‘কিয়েভ থেকে পালাচ্ছি, বর্ডার পেরোতে পারব কিনা জানি না’

রাশিয়ার সেনা অভিযানে ক্রমেই ধ্বংসস্তুপে পরিণত হচ্ছে ইউক্রেন। এই কঠিন সময়ে নারী-শিশু আর বিদেশি নাগরিকদের আশ্রয়দাতা হয়ে দাঁড়িয়েছে পোল্যান্ড। সবাই দ্রুত শহর ছেড়ে বর্ডারে ছুটছে। বারুদের গন্ধ মেখে হানাদার রুশ বিমান আছড়ে পড়ছে ইউক্রেনে।

প্রেমিক-প্রেমিকার শেষ অলিঙ্গনের ছবি, বিচ্ছেদের ভাইরাল হচ্ছে।  ইউক্রেন নারী ফুটবল দলের প্রধান ফিজিও জর্দি এসকুরাও কিয়েভ ছেড়ে পালাচ্ছেন। এক ভিডিওবার্তায় জানিয়েছেন ওই মুহূর্তের পরিস্থিতি।অ্যান্ডোরার সাবেক ফুটবলার জর্দি এসকুরা গত বছর নতুন দায়িত্ব নিয়ে পূর্ব ইউরোপের এই দেশে এসেছিলেন। তবে বছর ঘুরতে না ঘুরতেই যে এমন পরিস্থিতির মুখে পড়বেন ভাবতে পারেননি। ভিডিওতে জর্দি এসকুরা বলেন, ‘গাড়ি করে পালাচ্ছি। আর রাস্তায় দেখছি শয়ে শয়ে মানুষ বাক্সপ্যাটরা গুছিয়ে বেরিয়ে পড়েছেন। হাঁটছেন, কেউ বা দৌড় লাগাচ্ছেন। বাইরের তাপমাত্রা তখন খুব বেশি হলে ৪-৫ ডিগ্রি, বিকেলের দিকে ২-৩, আর সূর্য ডুবলে যা নেমে আসছে মাইনাস বা ১ ডিগ্রির আশেপাশে। ‘

এসকুরা শুক্রবার রাতে বলছিলেন, ‘গতকাল বোমার শব্দে ঘুম ভাঙে। প্রথমে বুঝতে পারিনি সেটা বোমার শব্দ। পরে আমার বোন আমাকে ফোন করে জানায়, যুদ্ধ শুরু হয়ে গেছে। খবরে দেখাচ্ছে। তখনই বুঝতে পারি, যে বিকট শব্দে ঘুম ভেঙেছিল সেটা আসলে বোমার শব্দ। তারপরেই লুইসকে (হেড কোচ লুই কর্তেজ) ঘুম থেকে তুলি। দ্রুত কিয়েভ ছাড়ার জন্য প্রস্তুতি নিই আমরা। ইউক্রেনিয়ান ফুটবল ফেডারেশন, স্প্যানিশ দূতাবাসের যোগাযোগ করি। কিয়েভে আর কোনওভাবেই থাকতে চাইছিলাম না। কীভাবে ইউক্রেন ছাড়ব, তা আমাদের মাথায় খালি ঘুরপাক খাচ্ছিল। ‘

রোমহর্ষক অভিজ্ঞতা জানিয়ে জর্দি বলেছেন, ‘ইউক্রেন ফুটবল ফেডারেশন কোনো রকমে ভ্যান এবং একজন ড্রাইভারের ব্যবস্থা করেছিল। সেই ভ্যানে করেই আমাদের নতুন জার্নি শুরু হয়। শুক্রবার সকাল ৯ টা পর্যন্ত টানা গাড়িতে কাটাই প্রায় ২০ ঘন্টা। ৪০০ কিমি পেরিয়ে এসেছি এখনও পর্যন্ত। তবে দিনের শুরুতে ব্যাপক যানজটের মুখে পড়তে হয়েছিল। কিয়েভ ছাড়ার মুখে এমন বিশাল জ্যাম লাগে যে গাড়ি প্রায় এগোচ্ছিলই না। ১৫-২০ মিনিটে হয়ত ১০-১৫ মিটার পেরোচ্ছিলাম আমার। তবে কিয়েভ ছাড়ার পরেই যানজট অনেকটা কমে আসে। ‘

ইউক্রেনের লিভ শহরে গিয়ে তিনি বলেন, ‘এই শহরে কেউই পালিয়ে যাচ্ছে না। রাস্তায় গাড়ি, মানুষ জন শপিং করছে, নিজের মতো সময় কাটাচ্ছে। এদিন রাতেই বর্ডার ক্রস করে ফেলব আশা করি। ওখানে গিয়ে আমাদের জন্য কী অপেক্ষা করছে, জানি না। তবে পোলিশ বর্ডারে এখন মারাত্মক চাপ। বিশাল সংখ্যক গাড়ি বর্ডার ক্রশ করতে চাইছে। ১০-১২ ঘন্টা গাড়ির লাইন পোল্যান্ডের বর্ডারে। আমরা জানি না কী অপেক্ষা করছে। শেষমেশ বর্ডার পেরোতে পারব কিনা, সেটাও জানি না বাস্তবে। তবে এটুকু জানি, ১৮ থেকে ৬০ ইউক্রেনিয়ান পুরুষদের বর্ডার পেরোতে দেওয়া হচ্ছে না। কারণ তাদের ইউক্রেনে থাকতে হবে দেশকে রক্ষা করার জন্য। ‘