কেমন হল শাহরুখের নতুন ছবি ‘যব হ্যারি মেট সেজল’

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক: দর্শক কিন্তু আপনাকে ভালবাসতেন ইমতিয়াজ। কিন্তু একই মশলায় একশোটা ঝোল রেঁধে খাওয়ালে পাবলিক তো তেলেবেগুনে হবেই! সোশ্যাল মিডিয়ায় তো লোকে ছবি দেখতে দেখতেই আপডেট দিয়ে দিচ্ছে— ‘যব প্লট নেভার মেট সিনেমা’, ‘রিংগ কাঁহা হ্যায় না বলে ছবির ট্যাগলাইন হওয়া উচিত ছিল প্লট কাঁহা হ্যায়’ কিংবা ‘ইউরোপ ট্যুর করবেন বলেই এই ছবিটা বানালেন পরিচালক’এর মতো শানানো বাক্যবাণে ছেয়ে গিয়েছে ফেসবুক! ছবিটা যে শরশয্যায় চলে গেল…এবার? আক্কেল কাঁহা হ্যায়? তেল লেনে গয়া হ্যায়?

গপ্পোটা ইমতিয়াজ আলির সিগনেচার। গুজরাতি মেয়ে সেজল (অনুষ্কা)। এলএলবি, কিন্তু পেশাদার নয়। পরিবারের হিরের ব্যবসা, তাদের লিগাল অ্যাডভাইস দেয়…ব্যস ওইটুকুই। পরিবারের সঙ্গে ইউরোপ ট্যুরে গিয়েছে সেজল, সেখানেই তার বিয়ের এনগেজমেন্ট হবে বলে ঠিক। এই (অদৃশ্য) পরিবার অ্যান্ড কোং’এর ট্যুর গাইড হ্যারি (শাহরুখ)। যে কোনও কারণ ছাড়াই দল কে দল ট্যুরিস্টের উপর খাপ্পা! হয়তো রাফ অ্যান্ড টাফ একটা ধরন রাখতে চাওয়া হয়েছিল চরিত্রে। যাই হোক, বাড়ি ফেরার বিমানে উঠতে গিয়ে সেজল দেখে তার এনগেজমেন্টের রিংগ হারিয়ে গিয়েছে।

এবার হ্যারিকে সে পাকড়াও করে গোটা ইউরোপ চষে বেড়ায় আংটি খুঁজবে বলে। তারপর হাতে-হাত, চোখে-চোখ মার্কা যা কিছু হতে পারে আর কী! সেজলের বাড়ির লোকের হিরের ব্যবসা, ফলে ডাব্‌ল ট্রিপের খরচা কোত্থেকে আসছে…এস্টাব্লিশ্‌ড! যেটা আরও বেশি করে এস্টাব্লিশ্‌ড, সেটা হল— ‘যব উই মেট’, ‘তামাশা’, ‘ককটেল’ বানিয়েও ইমতিয়াজ ক্লান্ত হন না! মাঝপথে মেয়েটি নিজের প্রেমিককে ভুলে অন্য একজনকে সোলমেট বলে চিনবে— এই ফর্মুলাটা ইমতিয়াজের নিজের জীবনে ঘটা বোধহয় খুব প্রয়োজন, না হলে উনি আর মুভ অন করতে পারছেন না…!

প্লট শুনে তো বুঝতেই পারছেন, ব্যাপারটা মিয়ানো থিন অ্যারারুট। কিন্তু ইমতিয়াজের ছবিতে সাধারণত একটা ওয়েল রাউন্ডেড ট্রাভেলগ থাকে। এখানে পরিচালক রমণকে গুরুত্ব দেবেন, না ভ্রমণকে— সেটা যে ঠিক কোন রহস্যে গুলিয়ে ফেললেন! ফলে অত ভাল লোকেশন থাকা সত্ত্বেও সিনেমাটোগ্রাফার কে ইউ মোহাননের বেশিরভাগ শট ব্যস্ত শহরের রাস্তায়, কফি শপে কিংবা হোটেলের ঘরে‌র ভিতর! দেখে মনে হবে, এর জন্য ইউরোপ? মুম্বই নিজেও তো লোকেশন হিসেবে মন্দ নয়! তবে ওই…‘গ্র্যান্ডিওস’ না হলে কি আর নিজেকে বলিউড ফিল্মমেকার মনে হয় কারও!

