক সাইফুল ফেরদৌস। তিনি বলেন, চিকিৎসকরা অনেকেই করোনা আক্রান্ত হচ্ছেন। ইন্টার্নরাও কাজে আসছেন না। এতে চিকিৎসাসেবা কিছুটা হলেও ব্যাহত হচ্ছে। তবে আমরা সাধ্যমত চেষ্টা করে যাচ্ছি।’
স/আর