কোথাও কোথাও আইস্টাইন ও নিউটনকেও ছাড়িয়ে গেছেন হকিং

ড. অরুণ কুমার বসাক

বিজ্ঞানে স্টিফেন হকিংয়ের অবদান পরিমাপ করার মতো নয়। মহাবিশ্ব কি করে সৃষ্টি হয়েছে তা ‘দি গ্রান্ড ডিজাইন’ বইটিতে স্টিফেন হকিং উল্লেখ করেছেন। মহাবিশ্বে কি ছিল তা আমরা জানি না। আমরা বর্তমান নিয়ে পড়ে রয়েছি। হকিং দেখিয়েছেন কিভাবে এই বিজ্ঞান আসলো? আইনস্টাইন সর্বপ্রথম মহাকর্ষ তরঙ্গ সম্পর্কে ধারণা দেন। কিন্তু এই তরঙ্গটির অস্তিত্ব তিনি প্রমাণ করতে পারেননি। এই তরঙ্গটি প্রথম দেখতে পান স্টিফেন হকিং। আগে মনে করা হতো কৃষ্ণ গহ্বর থেকে কোন কিছুই বিকিরিত হয় না। কিন্তু স্টিফেন হকিং মহাকর্ষ তরঙ্গের সাহায্যে দেখিয়েছেন কৃষ্ণ গহ্বর থেকেও এক ধরনের রশ্মি বিকিরিত হয়। আর হকিং সেই রশ্মির নাম দেন হকিং রেডিয়েশন।

স্টিফেন হকিংয়ের মৃত্যুতে বহু ক্ষতি হয়ে গেলো। তিনি অনেক অবদান রেখেছেন। মানুষ নশ্বর। তিনি এই শারীরিক সমস্যার মধ্যেও যে এতবছর বেঁেচ ছিলেন এটাই আমাদের অনেক পাওনা। তার মাথা সবসময়ই কাজ করতেন। আমরা বহু কিছু পেয়েছি। তিনি বেঁচে থাকলে আমরা হয়তো আরও কিছু পেতাম। তার খুব শখ ছিলো তিনি মহাকাশযানে চড়বেন। কিন্তু ওই পর্যন্ত তিনি বাঁচতে পারলেন না। যদি তিনি চড়তে পারতেন তাহলে ওই অভিজ্ঞতার আলোকে তিনি আমাদের আরও তথ্য উপাত্ত দিতে পারতেন।

স্টিফেন হকিংয়ের বিজ্ঞান সম্পর্কে দেওয়া তথ্যগুলো বিজ্ঞানকে অন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছে। বিশ্ব ব্রক্ষা-ের অনেক আবিস্কারের ব্যাখ্যা তিনি দিয়েছেন। এর পাশাপাশি বিভিন্ন আবিস্কার সম্পর্কে নতুন নতুন তথ্যও দিয়েছেন যা আগের ওই আবিস্কারগুলোয় নতুন মাত্রা যোগ করেছে। পৃথিবীতে প্রাণের সঞ্চার কিভাবে হলো তাও তিনি দেখিয়েছেন। হকিং সূর্যের তাপমাত্রা বৃদ্ধির হার সম্পর্কে বর্ণনা করেছেন। নিউক্লিয় বিক্রিয়ার ফলে পৃথিবীর তাপমাত্রা সময়ের সঙ্গে ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। একসময় তাপমাত্রা এত বাড়বে যে কোন জীবজন্তু বেঁচে থাকতে পারবে না। এতে পৃথিবী একদিন ধ্বংস হয়ে যাবে।

তিনি বারবার এই কথাই বলছেন, এই প্রাণ, সৃষ্টি এবং উপযুক্ত পরিবেশ এই বিশ্ব ব্রহ্মা-ের আরও অনেক গ্রহেই থাকতে পারে। সেগুলো অনুসন্ধান করতে হবে। তিনি জোর দিয়ে বলেছেন, কালক্রমে ওইসব গ্রহের তাপমাত্রা সহনীয় হলে আমরা সেখানে গিয়ে বসবাস শুরু করতে পারি। তবে এর জন্য পরিবেশ দরকার। আর এই পরিবেশ হলেই জীবজন্তু বসবাস করতে পারে।

আমরা জানি যে বিগ ব্যাঙ বিস্ফোরণ থেকেই এই পৃথিবীর সৃষ্টি। এই বিস্ফোরণের ফলে পৃথিবীতে এলোমেলো অবস্থার সৃষ্টি হয়। আর এই এলোমেলো অবস্থা থেকে কিভাবে প্রাণ তৈরি হলো এবং সেই প্রাণ তৈরির মহাপরিকল্পনা তিনি তাঁর ‘দ্য গ্র্যান্ড ডিজাইন’ বইয়ে লিখে গেছেন।

মহাকর্ষ তরঙ্গের অস্তিত্ব প্রমাণ হতে শুরু হওয়ায় এখন স্টিফেনের তত্ত্বগুলো প্রতিষ্ঠা লাভ করা শুরু করেছে। সম্প্রতি কৃষ্ণগহ্বর সংশ্লিষ্ট আবিষ্কারগুলো মহাকর্ষ তরঙ্গের মাধ্যমে দৃশ্যমান হতে শুরু হয়েছে। কৃষ্ণগহ্বর এখন দেখা যাচ্ছে। তাঁর দেওয়া তত্ত্বের ওপর ভিত্তি করে একসময় বিজ্ঞান পৌঁছে যাবে অনন্য উচ্চতায়।

মাত্র ২১ বছর বয়সেই তাঁর অনিশ্চয়তার জীবন শুরু হয়। শত বাধা-বিপত্তির মধ্যেও তিনি বহু বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব দিয়ে গেছেন। এতে করে দুই যুগের দুই মহাবিজ্ঞানী আইনস্টাইন ও নিউটন যে সম্মান অর্জন করেছেন, স্টিফেনও সেই সম্মান অর্জন করেছেন। কোনো কোনো ক্ষেত্রে তিনি তাঁদেরকেও ছাড়িয়ে গেছেন। শুধু নোবেল পুরস্কারে ভূষিত হতে পারেননি। কারণ তার আবিষ্কারগুলো এখনো পরীক্ষণে নিশ্চিত করার অপেক্ষায় ছিল। কিন্তু তার আগেই তিনি মারা গেলেন। বেঁচে থাকলে তিনি অবশ্যই নোবেল পেতেন।

মানুষ নশ্বর। তাঁর বয়স হয়েছিল। শারীরিক সমস্যার মধ্যেও যে তিনি এত বছর বেঁচে ছিলেন এটাই আমাদের অনেক পাওনা। তাঁর মাথা সব সময়ই কাজ করত। আমরা বহু কিছু পেয়েছি। তিনি বেঁচে থাকলে আমরা হয়তো আরো কিছু পেতাম। তাঁর খুব শখ ছিল, তিনি মহাকাশযানে চড়বেন। কিন্তু ওই পর্যন্ত তিনি বাঁচতে পারলেন না। যদি তিনি চড়তে পারতেন, তাহলে ওই অভিজ্ঞতার আলোকে তিনি আমাদের আরো তথ্য-উপাত্ত দিতে পারতেন।

 

অধ্যাপক ইমেরিটাস
ড. অরুণ কুমার বসাক
পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।