কলকাতায় ঢাকার ব্যান্ড মাইলস-এর অনুষ্ঠান বাতিল

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

বাংলাদেশী ব্যান্ড মাইলস- এর কয়েকজন সদস্য ধারাবাহিকভাবে ভারত বিরোধী মন্তব্য করেন — এই অভিযোগে সামাজিক মাধ্যমে প্রচারণার পরে কলকাতায় তাদের নির্ধারিত অনুষ্ঠানটি বাতিল করা হয়েছে।

ওই প্রচারণাকে সমর্থন জানিয়ে মাইলসের সঙ্গে একই মঞ্চে গান গাইতে অস্বীকার করে কলকাতার ব্যান্ড ফসিলস-ও।

ভারতের স্বাধীনতা দিবসের আগে আজাদী কনসার্ট নামের ওই অনুষ্ঠানটি আয়োজন করেছিল একটি কলকাতার একটি এফ এম রেডিও স্টেশন।

কিন্তু সামাজিক মাধ্যমে লাগাতার প্রচারণা আর ফসিলসের গান গাইতে অস্বীকার করার পরে শেষমেশ ওই দুটি ব্যান্ডকেই অনুষ্ঠানের বাইরে রাখা হচ্ছে বলে ফেসবুকে জানিয়েছেন আয়োজকরা।

পশ্চিমবঙ্গের কিছু রকব্যান্ড ভক্ত গত কয়েকদিন ধরেই সামাজিক মাধ্যমে প্রচারণা চালাচ্ছিলেন যে লাগাতার ভারত বিরোধী মন্তব্য করেন যে ব্যান্ডের কয়েকজন সদস্য, তাদের কীভাবে স্বাধীনতা দিবস সম্পর্কিত অনুষ্ঠানে ডাকা হচ্ছে।

টুইটারে বয়কট মাইলস হ্যাশট্যাগে প্রচারণায় বলা হচ্ছিল যে, ওয়ার্ল্ড কাপ ক্রিকেট চলার সময় থেকেই মাইলসের দুই সদস্য হামিন আহমেদ আর শাফিন আহমেদ লাগাতার ভারত বিরোধী কটু কথা বলে চলেছেন।

ওই হ্যাশট্যাগের অন্যতম পরিচালনাকারী পূজা দাস বিবিসিকে বলেন, “ক্রিকেটেই সেটা শেষ হয় নি। ভারতকে তাঁরা নিয়মিত কুরুচিপূর্ণ বিশেষণে সম্বোধন করতে থাকেন। স্বাধীনতা দিবসের আগে আজাদী কনসার্টে সেরকম একটা ব্যান্ডকে ডাকা হয়েছিল বলেই মাইলসের অনুষ্ঠান বয়কট করার সিদ্ধান্ত নিই আমরা।”

কিছু ফ্যানের এই ক্ষোভের কথা পৌঁছয় কলকাতার ব্যান্ড ফসিলসের কানেও। ব্যান্ডটির প্রধান কণ্ঠশিল্পী রূপম ইসলাম সিদ্ধান্ত নেন মাইলসের সঙ্গে এক মঞ্চে তারা অনুষ্ঠান করবেন না।

ফসিলস-এর ম্যানেজার রূপসা দাশগুপ্ত বিবিসি বাংলাকে বলেন, “আমরা কিন্তু মাইলসের গান শুনেই বড় হয়েছি, ওদের খুব ভক্ত আমরা। হামিন ভাই বা শাফিন ভাই কেউই যেহেতু আমাদের ফেসবুক বন্ধু নন, তাই আমরা আগে উনাদের পোস্টগুলো দেখি নি। এই কনসার্টটা ঘোষণা হওয়ার পরে আমাদের দেখানো হয় যে কীরকম খারাপ গালাগালি দেওয়া হয়েছে ভারতকে নিয়ে। যা সব লেখা হয়েছে, সেগুলো আমি যেমন বলতে পারব না, আপনরাও প্রচার করতে পারবেন না। উনারা যখন এতই ভারত-বিদ্বেষী আর দর্শকরাও যখন চাইছেন না, সেজন্যই ফসিলস সিদ্ধান্ত নেয় যে এরকম একটা ব্যান্ডের সঙ্গে মঞ্চ ভাগ করাটা কঠিন আমাদের পক্ষে।“

