কাতারে বাংলাদেশিদের স্বস্তি ফিরেছে

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক: কাতারের সঙ্গে সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করা নিয়ে পুরো বিশ্বে সৃষ্টি চাপা উত্তেজনার মধ্যেও সেখানে অবস্থানরত বাংলাদেশিদের মধ্যে স্বস্তি ফিরে এসেছে। মঙ্গলবার (৬ জুন) কাতারের বাংলাদেশ দূতাবাস বিভিন্ন কমিউনিটির নেতাদের নিয়ে বৈঠক করেন কাতারে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদদূত আসুদ আহমেদ। বৈঠকে বাংলাদেশিদের উদ্বিগ্ন না হওয়ার জন্য আশ্বাস দেন তিনি।
রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘কিছু পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। প্রয়োজনে প্রবাসী বাংলাদেশিদের দিক নির্দেশনা দেওয়া হবে। কেউ যেন আতঙ্কিত হয়ে কিছু না করেন।’ এ ব্যাপারে সবাইকে সতর্ক করেন রাষ্ট্রদূত।

এদিকে অবরোধের প্রথম দিন জনমনে কিছুটা আতঙ্ক থাকলেও বুধবার (৭ জুন) থেকে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে এসেছে। নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য সঙ্কটের যে আশঙ্কা করা হচ্ছিল, তাও কেটে গেছে বলে জানান কাতারে বসবাসরত বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরা।
সম্প্রতি সন্ত্রাসবাদসহ বিভিন্ন অভিযোগে কাতারের সঙ্গে সবরকম কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করেছে মধ্যপ্রাচ্যের বেশ কয়েকটি দেশ। এরপর সীমান্ত করে বন্ধ দেওয়া হয় দেশটির সীমান্ত।
কাতারের পাইকারি মার্কেটের ব্যাবসায়ী ফেনীর হাসান জানান, ‘এই মুহূর্তে খাদ্য সঙ্কেট নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। কারণ রমজান উপলক্ষে ব্যবসায়ীরা আগে থেকেই প্রচুর পণ্য মজুত রেখেছে। যা দিয়ে রোজার পর আরও এক মাস ভালোভাবে চালিয়ে নেওয়া যাবে।
কাতারে বাংলাদেশি আইটি প্রতিষ্ঠানে ‘ইম্পেলে’ কর্মরত শহিদুল হক বাবু বলেন, আশা করছি তেমন কোনও অসুবিধা হবে না। যদিও মধ্যপ্রাচ্যের আইটি ব্যবসা মূলত নিয়ন্ত্রণ করে দুবাই। বহির্বিশ্বের থেকে আইটি পণ্যগুলো সরাসরি দুবাই পোর্টে আসার পর সেখান থেকে মধ্যপ্রাচ্যের ব্যাবসায়ীরা সংগ্রহ করে থাকেন। এ অবস্থায় কাতারের কিছু ব্যাবসায়ী কৃত্তিম সঙ্কট সৃষ্টির চেষ্টা করলেও কাতার সরকারের কঠোর পদক্ষেপের কারণে পরিস্থিতি স্বাভাবিক আছে।
এছাড়াও ‘দোহা নিউজ’ এর বরাত দিয়ে শহিদুল হক জানান, মধ্যপ্রাচ্যের সঙ্কট নিরসনের জন্য মধ্যস্থতাকারী হিসেবে কুয়েত সরকার এগিয়ে এসেছে। প্রাথমিক সমঝোতার জন্য গতকাল মঙ্গলবার কুয়েতের আমির শেখ সাবহ আহমেদ আল সাবাহ সৌদি আরব গেছেন। অন্যদিকে কুয়েতের আমিরও একইদিন সকালে কাতারের আমিরের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেছেন। উপসাগরীয় দেশগুলোর মধ্যে ভ্রাতৃত্বমূলক সম্পর্ক পুনঃপ্রতিষ্ঠার বিষয় নিয়ে আলাপ আলোচনা হচ্ছে। আমরাও আশা করছি এ সঙ্কট কেটে যাবে এবং আমাদের কর্মক্ষেত্রে এর কোনও প্রভাব পড়বে না।
মিসাইমার বারওয়া হাউজিংয়ে বসবাসরত বাংলাদেশি গৃহীনি নাঈমা আক্তার শিল্পী জানান, ২০১৪ সালেও কাতারের উপর সৌদি আরব অবরোধ দিয়েছিল, তবে তখন আকাশ ও স্থলপথ দুটোই খোলা ছিল। যার কারণে এখানে তেমন কোনও প্রভাব পড়েনি। কিন্তু এবার আকাশ ও স্থল পথেও অবরোধ জারি করায় আমরা কিছুটা শঙ্কিত। তারপরও আমাদের তো কিছু করার নেই। আমরা এখানে প্রায় ২০ বছরের বেশি সময় ধরে আছি। পরিস্থিতি যাই হোক সেভাবেই মানিয়ে চলতে হবে। সেভাবেই মানসিক প্রস্তুতি রাখছি।
কাতারের আইন খালিদ এলাকায় বিন জাবর গ্রুপে কার ক্লিনিংয়ে কাজ করেন লক্ষীপুরের বাসিন্দা মো. ফরিদ মিয়া। তিনি বলেন, ‘আমার বেতন মাত্র ১২ শত রিয়েল, খাওয়া দাওয়া ও অন্য খরচ মিলিয়ে প্রায় ৫০০ রিয়েলের মতো খরচ হয়। বাকি টাকা দেশে পাঠাই। এই অবস্থায় যদি জিনিসের দাম বেড়ে যায় তাহলে আমাদের তো আর কিছুই করার নেই। আগে যেখানে মাসে ১৫ হাজার টাকা পাঠাতে পারতাম এখন সেখানে হয়তো ১০ হাজার করে পাঠাতে পারবো।