কালারের প্রতি পক্ষপাতিত্বই রেসিজম।। আরফিনা সাহসী

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:
যোজিবিনি টুনজি নামের সাউথ আফ্রিকান কালো মেয়েটি এবারের মিস ইউনিভার্স হয়েছে।
মেয়েটি কালো বলেই একটু বেশি হাততালি দিচ্ছেন কারণ আপনি অবাক হয়েছেন কেমনে একটা কালো মেয়ে চ্যালচ্যালাইয়া ‘বিউটিফুল’ হিসেবে তকমা পায়।
আপনি অবাক হয়ে ভাবছেন- হাউ ক্যান ইট পসিবল? স্কুলে থাকার সময় নাইজেরিয়ার একটা মেয়ে বিশ্ব সুন্দরী হওয়ার পর আমার এক বান্ধবীও বলেছিল- জানো প্রীতি, কালো ভূত একটা মেয়ে বিশ্ব সুন্দরী হয়েছে? আমি তারে পাল্টা প্রশ্ন করেছিলাম- ভূত যে কালো এটা তোমাকে কে বলেছে? ফেয়ার এন্ড লাভলির ফেয়ার অর্থাৎ ফর্সাটা যেহেতু লাভলি আর কালোরে আগলি বলার পর বছরের একদিন মা কালীর কেত্তন করায় বাহাদুরি নাই, আছে চূড়ান্ত হিপোক্রেসি। কারণ আপনি এখনো বুঝেই উঠতে পারলেন না কালারের প্রতি পক্ষপাতিত্বই রেসিজম। কালোকে মহিমান্বিত করতে সাদাকে খাটো করা আর সাদাকে মহিমান্বিত করতে কালোকে অসুন্দর বলা দুটোই আদতে এক জিনিস।
আর দ্বিতীয়ত ‘বিউটি উইথ ব্রেইন’ হইলো এই শতাব্দীর সেরা প্রপাগাণ্ডা। সুন্দরী প্রতিযোগিতা একটা জঘন্য জিনিস। এই জিনিসের পাল্লায় পড়ে নির্দিষ্ট বুকের মাপ, কোমরের মাপকে আপনি আদর্শ হিসেবে ধরে নিয়েছেন। বার্বি ডলগুলো যেকারণে আমি ঘৃণা করি। কারণ শিশুকাল থেকেই মাথায় ঢুকিয়ে দেওয়া হচ্ছে যে বার্বির মতো বুকের মাপ আর কোমরের মাপ না হলেই আপনি অসুন্দর! অথচ গোলাপ কতোটা লাল, আকাশ কতোটা নীল হলে সুন্দর বলা যাবে সেটার কোনো স্কেল নাই, তাইলে আপনার শরীরের জন্য সেই স্কেলের কি প্রয়োজন?
প্রয়োজন- কারণ এই প্রতিষ্ঠিত স্কেলে আপনার সৌন্দর্য নিয়ে নানান ব্যাবসা ফাঁদা যায়, যেন আপনি ব্যাবসার উছিলায় নিজেরে নিয়ে অসন্তুষ্ট থাকেন। যেন আপনি দিনের নির্দিষ্ট অথবা সিংহভাগ অংশই ব্যায় করেন দীপিকা বা ক্যাটরিনা হতে। আমি বলছিনা দীপিকা বা ক্যাটরিনা অযোগ্য, আমি বলছি- তারাও দাবার গুটি। সৌন্দর্য প্রতিযোগিতাগুলো সেই দাবার গুটি হওয়াকে প্রোমোট করে। যেকারণে পর্ন ইন্ড্রাস্ট্রির বছরের আয় আর পর্নস্টারদের নিট ইনকামের হিসাব, ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রির পুরো বছরের আয় আর ফ্যাশন মডেলদের আয়ের হিসাব মেলেনা।
কারণ এই ইন্ডাস্ট্রিগুলোও চলে দাবার গুটি হওয়াকে কেন্দ্র করে! নারী আপনি বরং মহাকাশে ভ্যালেন্তিনা তেরেস্কোভা হন, বিজ্ঞানে মেরি কুরি আর হাইপেশিয়া হন, লেখায় পার্ল এস বাক হন, মমতায় ফ্লোরেন্স নাইটিঙ্গেল হন। দাবার গুটি হওয়ার জন্য আপনার জন্ম না। সাজতে ইচ্ছা করলে সাজেন, কিন্তু বাধ্য হয়ে যেয়েন না। ধরে নিয়েন না এই সাজগোজই নারী জীবনের একমাত্র অবলম্বন। নারী সৌন্দর্য একটা বোধ, যা আমার কাছে সুন্দর তা আপনার কাছে বিশ্রী- এও হতে পারে! আপনার যোগ্যতা আপনার কর্মে, কর্মের মর্মে। কোনো কোম্পানির ব্যাবসার ছুঁতোয় সৌন্দর্যের বানানো ফর্মে না! বুঝলেন?