কেকে’র মৃত্যু : চাপে পড়ে নিঃশর্ত দুঃখ প্রকাশ করলেন রূপঙ্কর

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্কঃ

ভারতের জনপ্রিয় সঙ্গীতশিল্পী প্রয়াত কৃষ্ণকুমার কুন্নাত ওরফে কেকে- কে উদ্দেশ্য করে বিতর্কিত মন্তব্যের জন্য নিঃশর্ত দুঃখ প্রকাশ করলেন সংগীতশিল্পী রূপঙ্কর বাগচী। গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় কলকাতার নজরুল মঞ্চে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের পর হটাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন কেকে। পরে রাতে তাকে কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানে মৃত্যু হয় তার।

কেকের মৃত্যুর মাত্র কয়েক ঘণ্টা আগে সংগীতশিল্পী রূপঙ্কর নিজের ফেসবুক পেজে একটি লাইভ ভিডিও আপলোড করেন। যেখানে রূপঙ্কর প্রশ্ন তোলেন ‘হু ইস কেকে?’ রূপঙ্করের বিরুদ্ধে প্রয়াত গায়ক কেকে-র নামে একাধিক তির্যক মন্তব্য, তার সঙ্গীত প্রতিভা নিয়ে মন্তব্য করেছিলেন বলে অভিযোগ।

আর কেকে- এর মৃত্যুর জন্য আকস্মিকভাবেই রূপঙ্করকে কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হয়। রূপঙ্করের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিতে থাকে নেট দুনিয়ার একাংশ। সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলোতে রূপঙ্করকে নিয়ে একের পর এক মিম তৈরি হয়। বিষয়টি নিয়ে যথেষ্ট পানি ঘোলা হয়। এ সময় রূপঙ্করের অনেক অনুরাগীরা, সমর্থকরা তার থেকে মুখ ফেরাছিলেন। এমনকি বিখ্যাত কেক প্রস্তুতকারক সংস্থা মিও আমোরে রুপংকরের গলায় গাওয়া বিজ্ঞাপনী জিংগেল বাতিল করে বলে জানা যায়।

এমন এক পরিস্থিতিতে নিজেই ওই ঘটনার নিঃশর্ত ক্ষমা চাইলেন রূপঙ্কর, সেই সাথে কেকের পরিবারের প্রতি দুঃখ প্রকাশ করেন তিনি।
শুক্রবার বিকালে কলকাতা প্রেস ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে স্ত্রী চৈতালী বাগচীকে পাশে বসিয়ে একটি লেখা বিবৃতি পড়েন তিনি এবং তা শেষ করেই তিনি উঠে যান। যদিও সাংবাদিকদের কোনো প্রশ্নের উত্তর এদিন তিনি দিতে চাননি।

রূপঙ্কর এদিন কেবলমাত্র ওই বিবৃতিটি উপস্থিত সকলের সামনে পড়ে শোনান। তিনি বলেন, প্রথমেই প্রয়াত কেকে-র পরিবারের কাছে নিঃশর্ত দুঃখ প্রকাশ করছি। আমার যে ভিডিওটি গত ক’দিন ধরে সোশ্যাল মিডিয়া ও তার বাইরে এত বিরামহীন উত্তেজনার উপাদান হয়েছে এখানে পৌঁছবার আগে সেটি আমি ফেসবুক থেকে ডিলিট করলাম। পরলোকগত গায়কের পরিবারের কারো সঙ্গে আমার পরিচয় নেই। কিন্তু আপনাদের মাধ্যমে মুম্বাইবাসী- তাঁদের আবার জানাচ্ছি যে আমি আন্তরিক দুঃখিত। কেকে আজ যেখানেই থাকুন, ঈশ্বর যেন ওকে শান্তিতে রাখেন।”

