কাবুলের রাস্তায় পুরুষ সঙ্গী ছাড়া তরুণী, অতঃপর…

আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলের রাস্তায় পুরুষ সঙ্গী ছাড়াই বের হয়েছিলেন এক আফগান তরুণী। পথে কয়েকজন তালেবান রক্ষী তাকে আটকান। তাকে জিজ্ঞাসা করা হয়, কেন তিনি কোনো পুরুষ আত্মীয় ছাড়া বের হয়েছেন।  পরে তাকে নিয়ে যাওয়া হয় নিকটস্থ চেকপয়েন্টে।

সেখানে নেওয়ার পর ওই তরুণীর স্বামীকে ফোন করতে বলেন তালেবানের কয়েকজন সদস্য। তার কাছে ফোন নেই জানালে একটি ট্যাক্সি ডেকে ওই তরুণীকে বাসায় ফেরত পাঠিয়ে দেন তালেবান সদস্যরা। ওই তরুণীর স্বামীকে সঙ্গে নিয়ে আসতে বলেন তারা। পরে ওই তরুণী তার স্বামীকে নিয়ে আসলে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হয় তাদের। বিবিসি এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে।

ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তালেবান দ্বিতীয় দফায় ক্ষমতা  দখলের পর কাবুলের দৃশ্যমান পরিবর্তন চোখে পড়ছে না। কাবুলের রাস্তায় চিরচেনা যানজট আগের মতোই আছে। ঠেলাগাড়িতে বিক্রি হচ্ছে আফগান সবুজ আঙুর আর গাঢ় বেগুনি বরই। পথশিশুরাও স্বভাবসুলভ চিৎকার করছে।

দেখতে সব আগের মতো মনে হলেও আসলে তা অন্যরকম বলে বিবিসি এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে। তালেবান নিয়ন্ত্রিত রাজধানীর রাস্তায় দেখা যাচ্ছে তাদের সদস্যদের।

অবশ্য আফগানিস্তান থেকে সব মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের পর এক তাৎক্ষণিক সংবাদ সম্মেলনে তালেবানের মুখপাত্র জাহিবুল্লাহ মুজাহিদ সংগঠনের সদস্যদের প্রতি জনগণের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করার আহ্বান জানান।

তবে বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তালেবান দ্বিতীয় দফায় ক্ষমতা দখলের পর পুরুষরা দাড়ি কাটা বন্ধ করেছেন। নারীরাও রঙিন স্কার্ফের বদলে কালো রং বেছে নিচ্ছেন। বাইরে বের হওয়ার আগে মেপে নিচ্ছেন নিজেদের পোশাকের দৈর্ঘ্য।

এর আগে মার্কিন সেনা প্রত্যাহার শুরু হওয়ার পর এক বিজ্ঞপ্তিতে নারীরা বাড়ি থেকে পুরুষ অভিভাবক ছাড়া একা বের হতে পারবেন না আর পুরুষদেরও লম্বা দাড়ি রাখতেই হবে বলে উত্তর-পূর্ব আফগানিস্তানে তাকহার প্রদেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল তালেবান।এমনকি নারীদের বিয়ের জন্য পণ প্রথাও ফিরিয়ে আনার ঘোষণা দিয়েছিল সংগঠনটি।

তালেবান সদস্যদের সাথে বিয়ে দেওয়ার জন্য স্থানীয় ইমামদের কাছে ১৫ থেকে ৪৫ বছর বয়সী অবিবাহিত ও বিধবা নারীদের তালিকাও চেয়েছিল তালেবান।

এসব ঘটনা আফগানিস্তানে ৯০ দশকের তালেবান প্রথম দফার শাসন ব্যবস্থার কথাই মনে করিয়ে দিচ্ছে। ১৯৯৬-২০০১ সাল পর্যন্ত আফগানিস্তানের শাসন ক্ষমতা ছিল তালেবানের হাতে। সে সময় চুরির জন্য হাত কেটে দেওয়া হতো, পাথর নিক্ষেপ করে মানুষ হত্যা করা হতো। এমনকি নারীদের শিক্ষাগ্রহণ ও চাকরির ক্ষেত্রেও ছিল নানা বিধিনিষেধ।

তবে এবার এসব রক্ষণশীল মনোভাব থেকে সরে এসেছে বলে দাবি করছে তালেবান।হিজাব পড়ে নারীরা পড়াশুনা ও চাকরি চালিয়ে যেতে পারবেন বলে সম্প্রতি এক মার্কিন টেলিভিশন চ্যানেলকে তালেবানের মুখপাত্র জাহিবুল্লাহ মুজাহিদ জানিয়েছেন।

সূত্রঃ যুগান্তর