রাজশাহীতে কর কর্মচারীদের কর্মবিরতির কারণে ভোগান্তিতে পৌর নির্বাচনের প্রার্থীরা

নিজস্ব প্রতিবেদক:
আইনজীবীদের সাথে দ্বন্দ্বে জাড়িয়েছেন রাজশাহী কর কমিশনারের কার্যালয়ের কর্মচারীরা। এই দ্বন্দ্বের জের ধরে হঠাৎ করে তারা কর্মবিরতিও শুরু করেছেন। এ নিয়ে ভোগান্তির মুখে পড়েছেন রাজশাহীর বিভিন্ন পৌরসভা নির্বাচনের মেয়র, কাউন্সিলর ও নারী কাউন্সিলর প্রার্থীরা।
আইনজীবীদের অভিযোগ, কর কমিশনারের কার্যালয়ে এখন দালালদেরই দৈরাত্ব। তাদের সঙ্গে যোগসাজস রয়েছে কার্যালয়ের কর্মচারীদের। দালাল আর কর্মচারীরাই আইনজীবীদের কাজ করে দিচ্ছেন। আর কর্মচারীদের অভিযোগ, আইনজীবীরা তাদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন। বাধ্য করেন অনৈতিক কাজ করিয়ে দিতে। সাড়া না দিলে মারমুখি আচরণও করেন তারা।
আইনজীবী ও কর্মচারীদের এই দ্বন্দ্ব কর কমিশনারের কার্যালয়ে দীর্ঘ দিন ধরেই চলে আসছে। এ নিয়ে বুধবার কর কমিশনার মুহাম্মদ মফিজ উল্যার সঙ্গে বসেছিলেন আইনজীবী ও কর্মচারীরা। সেখানে উভয়পক্ষের মধ্যে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় হয়। এরপর বৃহস্পতিবার বেলা ১১টা থেকে কর্মবিরতি শুরু করেন কর্মচারীরা। দুপুর ১টা পর্যন্ত তারা কর্মবিরতি পালন করেন। একই সময় কর আইনজীবী সমিতির কার্যালয়ে আইনজীবীরাও নিজেদের মধ্যে আলোচনায় বসেন।

কর্মচারীদের কর্মবিরতি চলাকালীন কার্যালয়ে কোন কাজকর্ম হয়নি। এতে ভোগান্তিতে পড়েন পৌর নির্বাচনের প্রার্থীরা। আগামী রোববার রাজশাহী জেলার তানোর, গোদাগাড়ী ও নওহাটা পৌরসভা নির্বাচনের প্রার্থিদের মনোনয়নপত্র জমা দিতে হবে। মনোনয়নপত্রের সঙ্গে তাদের সর্বশেষ আয়কর রিটার্ন দাখিলের সার্টিফায়েড কপিও সংযুক্ত করতে হবে। বৃহস্পতিবার সপ্তাহের শেষ দিন প্রার্থিদের অনেকেই রিটার্ন দাখিলের কপি নিতে আসেন। কিন্তু কর্মবিরতির কারণে তাদের দুই ঘণ্টা বসে থাকতে হয়। দুপুরের পর কাজকর্ম শুরু হলে তারা কপি পান।

আইনজীবীরা জানিয়েছেন, কর ভবনে কর্মচারীরাই দীর্ঘ সময় ধরে দালালের মাধ্যমে মামলা নিষ্পত্তির কাজ করে থাকেন। কর্মচারীরা তাদের প্রতিপক্ষ হয়ে দাঁড়িয়েছেন। দালালের মাধ্যমে কর্মচারীরা কাজ করার কারণে আর্থিক সুবিধা নিয়ে তারা অনৈতিক কাজও করেন। তারা করদাতার ১০ হাজার টাকার কর তিন হাজার টাকায় করে দিয়েছেন এমন প্রমাণও তাদের কাছে আছে। কর্মচারীদের কারণে সরকার রাজস্ব হারাচ্ছে। তাই তারা দালালদের উৎপাত এবং কর্মচারীদের অনৈতিক কর্মকাণ্ড বন্ধের দাবি জানাচ্ছেন। বিষয়টি নিয়ে তারা কর কমিশনারের সঙ্গে বসেছিলেন। কিন্তু উভয় পক্ষের এই আলোচনার সময়ও কর্মচারীদের সঙ্গে পলাশ নামের একজন দালাল আসেন। ওই সময় আইনজীবীরা প্রশ্ন করেন, পলাশ কেন এখানে। আর এতেই ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন কর্মচারীরা। তাদের মধ্যে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় হয়। এর পরদিন থেকেই কর্মবিরতি শুরু করেছেন কর্মচারীরা। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ এ নিয়ে কোন হস্তক্ষেপ করেনি।

জানতে চাইলে রাজশাহী কর অঞ্চলের কর কর্মচারী কল্যাণ পরিষদের সাধারণ সম্পাদক এম শাহীন উদ্দীন বলেন, আমরা কোন অনৈতিক কাজ করি না। আমাদের সঙ্গে দালালেরও কোন সম্পর্ক নেই। কর আইনজীবীরাই করদাতাদের হয়ে আমাদের নিয়মবহির্ভুত কাজ করে দেয়ার জন্য চাপ দেন। আবার যে কাজ করতে কমপক্ষে তিন দিন লাগে সেই কাজ তারা সঙ্গে সঙ্গে করে দিতে বলেন। সেটি সম্ভব না হলে হুমকি দেন। মারমুখি আচরণ করেন। সম্প্রতি অফিস সহকারী আবদুল আলিম ও নিরাপত্তা প্রহরী নাহিদুজ্জামানকে হুমকি দেয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে কর আইনজীবী সমিতির সভাপতি ফজলে করিম বলেন, হুমকি দেয়ার অভিযোগ সঠিক নয়। এ রকম হলে কর্মচারীরা আমাদের সংগঠনে অভিযোগ দিতে পারতেন। কেউ কোন অভিযোগ করেননি। তারাই কর্মকর্তাদের জিম্মি করে কর্মবিরতি করছেন। আজ আমরা নিজেদের মধ্যে আলোচনা করেছি। আনুষ্ঠানিক সভা করে আমরাও আমাদের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করব।

কর কর্মচারী কল্যাণ পরিষদের সভাপতি আবদুস সামাদ জানান, তারাও সংগঠনের সদস্যদের নিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে একটি সভা করবেন। তারপর কর্মবিরতি চালিয়ে যাবেন কিনা সে ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবেন। বৃহস্পতিবার দুই ঘণ্টা কর্মবিরতির পর তারা কাজকর্ম শুরু করেছেন। দুপুরের পর থেকে প্রার্থীরাও তাদের রিটার্ন দাখিলের সার্টিফায়েড কপি পাচ্ছেন।
কর্মচারীদের কর্মবিরতির বিষয়ে জানতে চাইলে রাজশাহী কর অঞ্চলের কর কমিশনার মুহাম্মদ মফিজ উল্যা বলেন, আমি ঢাকা যাচ্ছি। সে কারণে অফিসে যাইনি। কর্মবিরতির বিষয়ে কিছু জানি না। আমাকে কেউ কিছু জানায়নি। তার কার্যালয়ে দালালচক্র নিয়ে আইনজীবীদের অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, কই আমি তো দালাল দেখি না। তারা দেখলে তো ধরে পুলিশে দিতে পারেন। আইনজীবীদের সঙ্গে নানা বিষয়ে কথা হয়। তারা আমাকে বলেননি।
স/অ