বিবৃতিতে রূপঙ্কর বলেন “আমার সংগীত জীবনে এইরকম বিভীষিকার মুখোমুখি হতে হবে ভাবিনি যেখানে, ওড়িশায় বসে করা একটা ভিডিও পোস্ট এমন পরিস্থিতি তৈরি করবে যা আমার গোটা পরিবারকে ঠেলে দেবে চরম আতঙ্ক, দুর্ভাবনা এবং মানসিক নিপীড়নের মধ্যে। যেখানে আমার বাড়ির বাইরে নিরাপত্তা রক্ষায় পাহারা দেবে টালা থানার পুলিশ। নিয়ত হুমকি এসেই যাবে আমার স্ত্রী-র ফোনে।

গায়ক হিসেবে দেশেবিদেশে এত লক্ষ লক্ষ মানুষের ভালোবাসা পেয়েছি। তাদের আবেগ অনুভব করেছি এত বছর ধরে ধারাবাহিকভাবে। স্বীকৃতি পেয়েছি নানান স্তরে। মুহূর্তের অসতর্কতা যে এমন গনগনে এবং মারমুখী আবেগ বয়ে আনবে কে জানতো? এত ঘৃণা। এত আক্রোশ। এত বিরুদ্ধতা- কিন্তু অনেকটাই তৈরি হল আমার বক্তব্য আমি ঠিকমতো গুছিয়ে বলতে না পারায়।”

তার অভিমত “প্রয়াত কেকে সম্পর্কে আমার ব্যক্তিগত কোনো বিদ্বেষ নেই। থাকার প্রশ্নও ওঠে না। আমি শুধু ওর কনসার্ট নিয়ে তৈরি হওয়া উন্মাদনা লক্ষ্য করে বলতে চেয়েছিলাম বাঙ্গালি গায়কদের জন্যও আপনারা একইরকম দরদ দেখান। ব্যক্তিগত ভাবে ঈশ্বরের আশীর্বাদে এবং আপনাদের শুভেচ্ছায় গায়ক হিসেবে আমার ব্যক্তিগত কোনো হতাশা নেই।

কিন্তু বাঙ্গালি গায়ক হিসেবে সমষ্টিগত বিপন্নতা রয়েছে। ইদানীং আরও বেশি করে বারবার মনে হয় দক্ষিণ বা পশ্চিম ভারত যেভাবে তার শিল্পীদের স্বার্থ রক্ষার্থে ঝাঁপিয়ে পড়ে, আমরা যেন সেটা করতে দ্বিধাগ্রস্ত। শিল্প-সাহিত্য-সংগীত সবেতেই প্রাদেশিক পারফর্মার যেন কঠিন খাদের ধারে এক অস্তিত্বের সংকটে দাঁড়িয়ে। তাই আমি একার কথা বলতে চাইনি।একটা সমষ্টির কথা বলতে চেয়েছিলাম৷”

তিনি বলেন “একই সঙ্গে তাই আরও কিছু সহযোদ্ধার নাম করেছিলাম, যাদের ট্যালেন্ট আমার মতে জাতীয় পর্যায়ের। পরে মনে হয়েছে নামগুলো বলার আগে জিজ্ঞেস করে নেওয়া উচিত ছিল। কিন্তু আবার বলি এককভাবে ইস্যুটা দেখিনি। কেকে-র মতো ভারতবিখ্যাত পারফর্মারের নামটা নিছক প্রতীক ছিল। নিছক উপলক্ষ । লক্ষ্য কখনো তিনি ছিলেন না। থাকার প্রশ্নও নেই।”

কে জানত, চরম দুর্ভাগ্য কেকে-র জন্য এইভাবে ওঁত পেতে রয়েছে। একজন প্রথিতযশা শিল্পী কলকাতার মঞ্চে গাইতে এসে এভাবে প্রাণ হারালেন সেটা খুব হৃদয় বিদারক। সব শেষে তিনি বলেন “আমি আজ আপনাদের কারো সঙ্গে আলাদা করে কথা বলছি না। পরে নিশ্চয়ই বলবো। কিন্তু আজ সেই দিন নয়। আপনাদের কাছে মার্জনা চাইছি আগাম।”

 

সুত্রঃ বাংলাদেশ প্রতিদিন