অন্যদিকে মাইলসের অন্যতম সদস্য শাফিন আহমেদ বিবিসি বাংলাকে জানিয়েছেন যে তারাই কলকাতার ওই কনসার্টে না আসার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

“এটা একেবারেই অপ্রত্যাশিত। আমাদের সঙ্গে ফসিলসের সম্পর্ক – পরিচয় বহু বছরের। সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে একটা ব্যান্ডের ফ্যানদের নিয়ে আন্দোলন গড়ে তোলার চেষ্টাটাকে এতদিন আমি ছোট করেই দেখছিলাম। অর্থাৎ এই যে ব্যান্ডের ফ্যানদের মধ্যে সামাজিক মাধ্যমে ঝগড়াঝাঁটি করা, নানা কথা লেখা – এটার মধ্যে মাইলস কোনোভাবেই জড়াবে না এটাই ভেবেছিলাম। কিন্তু ওখানকার ব্যান্ড এখানকার ব্যান্ডকে যেতে দিচ্ছে না কোনও না কোনও অজুহাত দেখিয়ে – এটা অত্যন্ত দু:খজনক।”

নিয়মিত ভারত বিদ্বেষী মন্তব্য ফেসবুক পোস্ট করেন বলে যে অভিযোগ তোলা হচ্ছে, সেই বিষয়ে শাফিন আহমেদ বলেন, “ফেসবুকের প্রোফাইল একান্ত আমার। বাংলাদেশের একজন সচেতন নাগরিক হিসাবে দেশের ক্ষতি হয়, এমন বিষয়ে নজরে এলে সেটা নিয়ে কথা বলার, লেখার অধিকার আমার আছে। ক্রিকেট ম্যাচ হলে আমি বাংলাদেশকে সমর্থন করে দুটো কথা আমি লিখতেই পারি। এটা ভারত বিদ্বেষ নয়, এটা দেশপ্রেম। কিন্তু মাইলস গান গাইতে যাবে, সেখানে এ বিষয়গুলোর প্রতিফলন হবে কেন?“

বর্ডারে যদি প্রতিনিয়ত দেশের মানুষকে মারা হয়, অথবা জলবন্টন যদি ঠিকমতো না করা হয় আর তারফলে যদি দেশের কোনও অংশ যদি মরুভূমির মতো হয়ে যায়, সেটা নিয়ে কথা বলার অধিকার তার রয়েছে বলে মন্তব্য মি. আহমেদের।

তিনি আরও বলেন, “পাশের দেশ থেকে এত শিল্পী এখানে এসে অনুষ্ঠান করে যান, আমরা তো তাদের সাদর অভ্যর্থনাই করি। সে তুলনায় এতদিন পরে মাইলসের একটা অনুষ্ঠান করার সুযোগ এল কলকাতায়, সেটাকে বাধা দেওয়ার চেষ্টা একটা হীন মানসিকতার পরিচয়।”

অনুষ্ঠানটির আয়োজক রেড এফ এমের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়েছিল। তারা জবাব দেন নি।

তবে একটি ফেসবুক পোস্টে ওই এফ এম চ্যানেলটি জানিয়েছে যে ওই কনসার্টে মাইলস বা ফসিলস – দুটি ব্যান্ডের কোনটিই থাকছে না।

আজ (বুধবার) আয়োজকদের দপ্তরে একটি বিক্ষোভ দেখানোরও কথা ছিল। তবে তার আগেই রেড এমএম ফেসবুক পোস্টে দিয়ে তাদের সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেয়।

সূত্র: বিবিসি বাংলা