কেনা-কাটায় মুখর রাজশাহীর সিল্কপল্লী

নিজস্ব প্রতিবেদক:

রাজশাহী ঈশ্বরদীর নাহিদ ইসলাম,স্ত্রী শামিমা ও মেয়ে রাইসাকে (১০) নিয়ে রাজশাহীতে এসেছেন সিল্কের কাপড় কিনতে। নিজের পাঞ্জাবি, স্ত্রী শাড়ি আর সন্তানের পোশাক কিনবেন বলে। আরামদায়ক পোশাকের সন্ধানে প্রতিবছরই আসেন সিল্কের নগরে। নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘রাজশাহী সিল্কে সমৃদ্ধ। দেশজুড়ে বেশ সুনাম। আরামদায়ক পোশাক তাই চাহিদাও বেশি। গরমে আরামের কথা ভেবে সিল্ক ভাল।’

শুক্রবার বেলা ১১টার দিকে রাজশাহী নগরীর সিল্কের শো-রুমগুলোতে ক্রেতাদের ভীড় লক্ষ্য করা গেছে। তবে বিক্রেতারা বলছেন, রাজশাহী জেলার বাইরের ক্রেতাও রয়েছে তাদের। চাঁপাইনবাবগঞ্জ, ভোলাহাট, নওগাঁ, জয়পুরহাট, বগুড়া, নাটোর, পাবনা, ঈশ্বরদী, খুলনা, রংপুর, দিনাজপুর থেকে ক্রেতারা রাজশাহীতে আসেন সিল্কের বিভিন্ন পোশাক কিনতে।

রাজশাহীর সিল্ক, কাপড়ের জগতে দেশজুড়ে বেশ কদর রয়েছে। সিল্কে সমৃদ্ধ হওয়ায় রেশম নগরী হিসেবে খ্যাত রাজশাহী। প্রতিটি উৎসবে ‘সিল্কের জুড়ি নেই। ফলে ঈদ এলে সিল্ক কাপড়ের চাহিদা বেড়ে যায় কয়েক গুণ। বিশেষ করে সামর্থ্যবান পরিবার সিল্ক কাপড়ের প্রতি বেশি আগ্রহ। তবে শো-রুমগুলোতে সব বয়সের মানুষের পোশাক পাওয়া যাচ্ছে। তাই ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়ে বেশ খুশি।

ঈদকে সামনে রেখে রাজশাহীতে বেচাকেনা বেড়েছে সিল্ক শাড়ি, থ্রি পিস, পাঞ্জাবি। ক্রেতারা বলছেন, ডিজাইনে নতুনত্ব আর গুণে মানে ভাল হওয়ায় তাদের পছন্দের শীর্ষে সিল্কের পোশাক। ক্রেতাদের পছন্দের বিষয়টি মাথায় রেখে এবার শাড়িতে এসেছে নানা বৈচিত্র্য। ঈদে বর্ণিল ও আনন্দময় উৎসবে নারী পছন্দের শীর্ষে সিল্কের শাড়ি। তাই শাড়ি কিনতে ভিড় করছেন সিল্কের শো-রুমগুলোতে।

সিল্কের শো-রুমগুলো সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ক্রেতাদের আকৃষ্ট করতে নতুনত্বের পাশাপাশি মসলিন, বলাকা, তসর, ধুপিয়ান, সফট ও জয়শ্রী সিল্কের ওপর আকর্ষণীয় কারুকাজ ও হরেক রংয়ের মিশ্রণ রেখেন তারা। ক্রেতারাও সিল্ক কাপড়ের নানা রঙ ও ডিজাইনের বাহারি কাপড় দেখে মুগ্ধ হচ্ছে। রাজশাহীর সবচেয়ে বৃহৎ সিল্ক শোরুম সপুরা সিল্ক।

কারখানা ও শোরুমের ব্যবস্থাপক সাইদুর রহমান জানান, তাদের কারখানায় সিল্কের সবধরনের কাপড় তৈরি করা হয়। নারীদের শাড়ি কাপড়, থ্রিপিস, সালোয়ার। এছাড়া পুরুষদের পাঞ্জাবিও তৈরি করা হয়। সাইদুর রহমান জানান, ঈদে বড় আকর্ষণ কাটোয়ার ডিজাইনের শাড়ি। আর আছে র-সিল্কের ওপর হাতের কারুকাজ। বিভিন্ন ডিজাইনের এই শাড়িগুলোর দাম রাখা হয়েছে সাড়ে তিন হাজার ২০০ টাকা থেকে ১২ হাজার ৫০০ টাকা। মসলিনের ওপর কাজ করা ডিজাইনের শাড়িও এবার নতুনভাবে হাজির হয়েছে। এসব শাড়ির দাম পড়বে আড়াই হাজার থেকে ১৩ হাজার টাকা পর্যন্ত। সফট সিল্ক শাড়ি কাপড় বিক্রি হচ্ছে দুই হাজার ৫০০ টাকা থেকে আট হাজার টাকা পর্যন্ত। এছাড়া বাটিক সিল্ক ও বলাকা সিল্ক বিক্রি হচ্ছে বেশ ভাল। সিল্কের তৈরি থ্রিপিস বিক্রি হচ্ছে বিভিন্ন দামে। এছাড়া মসলিন সিল্কের এই কাপড় পড়বে ১২ হাজার টাকা।

এবছর ঈদের ভাল বিক্রি হচ্ছে ‘পার্টি ড্রেস’। শিশু-কিশোরীদের মধ্যে বেশ সারা ফেলেছে ‘পার্টি ড্রেস’। শাড়ি কিনতে আসা মোসা. মুশফিক মিতু বলেন, সিল্কের শাড়িগুলো পড়তে ভাল। গরমের কথা মাথায় রেখে সিল্কের শাড়ির পোশাক পড়ায় ভাল। ‘উষা সিল্ক’ এর জেনালের ম্যানেজার জহুরুল ইসলাম বলেন, ঈদেক ঘিরে প্রায় ৫ মাস আগে তারা প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছেন। এরই মধ্যে বেশ কিছু নতুন নতুন পোশাক সংযুক্ত হয়েছে।

তিনি জানান, তাদের শোরুমে মেয়েদের থ্রিপিসের মধ্যে রয়েছে মসলিন এমব্রয়ডারি, মসলিন এপলিক, সফট সিল্ক, এনডি সিল্ক ও বিভিন্ন হাতের কাজ করা থ্রিপিস। আড়াই হাজার থেকে সাড়ে ছয় হাজার টাকায় এসব থ্রিপিস বিক্রি হচ্ছে। ঊষা সিল্ক শোরুমের তিন হাজার টাকা থেকে শুরু করে ১৫ হাজার টাকা দামের থ্রিপিস রয়েছে। শাড়ি বিক্রি হচ্ছে ২০০০ থেকে ২২ হাজার ৫০০ টাকা মূল্যে।