যেখানে প্লটের অসংগতি নিয়ে সিটে-বসে-থাকা দর্শক উসখুস করবেন, সেখানেই প্রীতমের বেধড়ক একেকটা গান বসিয়ে দিয়েছেন পরিচালক। সেগুলোর ভিস্যুয়ালও তেমন চনমনে কিছু নয়। প্রতিটা ফ্রেমে খুব অদ্ভুতভাবে শাহরুখ আর অনুষ্কাকেই রাখা হয়েছে। গৌরী খানের প্রোডাকশন বলে এত? মানা গেল, দু’জন নায়ক-নায়িকা। কিন্তু তা বলে তাঁদের ন্যারেটিভে কোনও ডিপার্চার থাকবে না, ফোকাস শিফ্ট থাকবে না, সাবপ্লট বানানোর দায় থাকবে না— এ কেমন সিনেমা বানানো হে!

শাহরুখের জন্য কিন্তু এটা একটা ডিজাস্টার হল। বহুদিন হল তাঁর কোনও ছবিই চলছে না। তবু তিনি রোমান্টিক অবতার থেকে বেরনোর সাহস পাচ্ছেন না। কিংগ অফ রোম্যান্স হিসেবে তাঁকে বহুবার, নানাভাবে ব্যবহার করে ফেলেছে বলিউড। নিউ এজ প্রেমিক হওয়ার কায়দাটাও তো রপ্ত করতে পারেন! কেন যে নিজেকে একই রোলে দেখতে তাঁর এত ভাল লাগে! অনুষ্কা শর্মার সঙ্গে কেমিস্ট্রিতে অবশ্য ঘাটতি নেই। তা বলে অবশ্য ভাববেন না, সেজলের চরিত্রটা গীত বা বীরার মতো সাবলাইম স্তরীয়।

সেজল নিজেও জানে, সে সাক্ষাৎ উৎপাত! গীত বা বীরাও খানিকটা তা-ই কিন্তু। তবে তাদের ক্ষেত্রে অন্তত গল্পের আবহটা এমন ছিল, যে মনে হবে দু’টো মেয়েই দু’রকমভাবে বড্ড প্রেমযোগ্য। এখানে গল্পের তো হাতে হ্যারিকেন, তাই সেজলকে জোর করে প্রেম ব্যাপারটাকে ইনিশিয়েট করতে হয় হ্যারির সঙ্গে! কখন যে সেজল ‘সেলফিশ’ আর কখন সে ‘সেক্সি হওয়ার জন্য কাতর’— আর কীভাবে যে এতে চরিত্রের ভারসাম্য বজায় রাখা গেল, তা ইমতিয়াজই জানেন! অনুষ্কা শর্মার মতো ট্যালেন্টেড অভিনেত্রীর স্ক্রিনটাইম এভাবে বরবাদ করাটা চোখে লাগে।

চন্দন রায় সান্যালের ভূমিকা দেখলে বিষণ্ণ হয়ে পড়বেন আপনি! তিনি ভাল অভিনেতা, কিন্তু ভিলেন হিসেবে স্টিরিওটিপিক্যাল কৌতুকের খোরাক হয়ে রইলেন কেবল। এবং বাংলাদেশিদের নিয়ে ওরকম স্টিরিওটাইপ কিন্তু রীতিমতো ভালগার! তবু যদি ভিলেনের এন্ট্রি থেকে গল্পের মোড় ঘুরত…! অবশ্য গোটা ছবি দেখার পর মনে হতে পারে, গল্পটাই যদি দেখতে না হতো…! এবেলা