সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:
বৈদেশিক বাণিজ্য তথা আমদানি-রপ্তানিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে চলেছে কাস্টম হাউস। দেশের সাথে বৈদেশিক বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্প্রসারণের লক্ষ্যে বাণিজ্য ও ট্যারিফ উদারিকরণ এবং ট্রেড ফ্যাসিলিটেশনের পাশাপাশি চোরাচালান রোধ, পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্য সংরক্ষণে কাস্টম হাউসের ভূমিকা ব্যাপক। আর এ লক্ষ্য নিয়ে কাজ করে চলেছে ঢাকা কাস্টম হাউস।
জানা যায়, রাজস্ব আহরণ, চোরাচালান প্রতিরোধ,নিরাপদ বাণিজ্য, মানি লণ্ডারিংসহ আর্থিক অপরাধ প্রতিরোধ, শাহজালাল বিমানবন্দরে যাত্রীসেবা প্রদান এবং প্রতিদিন গড়ে ৫ হাজারটি বিল অব এন্ট্রি দাখিল ও কাস্টম আনুষ্ঠানিকতা সম্পাদন করছে ঢাকা কাস্টমস হাউস।
ঢাকা কাস্টম হাউসে এক ঝাঁক তরুণ কর্মকর্তা টিমওয়ার্কের ভিত্তিতে আমদানিকারক, সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট এবং বিমানবন্দরে দায়িত্বরত সংস্হাগুলোর সঙ্গে সমন্বয়ের মাধ্যমে কাজ করছেন। এছাড়া এয়ারপোর্ট কাস্টমসের ফেসবুক পেজের মাধ্যমেও কাস্টম আনুষ্ঠানিকতা এবং আমদানি-রপ্তানি সংক্রান্ত বিভিন্ন জন জিজ্ঞাসার সমাধানও মিলছে। পণ্য ব্যবস্থাপনার দায়িত্বপ্রাপ্ত বিমান কর্তৃপক্ষকে বন্ড লাইসেন্স প্রদান এবং বিমানবন্দরে দায়িত্বরত কুরিয়ার সার্ভিসগুলোকে বিধি মালার আওতায় এনেছেন তারা। সব মিলিয়ে সরকারের রাজস্ব আহরণে সংস্থাটির ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ।
এদিকে ২০১৬-১৭ অর্থবছরে রাজস্ব আহরণে ঢাকা কাস্টম হাউসের লক্ষ্যমাত্রা ৩ হাজার ৭ শত ২.৯৮ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছর (২০১৬-১৭) জানুয়ারি পর্যন্ত (৭ মাসে) সংস্থাটি রাজস্ব আদায় করেছে ১ হাজার ৮ শত ২৮.৮৪ কোটি টাকা। গত অর্থ বছরের (৭ মাসের) তুলনায় ২৪৪.১১ কোটি বা ১৫.৪০ শতাংশ বেশি আদায় হয়েছে।
অন্যদিকে ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ৩৫৭ কেজি স্বর্ণ আটক করেছে। এর বাজারমূল্য ১৪৩ কোটি টাকা। এ সময়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের মাধ্যমে স্বর্ণ বিক্রির মাধ্যমে প্রাপ্ত রাজস্ব আয় করেছে ৮৪ কোটি টাকা। আর ২০১৬-১৭ অর্থ বছরে (৭ মাস) ১৩৭ কেজি স্বর্ণ আটক করেছে ঢাকা কাস্টম হাউস। এর বাজার মূল্য ৫৭ কোটি টাকা। এ সময়ে বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক স্বর্ণ বিক্রির মাধ্যমে প্রাপ্ত রাজস্ব আয় করেছে ৫৭ কোটি টাকা।
আর কুরিয়ার সার্ভিস ইউনিটে সম্পূর্ণ অটোমেশন পদ্ধতি চালু হওয়ায় গত অর্থবছরে জুলাই-জানুয়ারি মাস পর্যন্ত সময়ে ৬২.৪৬ কোটি টাকা এবং চলতি অর্থবছরে ৮৬.৪৫ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় করেছে। গত অর্থবছরের তুলনায় ২৩.৯৯ কোটি টাকা বা ৩৮.৪১ শতাংশ বেশি আদায় হয়েছে।
