কলঙ্কমুক্ত হচ্ছে উত্তরাগণভবন: বঙ্গবন্ধুর পাশ থেকে সরছে মোনায়েম খানের নাম ফলক

মাহবুব হোসেন, নাটোর:
অবশেষে কলঙ্কমুক্ত হচ্ছে প্রধানমন্ত্রীর উত্তরাঞ্চল বাসভবন হিসিবে পরিচিত নাটোরের উত্তরাগণভবন। গনভবনের মুল প্যালেসে স্থাপিত স্বাধীনতা বিরোধি কুখ্যাত রাজাকার মোনায়েম খানের নাম ফলক অপসারন করা হচ্ছে আগামী রোববার।

ইতোমধ্যে নাম ফলক অপসারনের জন্য প্রধানমন্ত্রী দফপ্তেরর নির্দেশনায় এই সংক্রন্ত একটি চিঠি নাটোর গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলীর কাছে এসে পৌছেছে। নাম ফলক অপসারনের মাধ্যমে সৃষ্টি হচ্ছে উত্তর গণভবনের নতুন ইহিতাস।

সূত্র জানায়, উত্তরা গণভবন থেকে কুখ্যাত মোনায়েম খানের নাম ফলক অপসারনের জন্য গত ২৯ জুন প্রধানমন্ত্রী কার্যালয় থেকে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ে এক চিঠি প্রেরণ করা হয়। ওই চিঠির আলোকেই গত ৪জুলাই গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব সুরাইয়া বেগম স্বাক্ষরিত এক চিঠি গত ৫জুলাই নাটোরের গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মশিউর রহমানের কাছে এসে পৌছেছে।

ওই চিঠিতে বলা হয়, নাটোর জেলার উত্তরা গণভবন হতে স্বাধীনতা বিরোধি কুখ্যাত রাজাকার মোনায়েম খান এর নামফলক নাটোর জেলা প্রশাসনের সহায়তায় অপসারন করে তা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে অবহতি করার জন্য নাটোরের গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলীকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

নাটোর গণপূর্ত অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মশিউর রহমান চিঠি প্রাপ্তির কথা স্বীকার করে সিল্কসিটি নিউজকে বলেন, প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরের নির্দেশনায় গণপূর্ত মন্ত্রণালয় মোনায়েম খানের নাম ফলক অপসারনের জন্য নির্দেশ দিয়েছে। আমরা গণপূর্ত এবং জেলা প্রশাসন মিলে যতদ্রুত সম্ভব নাম ফলকটি অপসারন করার প্রস্তুতি গ্রহন করছি।

১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের পর দিঘাপতিয়া রাজবাড়ীর শেষ রাজা প্রতিভা নাথ রায় দেশ ত্যাগ করে ভারতে চলে যান। ১৯৫০ সালে জমিদারি অধিগ্রহণ ও প্রজাস্বত্ব আইন পাশ হওয়ার পর দিঘাপতিয়ার রাজ প্রাসাদটির রক্ষণা-বেক্ষণে বেশ সমস্যা দেখা দেয়। এসময় থেকে দিঘাপতিয়া রাজবাড়ী পরিত্যাক্ত অবস্থায় থাকে। পরে ১৯৬৫ সালে তৎকালীন পাকিস্থান সরকার রাজবাড়ীটি অধিগ্রহন করেন। এরপর ১৯৬৭ সালের ২৪ জুলাই তৎকালীন পাকিস্থানের গর্ভনর মোনায়েম খান এটিকে গর্ভনর হাউস হিসেবে উদ্ধোধন করেন।

স্বাধীনতার পর বাংলাদেশের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭২সালের ৯ ফেব্রুয়ারী গর্ভনর হাউসকে উত্তরাগণভবন হিসেবে উদ্ধোধন করেন। এরপর থেকেই এটি উত্তরা গভবন হিসেবে পরিচিত। এছাড়া এই ভবনের মূল প্রাসাদের ভিতর মন্ত্রিসভার বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সেই থেকে ভবনটি ‘উত্তরা গণভবনের’ প্রকৃত মর্যাদা লাভ করে। এরপর থেকেই স্বাধীনতা বিরোধি মোনায়েম খান এবং স্বাধীনতার ঘোষক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নাম ফলক গণভবনের মূল প্যালেসের প্রবেশ দ্বারে পাশাপাশি রয়েছে। অনেক সময় দর্শনাথীরা এসে স্বাধীনতা বিরোধির নাম ফলক দেখে বিরুপ প্রতিক্রয়া ব্যাক্ত করেন। তাছাড়া দর্শনার্থীদের মধ্যে বিষয়টি নিয়ে ইতিবাচক ধারনা তৈরী হচ্ছে।


২০১৬ সালের ৬ ডিসেম্বর সারাদেশে মহামান্য হাইকোর্ট বাংলাদেশের সকল প্রতিষ্ঠান/স্থাপনা থেকে স্বাধীনতা বিরোধিদের নাম অপসারনের আদেশ দেন। সেই আদেশের প্রেক্ষিতে গত ১৫ ডিসেম্বর মুসলিম লীগ নেতা স্বাধীনতা পরবর্তী প্রকাশিত কলাবরেটর তালিকার ১০ নম্বর অভিযুক্ত রাজাকার আব্দুস সাত্তার খান চৌধুরী মধু মিয়ার নামে নামকরণ করা শহরের ট্রাফিক মোড় হতে হাসপাতাল রোডের এবং কলাবরেটর তালিকার ১৭ নম্বর অভিযুক্ত রাজাকার কছের উদ্দিনের নামে শহরের বড় হরিশপুর এলাকার চেয়ারম্যান সড়কের নামের ফলক ভেঙ্গে ফেলেন জেলা প্রশাসক শাহিনা খাতুন এবং নাটোর পৌরসভার মেয়র উমা চৌধুরী জলি।

পরে দুইজন মুক্তিযোদ্ধার নামে ওই দুটি সড়কের নামকরন করা হয়। কিন্তু গণভবনের মুল প্যালেসে স্থাপিত মোনায়েম খানের নাম ফলক থাকলেও সংশ্লিষ্ট বিভাগের অনুমতি না থাকায় ফলকটি অপসারন করা হচ্ছিল না।

উত্তরা গণভবনের তত্ত্বাবধায়ক আব্দুস সবুর তালুকদার সিল্কসিটি নিউজকে বলেন, দীর্ঘ দিন পর হলেও কুখ্যাত মোনায়েম খানের নাম ফলক অপসারন হওয়ার কথা শুনে খুশি লাগছে। একজন স্বাধীনতা বিরোধি নাম স্বাধীন দেশে থাকতে পারে না। অবিলম্বে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এটি অপসারন করা হোক।

নাটোরের ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক ড. আজাদুর রহমান বলেন, উত্তরাগভবনটি যেহেতু প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন হিসেবে পরিচালিত হয়ে আসছিল। যার কারনে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরের নির্দেশনা না থাকায় জেলা প্রশাসন এটি অপসারন করতে পারছিলো না। তবে এবার প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে গণপূর্ত বিভাগকে অপসারনের চিঠি দেয়ার কথা আমি শুনেছি। চিঠির প্রেক্ষিতে আগামী রোববার গণপূর্ত বিভাগ কুখ্যাত মোনায়েম খানের নামফলক অপসারন করবে। এই অপসারনের মাধ্যমে নাটোরবাসী কলঙ্কমুক্ত হবে।

স/অ