কিছু ইচ্ছে আজীবন কল্পনাতেই থেকে যায়!

কত কথা বলা হলো না প্রিয়/ কত সূর্যমুখীর মন ভার/ আমার শহর জুড়ে কুয়াশা ঘুম/ নীরবে জমা ব্যথার পাহাড়।
ব্যথারা আসলে নীরবেই জমে। অধিকাংশ ব্যথার’ই কোনো নালিশ থাকে না।

পৃথিবীর কোন সম্পর্কই চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত নয়। আজকের ভালো সম্পর্ক কাল বিষিয়ে যেতেই পারে। সম্পর্ক ভাঙা এবং গড়া হোক সে বিয়ে বা প্রেম সমাজ যদি এটাকে স্বাভাবিক ভাবে মেনে নিতে শিখতো তাহলে পারিবারিক সহিংসতা এবং খুনোখুনির ব্যাপারটা কমে যেতো। সমাজ সম্পর্ক ভাঙাটাকে সহজ ভাবে নেয় না বলেই হয়তো নতুন সম্পর্কে জড়াতে দীর্ঘদিনের সঙ্গীকে খুন করার মত ব্যাপার ঘটছে। একটু মাথাটাকে কাজে লাগান। একটা মৃত সম্পর্ক বয়ে নেওয়ার চেয়ে আলাদা হয়ে নতুন করে বাঁচার চেষ্টা টা কি খুব দোষের?

‘নীরবতা’ সবসময় সম্মতিকে বোঝায় না। কখনো কখনো দ্বিধা আর ভয়কেও বোঝায়। কত পথ হাঁটা বাকি রয়েছে প্রিয়/ কত সন্ধ্যের পথ অন্ধকার/ হেঁটে চলি আজ সে পথ ধরে/
যে পথ আমার একার।

 

বিচ্ছেদ মৃত্যূসম। ‌অন্য অর্থে মৃত্যূর চেয়েও বেশি। প্রিয়জনের মৃত্যূতে আহাজারি করা যায়, বুকচাপড়ে কাঁদা যায়, সময়ে অসময়ে স্মরণ করা যায়। কিন্তু বিচ্ছেদে শোকের প্রকাশ থাকে না ; থাকে শুধু পাঁজর ভাঙা ব্যথা। আর সেই ব্যথার না থাকে কোনো নালিশ;  না থাকে কোনো নিরাময়। ছেড়ে যাওয়ার জন্য একটা না একটা অজুহাত তো চাই ই। তবে বিনিয়োগ আর বিনিময়ের নাম আর যাই হোক প্রেম নয়।

পৃথিবীতে বেশির ভাগ মানুষ ভালো না বেসেই একসাথে থাকতে চায়। আবার কেউ কেউ ভালোবাসে অথচ একসাথে থাকতে চায় না। বড় জটিল এই সমীকরণ। একছাদের নিচে না থেকেও সমস্ত খুঁটিনাটিতে মিশে থাকা যায়। হাজার মাইল দূরে থেকেও বুকের অনেকটা জুড়ে থেকে যায় কেউ।

এই যে অন্তহীন অপেক্ষা ; কখনো কখনো এটা বেশ যন্ত্রণার। কিন্তু এই প্রতীক্ষাটাই বেঁচে থাকাকে মধুর করে। কিছু ভাংচুরের কোন শব্দ হয় না। অনেকটা নীরবে নিভৃতেই ঘটে পুরো ব্যাপারটা। যার ভাঙ্গে শুধু সেই ই টের পায়।

সব পাখি খাঁচায় পোষ মানে না। নিদিষ্ট কারো মায়ায় আটকে গেলে পৃথিবীর কাউকেই আর ভালো লাগে না। সব প্রেম দেখাতে হয় না। কিছু প্রেম লুকিয়েই রাখতে হয়। সেটাই প্রেমের আসল সৌন্দর্য। কেউ কেউ অকারণে ছুঁয়ে যায়।মানুষের কত ভুল বোঝা অভিমান থাকে। তবে এটাও ঠিক; একতরফা অনুভূতি সামলে রাখতে হয়।

রাগ হলো সবচেয়ে গভীরতম অনুভূতি। প্রেমের চেয়েও রাগ খাঁটি। রাস্তায় চলতে গিয়ে মুহূর্তের ভালোলাগায়ও আপনি যে কারো প্রেমে পড়তে পারেন। কিন্তু রাগ? সেটা শুধু নিজের মানুষদের জন্য। রাগের সাথে অধিকারের একটা বিশেষ সম্পর্ক আছে। ফর্মাল সম্পর্কের সাথে রাগ শব্দটা ঠিক যায় না।

