কোন কাজেই আসছে না চাঁপাইনবাবগঞ্জের কোটি টাকার ৩টি কালভার্ট

কামাল হোসেন:
সেতু তৈরি হয়েছে বটে, তবে সেটা ব্যবহারের কোনো উপায় নেই। কারণ কালভার্টের উভয় পাশে নেই কোন সংযোগ সড়ক। যেখানে প্রয়োজন- সেখানে নেই কালভার্ট। যেখানে প্রয়োজন নেই সেখানেই নির্মিত হয়েছে কালভার্ট।

জানা গেছে, চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার মরা নদীর উপর প্রায় ১১ মাস আগে নির্মিত ছোট আকারের তিনটি ছোট সেতু (কালভার্ট) এভাবে রয়েছে সরকারি অর্থ অপচয়ের নমুনার দৃষ্টান্ত। ফলে এগুলো জনগণের চলাচলের জন্য কোনো কাজেই আসছে না।

সদর উপজেলার চরাঞ্চলের চারটি ইউনিয়নের মানুষের দীর্ঘদিনের দাবি- ইসলামপুর ইউনিয়নের হায়াতমোড় খাকচাপাড়া থেকে শাজাহানপুর ইউপি পর্যন্ত একটি সড়ক ও সেতু। যেটি নির্মিত হলে- শাজাহানপুর, চরবাগডাঙা, সুন্দরপুর ও ইসলামপুর ইউনিয়নের মানুষের যাতায়াতের জন্য ৩০ থেকে ৩৫ কিলোমিটার রাস্তা কমে আসবে।

এলাকাবাসীর দাবির প্রেক্ষিতে প্রায় আট কিলোমিটার দীর্ঘ একটি সড়ক এবং ওই রাস্তায় সোয়া তিন কোটি টাকা ব্যয়ে ৪০ মিটার একটি সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেয় স্থানীয় প্রকৌশলী অধিদপ্তর (এলজিইডি)। কিন্তু প্রকল্পটি হাতে নেয়ার পর ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের এক যুগ্ম-সচিব তাঁর বাড়ির সামনে দিয়ে ১ কোটি ২০ লাখ টাকা ব্যয়ে তিনটি কালভার্ট তৈরি করেন। আর গত অর্থবছরে এই কালভার্টগুলো নির্মিত হলেও উভয় পাশে মাটি ভরাট করা হয়নি।

এলাকাবাসীর অভিযোগ, যেখানে দরকার সেখানে সড়ক ও সেতু নির্মাণ না করে ব্যক্তি স্বার্থে সরকারের কোটি টাকা খরচ করে নিমির্ত হয় এসব কালভার্ট।

স্থানীয় এক শিক্ষক বলেন, যেখান দিয়ে কোন মানুষ চলাচল করে না সেখানে নির্মিত হয়েছে সেতুগুলো।
তিনি বলেন, ‘আমি প্রতি সপ্তাহে তিন থেকে চারদিন এই রাস্তা দিয়ে চলাচল করি, কিন্তু যেখানে কালভার্টগুলো তৈরি হয়েছে সেখান দিয়ে কোন দিন যাওয়া হয়নি।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেক এক ব্যক্তি বলেন, ‘যিনি এসব সেতু তৈরি করেছেন, তার নিজের জমির দাম বাড়ানোই তাঁর উদ্দেশ্য। আর তিনি তা করেছেন তার চাচাত ভাইয়ের কথায়। বন্যা পানিসহ অন্যান্য সময়ও কষ্ট করে মূল রাস্তা দিয়ে চলাচল করছি আমরা। কিন্তু ওই রাস্তা দিয়ে কেউ যায় না’।

এ ব্যাপারে চাঁপাইনবাবগঞ্জ এলজিইডি নির্বাহী প্রকৌশলী সিদ্দিকুর রহমান ভূঁইয়া সিল্কসিটি নিউজকে জানান, ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের সমন্বয়হীনতায় এর জন্য দায়ী। এর দায়-দায়িত্বও বহন করতে হবে ওই প্রতিষ্ঠানকে। তবে জনগণের দাবি পূরণে খুব শীঘ্রই এলজিইডির পক্ষ থেকে মূল রাস্তায় একটি সড়ক ও সেতু নির্মাণ করা হবে বলে জানিয়েছেন।

সদর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা প্রকৌশলী মৌদুদ আলম খাঁ বলেছেন, দীর্ঘদিন ধরে এলজিইডি মূল সড়কে সেতু নির্মাণ না করায় এসব কালভার্ট নির্মাণ করা হয়েছে। তার দাবি- কোনো বিশেষ ব্যক্তির স্বার্থে নয়, জনগণের চাহিদার প্রেক্ষিতেই নির্মিত হয়েছে এসব সেতু।

যার বিরুদ্ধে অভিযোগ পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের সেই যুগ্মসচিব তাজকেরা খাতুনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে তার বাড়ির সামনে সেতু বানানোর অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি সিল্কসিটি নিউজকে বলেন, ‘আমি কেন ক্ষমতা খাটাব। আমি এলজিইডি অধিদপ্তরকে বলেছিলাম যে, ওই রাস্তা দিয়ে কালভার্ট বা ব্রীজগুলো করা হোক। আর এই রাস্তার মধ্যখানে ব্রীজগুলো কীভাবে হলো আমি তা জানি না।’ আর যে রাস্তায় ব্রীজগুলো তৈরি করা হয়েছে কোন একদিন চালু হবে বলে জানান।
স/শ