কৃষিতে ভর্তুকি কমছে

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

চলতি অর্থবছরে কৃষি খাতে ৯ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি রাখা হয়। সংশোধিত বাজেটে ৬ হাজার কোটি টাকা করা হয়েছে।

কৃষি খাতে ৩ হাজার কোটি টাকাসহ মোট ৫ হাজার ৬৫২ কোটি টাকার ভর্তুকি কমানো হয়েছে। চলতি অর্থবছরের বরাদ্দ থেকে বড় অংকের এ ভর্তুকি হ্রাস করা হয়। যদিও বছরের শুরুতে ২৭ হাজার ৯৪৬ কোটি টাকা রাখা হয় ভর্তুকি বাবদ।

কিন্তু সংশোধিত বাজেটে কাটছাঁট করে তা ২২ হাজার ২৯৪ কোটি টাকায় নামিয়ে আনা হয়। বেশ কিছু কর্মসূচিতে সময়মতো অর্থ খরচ করতে না পারায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। সংশ্লিষ্ট সূত্রে পাওয়া গেছে এসব তথ্য।

জানতে চাইলে অর্থ প্রতিমন্ত্রী এমএ মান্নান  বলেন, প্রস্তাবিত বাজেটে স্বাভাবিক নিয়মে কৃষি খাতে ভর্তুকি দেয়া হয়েছে। অন্যান্য খাতেও দেয়া হয়েছে। তবে চলতি অর্থবছরের কিছুটা লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় কমানো হয়েছে।

গত ৭ জুন ৪ লাখ ৬৪ হাজার ৫৭৩ কোটি টাকার প্রস্তাবিত ২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাজেট জাতীয় সংসদে পেশ করা হয়। এর মধ্যে ভর্তুকি খাতে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৩৩ হাজার ২০৫ কোটি টাকা।

সরকার ভর্তুকির দিক থেকে বিগত কয়েক বছরে কৃষিখাতকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েছে। খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরকার এ খাতে ভর্তুকি দিচ্ছে। ভর্তুকি পেয়ে উৎপাদন ব্যয় কিছুটা কমিয়ে সম্ভব।

কিন্তু সরকারের শেষ বছরের দিকে হঠাৎ খাদ্য খাতে ভর্তুকি হ্রাস করেছে। সূত্র মতে, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে কৃষি খাতে ৯ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি বাবদ রাখা হয়। সংশোধিত বাজেটে ৩ হাজার কোটি টাকা কমিয়ে ৬ হাজার কোটি টাকা করা হয়।

অবশ্য দাতাসংস্থাগুলো প্রণোদনা ও ভর্তুকি কমিয়ে আনতে সব সময় সরকারকে পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছে। বিশেষ করে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে ভর্তুকি কমিয়ে আনতে বিশ্বব্যাংকের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে। তাদের মতে ভর্তুকির টাকা ধনীরাও পাচ্ছে। তাই সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য নির্ধারণ করে ভর্তুকি দেয়া উচিত। যাতে সুবিধা বঞ্চিতরা এর উপকার পায়।

সূত্র মতে, কৃষি ছাড়াও খাদ্যে ভর্তুকি কমানো হয়েছে। বছরের শুরুতে ৪ হাজার ৫৯৬ কোটি টাকা খাদ্যতে ভর্তুকি ছিল। সংশোধিন করে ৬৪২ কোটি টাকা হ্রাস করা হয়।

শেষ পর্যন্ত খাদ্যে ভর্তুকি দাঁড়াচ্ছে ৩ হাজার ৮৯৪ কোটি টাকা। তবে অন্যান্য খাতে একই সময়ে ১২শ’ কোটি টাকা বেড়েছে। অন্যান্য খাতে বরাদ্দ ছিল ১৪শ’ কোটি টাকা। শেষ পর্যন্ত তা বেড়ে ২ হাজার ৬শ’ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে।

সূত্র আরও জানায়, ৫ হাজার ৫০০ কোটি টাকা নগদ ঋণ হিসেবে পিডিবিকে বরাদ্দ দেয়া হয়। কিন্তু এ খাতে হ্রাস করা হয় ১৯শ’ কোটি টাকা। পিডিবিকে ঋণ বাবদ শেষ পর্যন্ত বরাদ্দ চূড়ান্ত করেছে ৩ হাজার ৬০০ কোটি টাকা। এছাড়া আগামী অর্থবছরে এলএনজি আমদানি ও চাকরিজীবীদের গৃহনির্মাণ ঋণসহ বেশ কিছু খাত নতুন করে ভর্তুকির আওতায় আসছে। বিশেষ করে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডকে(পিডিবি) ভর্তুকি দেয়া হবে।