প্রতিটি মানুষের এমন একজন থাকা উচিত যার সাথে কোনোদিন কোনো সম্পর্ক গড়ে উঠবে না, কিন্তু গোটা দুনিয়ার কাছে হেরে গিয়ে ক্লান্ত হয়ে পালাতে চাইলেই তার কাছে নিঃশর্ত আশ্রয় পাওয়া যাবে। খুউব চাইতাম মরণেও যেন দেখা না হয়।এই তো ভালো। এখন মরে গেলেও দেখা হবে না।থাকবে না কোনো দায়।

কেউ কেউ জীবনটা কেমন যেন হেলাফেলায় কাটিয়ে দেয়। চরম আরাধ্যকে ধরে রাখে না অথবা রাখতে পারে না। ভুল বোঝা অভিমানে হারিয়ে ফেলে প্রিয় মানুষটিকে। হ্যাঁ, তারাও হয়তো ভালোই থাকে। শুধু কিছু রাত নির্ঘুম কাটে তাদের। কোনো কোনো সন্ধ্যেয় ঘর অন্ধকার করে বসে থাকে নি:শব্দে; কারো পায়ের আওয়াজ শুনবে বলে। তার সাথে জীবন জড়ায়নি। হয়তো হাতের রেখায় সে নেই। তবে জীবন খালি করে মনের সবটা জুড়েই তার বসবাস থাকে। প্রত্যাখানের রাতে সেটা আরো বেশি করে জানান দেয়। এত মায়া যার জন্য তাকে ছাড়া দিন পার শুধুই যন্ত্রণার। ভুল ভালোবাসায় ক্ষয়ে ক্ষয়ে বাঁচার অন্য নাম মরণ।

যেকোন সম্পর্কের মাঝে আস্থা বিশ্বাস আর প্রতিজ্ঞা থাকাটা খুব জরুরি। যখনই এই বিষয়গুলো অনুপস্থিত হয়ে যায়, তখনি সে সম্পর্কটা হয়ে দাঁড়ায় স্থুলতার সম্পর্ক। যেখানে থাকে কেবল উদারতার আড়ালে ব্যবহার করা অথবা ব্যবহৃত হওয়া।
নারী-পুরুষ ঘটিত যেকোন ঘটনা বিশ্লেষণে একটা জায়গায় আমরা বারবার ভুল করি। আর তা হচ্ছে প্রেম দাঁড়িয়ে থাকে দুজন মানুষের একের প্রতি অন্যের শ্রদ্ধাবোধের উপর। সেই শ্রদ্ধাবোধের থেকেই ভরসা জন্মায়, বিনিময়ের বিষয়গুলো ঘটে। নিজেকে সমর্পণ করে একে অন্যের কাছে। তাই জীবনের কোন একটা স্তরে গিয়ে সে সম্পর্ক থাকবে কি থাকবে না সেটা বিবেচ্য নয়।

অপেক্ষা আর উপেক্ষা যে সইতে পারে না প্রেম তার জন্য নয়। আগুনে পুড়ে খাঁটি হয়, আবার আগুনে পুড়ে ছাই ও তো হয়। দেখতে ইচ্ছে করে কিন্তু দেখা হওয়ার নয়, এমন মানুষের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। চোখের সামনে যেটা ঘটছে শুধু সেটাই সত্যি না। মনের মধ্যে যেটা ঘটছে সেটাও আরেকটা সত্যি।

কাউকে ছেড়ে চলে যাওয়ার পরও মনে রাখাটা হলো ভালোলাগা। আর কাউকে ছাড়তে যাওয়ার চিন্তা করলেও বুকের পাঁজর ভেঙে আসাকেই ভালোবাসা বলে। মরমে বুঝিও মনের কথা, অন্তরে রাখি প্রণয়। স্বেচ্ছায় মেনে নেওয়া দুঃখকে ঐশ্বর্যের মতই ভোগ করা যায়। ঠিক তেমনি কিছু ইচ্ছে আজীবন কল্পনাতেই থেকে যায়!

লেখক: সম্পাদক, বিবার্তা২৪ডটনেট

 

সূত্রঃ বাংলাদেশ প্রতিদিন