ঢাকা কাস্টমস হাউসসূত্রে আরো জানা যায়, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে নিয়মিত আদায়ের বাইরেও (৭ম মাসে) প্রিভেন্টিভ তৎপরতা জোরদার করা হয়েছে। এর মাধ্যমে অতিরিক্ত রাজস্ব আদায় হয়েছে ১৯.৫৯ কোটি টাকা। এয়ারফ্রেইট ও কুরিয়ার ইউনিটে মোবাইল ফোন, মেমোরি কার্ড, বৈদেশিক মুদ্রা, সুতা, ওষুধ আটকের মাধ্যমে রাজস্ব আহরিত হয়েছে ২১.৪৯ কোটি টাকা।
মূল্য বৃদ্ধির (বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে) দ্বারা বর্ণিত সময়ে অতিরিক্ত আদায়কৃত রাজস্ব এসেছে ১৬০.০৬ কোটি টাকা। আর রিস্ক ম্যানেজমেন্ট বাস্তবায়নের মাধ্যমে সিগারেট জব্দ করা হয়েছে ১১ হাজার ৫৮৫ কার্টন। এর মূল্য ১ কোটি ১৫ লাখ ৮৫ হাজার টাকা। মদ আটক করা হয়েছে ২ হাজার ৯৯৩ বোতল। যার মূল্য ৫৯ লাখ ৮৬ হাজার টাকা । আর ১০টি নিলামকৃত পণ্যের মাধ্যমে রাজস্ব আদায় হয়েছে ৩ কোটি ২ লাখ ৩০ হাজার ১৫২ টাকা। এছাড়া জুলাই ২০১৬ থেকে জানুয়ারি ২০১৭ (৭ মাস) পর্যন্ত স্ট্র্যাটেজিক প্ল্যান বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে ২৪টি মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে। এ থেকে রাজস্ব এসেছে ১৮.২৮ কোটি টাকা। স্ট্র্যাটেজিক প্ল্যান বাস্তবায়নে পোস্ট অডিটের মাধ্যমে বর্ণিত সময়ে অতিরিক্ত আদায়কৃত রাজস্বের পরিমাণ ১ কোটি ২৯ লাখ ৭৩ হাজার ৬৪০.২৯ টাকা।
এছাড়া সঠিক এইচএসকোডে শুল্কায়নের ফলে ১ শতাংশ শুল্কহারের রাজস্ব ৬.৩৪ শতাংশ কমেছে। অপর দিকে ৫ ও ১০ শতাংশ শুল্কহারে রাজস্বের পরিমাণ যথাক্রমে ১৯.২৬ ও ৩২.৭০ শতাংশ বেড়েছে।
এ বিষয়ে ঢাকা কাস্টম হাউসের কমিশনার মোঃ লুৎফর রহমান বলেন,‘জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) বর্তমান চেয়ারম্যান সুশাসন ও আধুনিক ব্যবস্হাপনা কাঠামোর ওপর জোর দিচ্ছেন। এদিকটায় ঢাকা কাস্টম হাউস উদ্যমী হয়েছে। আমরা যা করছি এবং আমাদের যা করা উচিৎ এই দুইয়ের মধ্যে ব্যাবধান কমিয়ে আনার বিকল্প নেই। সঠিক রাজস্ব আদায়ের পাশাপাশি দেশের সামগ্রিক উন্নয়ন ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ঢাকা কাস্টম হাউস সচেষ্ট। এই চেষ্টা অব্যাহত থাকবে।’
রাজস্ব আহরণে ঢাকা কাস্টম হাউসের ভূমিকা বিষয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মোঃ নজিবুর রহমান বলেন, ‘ঢাকা কাস্টম রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে কাজ করে চলেছে। আশা করছি, তারা লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সক্ষম হবে। অন্য যেকোনো কাস্টম হাউসের তুলনায় তাদের ভূমিকা ও গুরুত্ব অনেক বেশি। তবে কেউ কারো চেয়ে কম কাজ করছে ব্যাপারটা এমন নয়। সবাই সবার নিজ নিজ অবস্থান থেকে সরকারের রাজস্ব আহরণে যথাসাধ্য চেষ্টা করে যাচ্ছে।’
সূত্র: বাংলা নিউজ