কাশ্মীরের পর এবার অগ্নিগর্ভ অরুনাচল

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

অশান্ত হয়ে উঠেছে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় প্রদেশ অরুণাচলের রাজধানী ইটানগর। জারি করা হয়েছে কারফিউ। শহরের সর্বত্র টহল দিচ্ছে সেনাবাহিনী। বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে অরুণাচলের রাজধানী ইটানগরের ইন্টারনেট পরিসেবা। অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী পেমা খান্ডুর সঙ্গে কথা বলেছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং।

বিক্ষোভকারীরা আগুন জ্বালিয়ে দিয়েছে রাজ্যের উপ মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ি। তবে সেই সময় সেখানে ছিলেন না উপ মুখ্যমন্ত্রী চৌনা মেইন। শুধু উপ মুখ্যমন্ত্রীর বাড়িতেই নয়, বিক্ষোভকারীরা ভাঙচুর চালিয়েছে জেলার কমিশনারের বাড়িতেও। আহত পুলিশ কমিশনার পদমর্যাদার এক অফিসারও। নতুন করে শহরের বেশ কয়েকটি জায়গায় উত্তেজনা ছড়িয়েছে।

ঘটনার সূত্রপাত স্থায়ী বাসিন্দাদের নাগরিকত্ব সনদ দেওয়াকে কেন্দ্র করে। রাজ্য সরকার অরুণাচলের ছয় সম্প্রদায়কে স্থায়ী বাসিন্দা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার কথা জানায়। সরকার নিযুক্ত প্যানেল এই মর্মে সুবিধাভোগীদের তালিকাও প্রকাশ করে। এই প্রকাশিত তালিকারই বিরোধীতায় অন্যান্য সম্প্রদায় রাস্তায় নেমে এসেছে।

তাদের দাবি, কেন ওই ছয় সম্প্রদায় ছাড়া অন্যান্যরা স্থায়ী বাসিন্দার সনদ পাবে না? পালটাতে হবে প্রকাশিত তালিকা। উল্লেখ্য, যে ছয়টি সম্প্রদায়কে পিআরসি দেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছিল, সেগুলি হল দেওরি, সোনোওয়াল কাছারি, মোরান, আদিবাসী, মিশিং এবং গোর্খা।

দাবি আদায়ে শুক্রবার ইটানগরে রাজ্যের সচিবালয় ঘেরাও করেন আন্দোলনকারীরা। পরে তার মধ্যে প্রবেশের চেষ্টাও করে। এতে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশের খণ্ডযুদ্ধ বাঁধে। পরে তা অগ্নিগর্ভ রূপ নেয়। আন্দোলনকারীদের ঠেকাতে পুলিশ গুলি চালায় বলে অভিযোগ। পুলিশের গুলিতে নিহত হন এক আন্দোলনকারী। এতেই আগুনে ঘি পড়ে।

বিক্ষোভকারীরা শহরের নানা জায়গায় ৫০টি গাড়ি জ্বালিয়ে দেয়। ১০০টি গাড়িতে ভাঙচুর চালায়। অল অরুণাচল প্রদেশ স্টুডেন্টস ইউনিয়ন বা আপসু এবং অল নাইশি স্টুডেন্টস ইউনিয়নের দপ্তর পোড়ানো হয়। বিক্ষোভকারীদের অভিযোগ তারা সরকারি প্যানেলের সুপারিশকে সমর্থন করেছে।

অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতির নিয়ন্ত্রণে আনতে আন্দোলনকারীদের কাছে আবেদন করেন অরুণাচলের মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘মানুষেরা বিভ্রান্ত। তারা মনে করছে যে সরকার বোধহয় এমন একটি বিল আনছে যা একাংশকে পিআরসি দিতে পারে। কিন্তু আমি স্পষ্ট করে বলছি এ রকম কোনও পরিকল্পনা আমাদের নেই। আমরা শুধু বিষয়টি নিয়ে বিধানসভায় বৃহত্তর আলোচনা হোক এমনটা চেয়েছিলাম। কিন্তু এখন যা পরিস্থিতি তাতে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি বিষয়টি নিয়ে আমরা আলোচনা করব না। কিন্তু ভবিষ্যতে সব পক্ষের সঙ্গেই এ নিয়ে আলোচনা করব।’

আন্দোলনকারীদের রোষ থেকে রেহাই পাননি ইটানগরে চলা ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে যোগদাকারীরাও। পরে আন্দোলনের তীব্রতা বাড়ায় ফিল্ম ফেস্টিভ্যালই বাতিল করা হয়। বলিউডের পরিচালক সতীশ কৌশিক হোটেলের ঘরে আটকে পড়েছেন। তাঁর কথায়, ‘ফিল্ম ফেস্টিভ্যালের উদ্যোক্তারা বললেন পাঁচটি সিনেমা হল পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। অবস্থা বেশ খারাপ। তাই হোটেলের ঘরেই বন্দি থাকতে হয়েছে।’

পরে অবশ্য রাজ্য প্রশাসনের তরফে তাদের উদ্ধার করে এয়ারপোর্টে পৌঁছে দেওয়া হয়। একই ঘটনার সাক্ষী ফেস্টিভ্যালে যোগ দিতে আসা একটি ব্যান্ডের প্রতিনিধিরাও। তাদের গাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ।