কলেজ গেট নাকি পোষ্টার লাগানো বোর্ড!

নিজস্ব প্রতিবেদক:
শিক্ষানগরী রাজশাহীর স্বনামধন্য কলেজগুলোর মধ্যে এটি একটি। প্রথমবার রাজশাহীতে এলে অনেকেই কলেজগুলোর দিকে চোখ থাকে অনেকের। কিন্তু এই কলেজের দিকে চোখ ফেরালে নামটি হয়ত আর দেখা যায় না। পুরো কলেজটি যেন পোষ্টারে ছেয়ে গেছে। সেখানে প্রতিষ্ঠানের নামের স্থলে শোভা পেয়েছে রাজনৈতিক দল আর বিভিন্ন প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন। দেখে চেনার উপায় নাই এটি কি কলেজ গেট নাকি পোষ্টার লাগানো বোর্ড!

রাজশাহীর প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কলেজের দেয়ালে পোষ্টার লাগানোয় নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। এমনকি স্কুল গুলোতেও লাগাতে দেয়া হয় না কোন পোষ্টার কিংবা ব্যানার। কিন্তু রাজশাহী সরকারী সিটি কলেজের চিত্র কিছুটা ভিন্ন। কলেজের দেয়াল থেকে শুরু করে নোটিশ বোর্ড কোথায় নেই পোষ্টার। কোথাও দলীয় আবার কোথাও কোচিং সেন্টার কিংবা প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন। এমন কি বাদ যায় নি ছাত্রবাস-ছাত্রীনিবাসের বিজ্ঞাপনও। কলেজের নামটি পর্যন্ত ঢেকে দেয়া হয়েছে ব্যানার দিয়ে। কিন্তু এতে কর্তৃপক্ষের কোন সুদৃষ্টি নেই। এতে করে কলেজের সাধারণ শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি ক্ষোভের সঞ্চার জন্মিয়েছে শিক্ষকদের মনেও ।

সরেজমিনে মঙ্গলবার রাজশাহী সরকারী সিটি কলেজে গিয়ে দেখা যায়, কলেজের মূল ফটকে নাম ফলক ঢেকে বিশালাকার ব্যানার দেয়া রয়েছে। যা মূলত ১৫ আগষ্ট শোক দিবস উপলক্ষে ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে দেয়া হয়েছিল। কিন্তু দেড় মাস পার হয়ে গেলেও সে ব্যানার সরানো হয়নি। কলেজের গেট থেকে শুরু করে পুরো দেয়ালে ছেয়ে আছে বিপুল পরিমান পোষ্টার। সূত্র মতে বছরের শুরুতে দেয়ালটি সংস্কার করা হয়। তাতে পোষ্টার না লাগানোর জন্য কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে নোটিশ আকারে আদেশ জানানো হয়। কিন্তু মাস কয়েক পরেই এ চিত্র সম্পূর্ন পালটে যায়। এমনকি সেই আদেশ জানানোর বোর্ডটিও হাওয়া হয়ে যায়। পরবর্তীতে একের পর এক পোষ্টার লাগানো হলেও সুদৃষ্টি পড়েনি কলেজ কর্তৃপক্ষের।

অপর দিকে কমিটি গঠনের নামে প্রচারণা করে কলেজে বিভিন্ন ব্যানার টাঙ্গানো হয়। কমিটি গঠন করা হয়নি তবে রয়ে গেছে তার প্রচারণা। দেয়ালে দেয়ালে সাটানো এসব ব্যানার বিভ্রান্ত সৃষ্টি করে শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মনে। কিন্তু ব্যানার পোষ্টার খোলা হয় না কখনও।

কলেজের একাধিক শিক্ষার্থী ক্ষোভ প্রকাশ করে সিল্কসিটিনিউজকে বলেন, বাইরে থেকে কলেজের নামটি পর্যন্ত দেখা যায়না পোষ্টার আর ব্যানারের কারণে। প্রতিদিনই নতুন নতুন পোষ্ঠার আর ব্যানার। তার উপর রাজনৈতিক ক্ষমতার অপব্যহার করে কলেজের সুনাম আরও ক্ষুন্ন হচ্ছে। এক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করেছেন শিক্ষার্থীরা।

তারা বলেন, নতুন অবস্থায় কোন শিক্ষার্থী কলেজের আসলে তাদের এই সব ব্যানার আর অস্থিতিশীল পরিবেশের সাথে পরিচিত হতে হয়। রাজনৈতিক চাপ এমন যে কেউ তাদের বিরুদ্ধে কিছু বলার সাহস করে না। অপরদিকে শিক্ষকেরাও নেয়না কোন পদক্ষেপ। কিছু হলেই গেটে তালা, ক্লাস বর্জন, মিছিল করে পড়াশোনার পরিবেশ নষ্ট করে দেয়। কিন্তু বরাবরই প্রশাসন কিছু বলে না।

কলেজের দ্বাদশ শ্রেণীর শিক্ষার্থী মারুফ হোসেন সিল্কসিটি নিউজকে বলেন, আমরা যে কলেজে পড়ি সেই কলেজের নামটি পর্যন্ত দেখা যায় না। ব্যানার আর পোষ্টার দিয়ে ঢাকা পড়েছে সবই। গত মাসে বড় ভাই এসেছিল কলেজে। তিনি দেখে কিছুটা হতাশা প্রকাশ করেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছু কলেজের এক কর্মচারী বলেন, কলেজ চলাকালীন সময়ে কেউ পোষ্টার মারে না। কলেজ শেষ হলে হয় বিকেলে অথবা রাতে এসে পোষ্টার মারে। একদিন দেখে নিষেধ করলেও পরের দিন দেখি তারা আবারো পোষ্টার মেরে চলে গেছে। কলেজ কর্তৃপক্ষ কোন পদক্ষেপ না নিলে নিন্ম বেতনের কর্মচারী হয়ে আর কি বলার থাকে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে রাজশাহী সরকারী সিটি কলেজের অধ্যক্ষ মফিজ উদ্দীন সিল্কসিটি নিউজকে বলেন,সিটি কলেজ পূর্বের চেয়ে অনেক উন্নত হয়েছে। কলেজের ভৌত অবকাঠামো অত্যন্ত দূর্বল। আর এই দূর্বল অবকাঠামোকে সবল করতে আমরা নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছি। কলেজে ব্যানার লাগানো নিয়ে আমি ছাত্রলীগের ছেলেদের এবং অন্যান্যদের বলেছি। তবে পূজার ছুটির কারণে সেটা অপসারণ করতে পারেনি। কলেজ থেকে ব্যানার অচিরেই সরানো হবে।

তিনি বলেন, রাতের আধারে অনেকেই এখানে পোষ্টার মেরে যায়। তাদেরও নিষেধ করেছি। আজ আবারও তাদের পোষ্টার নামানোর জন্য বলা হবে।
স/শ