কোম্পানির হস্তক্ষেপ মুক্ত তামাক কর আরোপের প্রস্তাব

জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় তামাকের কর ও মূল্য পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানিয়েছে তামাকবিরোধী নেতৃবৃন্দ। তবে এটি তামাক কোম্পানির প্রভাবমুক্ত থাকতে হবে। কারণ তামাক পণ্যে কর ও মূল্য বৃদ্ধি ঠেকাতে প্রতি বাজেটের আগে বিভিন্ন কূটকৌশল অবলম্বন করে কোম্পানিগুলো।

আজ শনিবার ‘তামাক কর ও মূল্য পদক্ষেপ: কোম্পানির ক‚টকৌশল ও আমাদের করণীয়’ শীর্ষক ওয়েবিনারে কর্মশালায় এ দাবি জানায় প্রজ্ঞা। ক্যাম্পেইন ফর টোব্যাকো ফ্রি কিডস’র সহায়তা এ কর্মশালার আয়োজন করা হয়।

প্রজ্ঞা’র পক্ষ থেকে এসব তথ্য গণমাধ্যমসহ বিভিন্ন তামাকবিরোধী সংগঠনের সামনে তুলে ধরেন তামাক নিয়ন্ত্রণ বিষয়ক প্রকল্প প্রধান হাসান শাহরিয়ার।

সেখানে বলা হয়, কোম্পানিগুলো বরাবর মিথ্যায় আশ্রয় নিচ্ছে। এসব মিথ্যের মধ্যে বিশেষ করে বলা হয় বাংলাদেশে সিগারেটে কর অনেক বেশি, কর বাড়ালে চোরাচালান বাড়বে এবং সরকার রাজস্ব হারাবে। এছাড়া বিড়ির ওপর কর বাড়ানো হলে লক্ষ লক্ষ শ্রমিক বেকার হবে, সবচেয়ে বেশি কর দেয় তামাক কোম্পানি, কর বেশি হলে দেশে সরাসরি বৈদেশিক বিনিয়োগ নিরুৎসাহিত হবে। এসব ভুল তথ্য দিয়ে নির্ধারকদের বিভ্রান্ত ও প্রভাবিত করার চেষ্টা করা হয়।

অথচ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ২০২১ সালের তথ্যমতে, সবচেয়ে কমদামে সিগারেট প্রাপ্তির ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অবস্থান ১৬৫টি দেশের মধ্যে ১০৭তম। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে সবচেয়ে কমদামি সিগারেটের মূল্য বাংলাদেশের কমদামি সিগারেটের চেয়ে দ্বিগুণেরও বেশি। মূলত কার্যকর করারোপের অভাবেই বাংলাদেশে সিগারেট সস্তা থেকে যাচ্ছে।

বিশ্ব ব্যাংকের ২০১৯ সালের প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশে সিগারেটের অবৈধ বাণিজ্য ২৭টি দেশের মধ্যে সবচেয়ে কম মাত্র ১.৮ শতাংশ। সুতরাং সিগারেটের রাজস্ব ফাঁকি তথা অবৈধ বাণিজ্য নিয়ে যে প্রচারণা তা নীতিনির্ধারকদের বিভ্রান্ত করার প্রচেষ্টা মাত্র। সিগারেট থেকে যে রাজস্ব আসে তার প্রায় পুরোটাই (৯৬%) ভোক্তা প্রদান করে পরোক্ষ কর হিসেবে। কাজেই সিগারেট কোম্পানিগুলো সবচেয়ে বেশি কর দেয় এটি মোটেও সত্য নয়।

অন্যদিকে, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) এর তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশের বিড়ি শিল্পে  কর্মরত নিয়মিত, অনিয়মিত এবং চুক্তিভিক্তিক মিলিয়ে পূর্ণসময় কাজ করার সমতুল্য শ্রমিক সংখ্যা মাত্র ৪৬ হাজার ৯১৬ জন। বিড়ি শ্রমিকদের সংখ্যা নিয়ে মালিকপক্ষ এধরনের অসত্য তথ্য প্রচার করে নীতিনির্ধারকদের কাছ থেকে সুবিধা আদায়ের চেষ্টা করে থাকে।

প্রজ্ঞা (প্রগতির জন্য জ্ঞান) আয়োজিত এই ওয়েবিনারে আরো জানানো হয়, কর-প্রণেতাদের প্রভাবিত করতে সাংসদদের মাধ্যমে ডিও লেটার প্রদান, বিড়ি শ্রমিকদের ব্যবহার করে দেশব্যাপী তথাকথিত আন্দোলন, বিদেশি ক‚টনীতিকদের দিয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ে চিঠি প্রেরণ এবং বিভিন্ন ব্যবসায়িক সংগঠনের মাধ্যমে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড-এ বৈঠক প্রভৃতি কার্যক্রম করে থাকে তামাক কোম্পানিগুলো। ওয়েবিনারে অংশ নেয়া তামাকবিরোধী সংগঠনসমূহের নেতৃবৃন্দ জানান, তামাক কোম্পানিগুলো নীতিনির্ধারকদের বিভ্রান্ত করতেই কর ও মূল্য বৃদ্ধির বিপক্ষে বিভিন্ন যুক্তি তুলে ধরে।

জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় তামাক কোম্পনির হস্তক্ষেপমুক্ত থেকে বাজেটে তামাকের উপর কর ও মূল্য বৃদ্ধির দাবি জানান তারা।

ওয়েবিনারে আলোচক হিসেবে বক্তব্য রাখেন ক্যাম্পেইন ফর টোব্যাকো ফ্রি কিডস (সিটিএফকে)- বাংলাদেশ এর লিড পলিসি অ্যাডভাইজর মো. মোস্তাফিজুর রহমান, ভাইটাল স্ট্রাটেজিস এর বাংলাদেশ কান্ট্রি অ্যাডভাইজার মো. শফিকুল ইসলাম, ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশ এর ইপিডেমিওলজি এন্ড রিসার্চ বিভাগের অধ্যাপক ডা. সোহেল রেজা চৌধুরী, দি ফাইনান্সিয়াল এক্সপ্রেস পত্রিকার বিশেষ প্রতিনিধি দৌলত আক্তার মালা, ঢাকা আহছানিয়া মিশন এর হেলথ ও ওয়াশ সেক্টরের পরিচালক ইকবাল মাসুদ, প্রজ্ঞা’র নির্বাহী পরিচালক এবিএম জুবায়ের প্রমুখ। এছাড়াও ওয়েবিনারে বিভিন্ন তামাকবিরোধী সংগঠনের প্রতিনিধিবৃন্দ অংশগ্রহণ করেন।

 

সূত্রঃ যুগান্তর