কানসাট রাজার বাগানে বঙ্গবন্ধু ম্যাংগো মিউজিয়ামের কাজ এগিয়ে চলেছে

কামাল হোসেন, চাঁপাইনবাবগঞ্জ:


জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবর রহমানের জন্মশতবার্ষিকীকে চিরস্মরনীয় করে রাখতে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা প্রশাসন ও শিবগঞ্জ উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে নেয়া হয়েছে স্থায়ী পদক্ষেপ। তা হলো বঙ্গবন্ধু লাইভ ম্যাংগো মিউজিয়াম স্থাপন। যার কাজ দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলেছে।

এটি স্থাপন করা হয়েছে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার শিবগঞ্জ উপজেলাতে। অবিভক্ত মালদহ জেলার অধীনে ছিল কানসাট রাজার বাগান। ১৯৪৭সালে দেশ ভাগের পর এটি ছিল চাঁপাইনবাবগঞ্জ মহকুমা যা বর্তমানে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা নামে পরিচিত। কানসাট রাজার বাগান হলো জেলার শিবগঞ্জ উপজেলায়। শিবগঞ্জ উপজেলা ১৫টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভা নিয়ে গঠিত।

শিবগঞ্জে প্রায় ৯ লাখ মানুষের মধ্যে প্রায় ৮লাখ মানুষই কৃষি কাজের উপর নির্ভরশীল। কৃষির মধ্যে আবার আমই প্রধান। তাছাড়া উপজেলার কানসাটে অবস্থিত শতাধিক বছরের পুরাতন ৩১.৯৯ একর জমির উপর ময়মনসিংহের জমিদার রাজা শসিকান্ত আচার্য বাহাদুর (যিনি এলাকায় কুজা রাজা পরিচিত) আম বাগান রয়েছে। এখানে ১৬ প্রজাতির প্রায় ২১শ আম গাছ রয়েছে। বর্তমানে অর্থনৈতিক উন্নয়নে আম গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা পালন করলেও আম মৌসুমে দর্শনার্থীরা সুযোগ সুবিধার অভাবে এখানে আসার আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে।

এরইপ্রেক্ষিতে কুজা রাজার আম বাগানটিকে সংস্কার করে দর্শনার্থীদের জন্য বঙ্গবন্ধু লাইভ ম্যাংগো মিউজিয়াম ও ট্যুরিজম স্পট হিসাবে গড়ে তুললে অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও আম সেক্টরের উন্নয়নে ও চাষীদের জীবনমান উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ন ভুমিকা পালনের লক্ষে পদক্ষেপ গ্রহন করা হয়েছে। ইতিমধ্যে জেলা প্রশাসনের নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধু লাইভ ম্যাংগো মিউজিয়ামের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের জন্য একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ কমিটির মাধ্যমে রাজার বাগানে মাদকের আড্ডা ও বেচাকেনা বন্ধ, বাগানের বড় বড় গাছ ও গাছের ডালপালা কাটা বন্ধ করা হয়েছে। বাগানের মধ্যে অবৈধভাবে জমি দখল করে অবৈধভাবে ২৭ টি তৈরী করা বাড়ি ও দোকান উচ্ছেদ করা হয়েছে। অতিরিক্ত মুনাফা লাভের আশায় বাগান ইজারাদারদের কীটনাশক প্রয়োগ বন্ধ করা হয়েছে এবং অবাধে গবাদি পশুর বিচরনবন্ধ করা হয়েছে। রাজার বাগানে চর্তুদিকে ১০ফিট উচ্চতা বিশিষ্ট প্রচীর দেয়া হয়েছে এবং একটি সুদর্শন গেট নির্মান করা হয়েছে। আরো যে সমস্ত উদ্যোগ নেয়া হয়েছে সেগুলো হলো কানসাটের সুস্বাদু আমের সুপরিচয়কে টিকিয়ে রাখতে ম্যাংগো জোনে উন্নত করা, বিলুপ্তি হয়ে যাওয়া ভালজাতের আমগুলো ফিরিয়ে আনা, আম নার্সারী স্থাপনের মাধ্যমে নতুন জাতের আমের উদ্ভাবন করা আমের চারা স্বল্প মূল্যে স্বচ্ছতার সাথে আমচাষীদের মাঝে সরবরাহ করা ও প্রশিক্ষন দেয়া, বানিজ্যিক সম্প্রসারনের লক্ষে পর্যটন কেন্দ্র স্থাপন,ও পর্যটকদের বিশ্রামের জন্য রেষ্ট হাউস নির্মান করা।

বঙ্গবন্ধু লাইভ ম্যাংগো মিউজিয়াম বাস্তবায়ন প্রসঙ্গে শিবগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাকিব আল রাব্বী জানান, জেলা প্রশাসক মঞ্জুরুল হাফিজের নির্দেশনায় ১শ সুস্বাদু আমের জাত সংরক্ষন ও নামকরনের জন্য আঞ্চলিক উদ্যানতত্ব গবেষণা কেন্দ্র চাঁপাইনবাবগঞ্জের মুখ্য বৈঞ্জানিক কর্মককর্তা নেতৃত্বে প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ জাতের গুঠি আমের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে। কয়েকদিন আগে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান এবি এম আজাদ রাজার বাগানে বারি জাতের একটি আমের চারা রোপন করে বারি কর্ণার স্থাপনের উদ্বোধন করেছেন।

এখানে এ পর্যন্ত জাপানের বিখ্যাত মিয়াজাকি,দিল্লীর চোষা, আমেরিকান ব্লাকষ্টার, সুমিষ্ট জিংয়াং মাই , অ্যাপেল ম্যাংগো ও ব্লু ম্যাংগোর চারা রোপন করা হয়েছে। এখানে নবাবপছন্দ, অমৃতভোগ, বৃন্দাবনি,কালীভোগ, কালীমেঘা, ল্যাংড়া, ক্ষীরসাপাত, গোপলভোগ, জালিবান্ধা, মুলতানি, কাঁচামিষ্টি, গৌরজিত, বউভুলানি, ভুটভুটি, কেরাসিনা সহ ১শ প্রজাতির আমের চারা সংরক্ষণ করা হবে।

তিনি আরো বলেন, চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা প্রশাসক মঞ্জুরুল হাফিজের নেতৃত্বে ও উদ্যোগে শিবগঞ্জ উপজেলায় কানসাট রাজার আম বাগানে বঙ্গবন্ধু লাইভ ম্যাংগো মিউজিয়ামের কাজ শেষ হলে একদিকে যেমন হারানো প্রজাতির আমের ঐতিহ্য ফিরে আসবে। আমের রাজধানী বলে যে খ্যাতি ছিল তা ফিরে আসবে। এখানে ১শ প্রজাতির প্রায় ১০হাজার আমের চারা সংরক্ষন করা হবে। ফলে একটি দর্শনীয় স্থানে পরিণত হবে। পর্যটন কেন্দ্র থাকবে। পর্যটকগণ আসবে এবং তাদের মুখে মুখে কানসাটের আমের প্রচার বিস্তার লাভ করবে।