কল্যাণপুরে কী দেখেছেন তাজমঞ্জিলের প্রত্যক্ষদর্শীরা

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

ঢাকার কল্যাণপুরে জঙ্গি বিরোধী অভিযানে সন্দেহভাজন নয়জন জঙ্গী নিহত এবং একজন আটকের ঘটনা নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হচ্ছে বাংলাদেশে।

জাহাজ বিল্ডিং খ্যাত তাজ মঞ্জিলের পাশের দোতলা ভবনে ৫ বছর ধরে বাস করছেন ফিরোজ হোসেন। কল্যাণপুরে অভিযানের অন্যতম প্রত্যক্ষদর্শী তিনি। মধ্য রাতের পর গোলাগুলি এবং বিকট শব্দও শুনেছেন। তাদের বাড়ির ছাদে বেশ কয়েকটি গুলির খোসাও পড়ে থাকতে দেখা যায়।

তিনি জানান অভিযানের সময় তার ঘরের পাশ দিয়েই একজন পালিয়ে যায় আর একজন গুলিবিদ্ধ হয়।

“বারান্দায় দাঁড়াইয়া একজন বক্তৃতা দিছে পুলিশদের উদ্দেশে। বলেছে তোমরা আমাদের মারতে আসছো, আমরা ইসলামের জন্য জিহাদ ঘোষণা করছি, আমরা শহীদ হয়ে যাবো, দেখো আমাদের কোনো মৃত্যু ভয় নাই, তোমরা হেলমেট পরে আসছো তোমাদের তো অনেক মৃত্যুভয়।”

ফিরোজ হোসেন জানান, রাত আনুমানিক দুইটা আড়াইটার দিকে এই বক্তৃতা শোনেন তিনি। তিনি জানান, তারা “একটু পরপরই আল্লাহু আকবর ধ্বনি দেয়। তারপর মোনাজাত করছে সবাই মিলা একসাথে। ফজরের সময় আজান দিছে।”

পাশের বিল্ডিংয়ে থেকে এই ছেলেদের সম্পর্কে কোনো ধারণাই করতে পারেন নি মিঃ ফিরোজ। কখনো বুঝতেও পারেননি এরকম একটি গোষ্ঠি তার বাড়ির পাশে অবস্থান করছে।

তাজ মঞ্জিলের তৃতীয় তলার ভাড়াটে রহিমা বেগম। পুলিশের অভিযানের পুরোটা সময় ঐ ভবনের তিনতলায় অবরুদ্ধ ছিলেন তিনি। অভিযানের পর মঙ্গলবার বিকেলে দুই সন্তান নিয়ে ঐ বাড়ি থেকে বের হন তিনি।

রহিমা বলেন, “এই বাড়িতে থাকি আমি চারমাস ধইরা। দুই মাস আছিলাম চার তালায় আর দুই মাস থাকতেছি তিন তালায়”। নিহতরা কতদিন এ ভবনে ছিল, কখনো দেখেছেন কিনা এ প্রশ্নে তিনি বলেন, “তারা কতদিন এই বাড়িতে তা আমরা জানি না। তাদের চিনিও না জানিও না”।

এদিকে অভিযানে নয় জন নিহত এবং একজন আটক হওয়ার পর পুলিশের বক্তব্য এবং ছবি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নানা প্রশ্ন দেখা যাচ্ছে।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে রেজাউল হক নামে একজন তার মন্তব্যে লিখেছেন “এই তর্ক বিতর্ক শেষ হবে না। আমাদের দেশের পুলিশের কর্মকাণ্ডই এমন। তাদের প্রতিটি কর্মকাণ্ডই রহস্যজনক”।

মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম নামে আরেকজন অনেকগুলো প্রশ্ন তুলেছেন যার মধ্যে আছে “তাদের সবার গায়ে কালো পাঞ্জাবী পরা কিভাবে?”

এরকম বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার মো: আছাদুজ্জামান মিয়া বিবিসি বাংলাকে বলেন, “কেন তারা কালো পোশাক পরেছে এর উত্তর ওরাই ভাল দিতে পারতো। তবে আমরা যখন অভিযানটা পরিচালনা করি তখন তাদের ঐ পোশাকেই পেয়েছি।”

তিনি বলেন, “আমরা দীর্ঘক্ষণ ধরে সেখানে অপারেশন করেছি সেখানে বোম্ব ব্লাস্টের চিহ্ণ রয়েছে, গোলাগুলি হয়েছে, আশপাশের জানলায় দেয়ালে গুলির চিহ্ন রয়েছে সেগুলোতো এখনো রয়েছে সে আলামত তো নষ্ট হয়নি”।

কমিশনার বলেন, “প্রশ্ন উঠেছে যে এরা আসলে জঙ্গী কিনা? কল্যাণপুরের ঘটনায় পুলিশ বা সাধারণ জনগণ মারা যায়নি সে কারণে কি বলা হচ্ছে যে এরা জঙ্গী কিনা? এটা আমি জানি না। আমি বলবো এটা আমাদের পারসেপচুয়াল প্রবলেম। আটক জঙ্গী নিজেই তথ্য দিয়েছে তারা একবছর আগে রিক্রুট হয়েছে, তারা সিরিয়া যেতে চেয়েছিল, এবং ঐ বাসায় সে এবং আরো দশজন ছিল”।

সন্দেহভাজন সবাইকে কেন হত্যা করা হলো এমন প্রশ্নও উঠেছে।

এ ব্যাপার আছাদুজ্জামান মিয়া বলেন, “অভিযানের আগেই কিন্ত আমরা জঙ্গীদের আহ্বান করেছিলাম তোমরা ঘেরাও হয়েছো, তোমরা সারেন্ডার করো। তারা আত্মসমর্পণ না করে আমাদের গালমন্দ করে আমাদের ওপর মুহুর্মুহু আক্রমণ করতে থাকে। সেক্ষেত্রে আমাদের জীবন রক্ষার্থে পাল্টা গুলি ছুঁড়তে হয়েছে। তাদের অ্যারেস্ট করার মতো অবস্থা থাকলে অবশ্যই আমরা অ্যারেস্ট করতাম।”

পুলিশ বলছে তাজ মঞ্জিলের পঞ্চম তলায় ২০শে জুন ভাড়া নিয়ে জঙ্গিরা আস্তানা গড়ে তোলে। তাদের ধারণা জঙ্গিরা জড়ো হয়েছিল বড় কোনো হামলার পরিকল্পনা বা পরিচালনার উদ্দেশ্যেই।

সূত্র: বিবিসি বাংলা