চলতি অর্থবছর পর্যন্ত এ সংস্থাকে সরকার সহায়তা দিয়েছে ঋণ হিসাবে। পাশাপাশি সামনের বছরগুলোতে বাস্তবায়ন কার্যক্রম অব্যাহত রাখা হবে কয়লা, গ্যাস, তাপবিদ্যুৎ ও নবায়নযোগ্য জ্বালানিনির্ভর দীর্ঘ মেয়াদি বিদ্যুৎ প্লান্টের। সে হিসাব করেই আসন্ন বাজেটে ৩৩ হাজার ২০৫ কোটি টাকা বরাদ্দ থাকছে ভর্তুকি ও প্রণোদনা খাতে।

সাধারণ নিয়ম অনুযায়ী বাজেটে নগদ ঋণ, ভর্তুকি ও প্রণোদনার জন্য আলাদা কয়েকটি খাত নির্ধারণ করা হয়। এর মধ্যে নগদ ঋণ পায় বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড(পিডিবি) ও বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন(বিপিসি)। ভর্তুকি পায় খাদ্য এবং প্রণোদনা পায় কৃষি, রফতানি ও পাটজাত খাত।

কিন্তু নগদ ঋণ খাতে ২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাজেটে পরিবর্তন আসছে। আগের বাজেটগুলোতে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা পিডিবিকে সরাসরি ভর্তুকি বা প্রণোদনা দেয়া হতো না। নগদ ঋণ হিসাবে সংস্থাটিকে অর্থ সরবরাহ করা হয়। তবে এ ঋণকেও এক ধরনের ভর্তুকি হিসেবেই দেখা হয়ে থাকে।

কারণ এসব ঋণ সহজে সরকার ফেরত পায় না এবং পরে পুরোঋণই অনুদান, ভর্তুকি ইত্যাদিতে রূপান্তরিত হয়। যে কারণে সরকার এবার এ বিষয়ে নতুন সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

সেটি হচ্ছে, আগামী অর্থবছরে পিডিবিকে ঋণ দেয়া হবে না। কারণ পিডিবিকে ঋণের পরিবর্তে সরাসরি ভর্তুকি দেয়া হবে। এতে করে আসন্ন বাজেটে ঋণ খাতে বরাদ্দ বড় ধরনের কমছে। সেখানে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে ৫০০ কোটি টাকা। চলতি বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ আছে ৮ হাজার ৫শ’ কোটি টাকা। ওই হিসেবে নতুন বাজেটে ৮ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ কমছে।

সূত্র আরও জানায়, প্রণোদনা খাতে নতুন বছরে ১৩ হাজার ৫শ’ কোটি টাকা বরাদ্দের লক্ষ্যমাত্রা চূড়ান্ত করা হয়েছে। তিনটি খাতে এ প্রণোদনা দেয়া হবে। এর মধ্যে কৃষিতে ৯ হাজার কোটি টাকা, রফতানিতে ৪ হাজার কোটি টাকা ও পাটজাত পণ্যে দেয়া হবে ৫০০ কোটি টাকা।

জানা গেছে, বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম কম থাকায় বিপিসির জন্য কয়েক বছর কোনো ভর্তুকি দিতে হয়নি সরকারকে। আগামী বাজেটেও ভর্তুকি বাবদ কোনো অর্থ ব্যয় করতে হবে না।

ফলে নতুন করে এ খাতে এক টাকাও ভর্তুকি হিসেবে বরাদ্দ রাখা হয়নি। পাশাপাশি পিডিবিকে ঋণ দেয়া হবে না। কারণ পিডিবিকে এখন থেকে ভর্তুকি হিসেবে টাকা দেয়া হবে।

ফলে বাজেটে ঋণ খাতে বরাদ্দ বড় ধরনের কমছে। সেখানে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে ৫০০ কোটি টাকা। চলতি বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ আছে ৮ হাজার ৫শ’ কোটি টাকা। ওই হিসেবে নতুন বাজেটে ৮ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ কমছে।

প্রণোদনার সবচেয়ে বড় অংশ ব্যয় কৃষি খাতে। চলতি অর্থবছরেও কৃষি খাতে প্রণোদনার দেয়া হয় ৯ হাজার কোটি টাকা। আগামী অর্থবছরেও একই পরিমাণ অর্থ বরাদ্দ রাখা হয়েছে।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার মতে, ২০১৭-১৮ অর্থবছরের সার আমদানির পরিমাণ এবং আন্তর্জাতিক বাজার বিশ্লেষণ করে এ খাতে বরাদ্দ রাখা হয়। কারণ কৃষি খাতের ভর্তুকির বেশির ভাগ ব্যয় হয় আমদানিকৃত সারের পেছনে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা কমিয়ে ৬ হাজার কোটি টাকা নির্ধারণ করা হচ্ছে।