কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সহযোগিতায় নাটোর রেল স্টেশনে বিদ্যুৎ চুরির মহোৎসব

নিজস্ব প্রতিবেদক, নাটোর:
রেলের তেল চুরির কথা অনেকেরই জানা, কিন্তু তেল চুরি নয়, নাটোর রেল স্টেশনে চলছে বিদ্যুৎ চুরি মহোৎসব। স্টেশন এলাকার আশ-পাশের অন্তত শতাধিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, বাসা-বাড়িতে দিনের পর দিন চলছে রেলের অবৈধ সংযোগে। তবে স্টেশনের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সব কিছু জানলেও অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার কোন ব্যবস্থা নিচ্ছে না তারা। তাছাড়া মাসিক মাসোহারার বিনিময়ে রেলে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বিদ্যুৎ চুরিতে সহায়তায় করছে বলে অভিযোগ রয়েছে। তবে রেল কর্তৃপক্ষ অবৈধ সংযোগ বিচ্ছন্ন না করায় প্রতিমাসে হাজার হাজার টাকা গোচ্ছা যাচ্ছে সরকারের।

 
জানা যায়, নাটোর রেল স্টেশনের নিরাপত্তার জন্য চারদিকে লাইটের জন্য বিদ্যুৎ সংযোগ দেয় কর্তৃপক্ষ। কিন্তু এসব লাইন থেকে অবৈধ ভাবে সংযোগ নিয়ে বিদ্যুৎ ব্যবহার করছে স্টেশনের আশ-পাশে গড়ে উঠা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এমনকি বাসা বাড়ির মালিকরা। বিশেষ করে স্টেশনের সামনে ফুটপাতের দোকান, হোটেল, চামড়া আড়তের মালিকরা। এক পাশ থেকে আরেক পাশে প্রকাশ্যে লুস তারের মাধ্যমে কানেকশন নিয়ে দিনের পর দিন অবৈধ ভাবে রেলে বিদ্যুৎ চুরি করে ব্যবহার করছে।

 

অভিযোগ রয়েছে, চুরি পেছনে কারসাজি করছে স্টেশনের কিছু কর্মকর্তা এবং নিরাপত্তা কর্মীরা। নিয়মিত মাসোহারা নিয়ে অন্তত শতাধিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এবং বাসা-বাড়িতে অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ দিয়েছে তারা।

 
স্টেশন কর্তৃপক্ষ বলছে, নাটোর রেল স্টেশনে যে পরিমান বিদ্যুৎ খরচ হয়, সে দিক থেকে বিল আসার কথা ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা। কিন্তু তার চেয়ে অস্বাভাবিক বিল আসছে ৫০ থেকে ৭০হাজার টাকা পর্যন্ত। যার কারণে ধারনা করা হচ্ছে অবৈধ সংযোগ থাকায় প্রতিমাসে অস্বাভাবিক বিল আসছে নাটোর রেল স্টেশনের।

 

এদিকে নাটোর রেল স্টেশনে অস্বাভাবিক বিল আসার বিষয়টি নজরে আসলে অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্নর বিষয়ে পাকশি রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের কাছে চিঠি দিয়েছে নাটোর রেল স্টেশন মাস্টার।

 
নাটোর রেল স্টেশন মাস্টার খান মনিরুজ্জামান সিল্কসিটি নিউজকে বলেন, আমি এই স্টেশনে যোগদান করার পর থেকেই বিলের বিষষটি আমার কাছে অস্বাভাবিক মনে হয়েছে। অন্যান্য স্টেশনে যে বিল আসে নাটোর স্টেশনে তার চেয়ে দ্বিগুণ বিল আসছে।

 
তিনি আরো বলেন, স্টেশন এলাকার আশপাশে গড়ে উঠা দোকান পাট এবং বাসাবাড়ির মালিকরা রেল স্টেশনের বিদ্যুৎ চুরি করে তারা ব্যবহার করছে। যার কারনে স্টেশনের অস্বাভাবিক বিদ্যুৎ বিল আসছে। তাছাড়া অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার জন্য রেল কর্মকর্তাদের একাধিকবার চিঠি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তারা কোন ব্যবস্থা গ্রহন করেনি।

 
নাটোর রেল স্টেশনের সুপারভিশন কর্মকর্তা অশোক কুমার চক্রবর্তী বিদ্যুৎ চুরির বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, নাটোর স্টেশনে অবৈধ ভাবে বিদ্যুৎ সংযোগের বিষয়ে এখানকার কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সব কিছু জানলেও উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে লিখিত ভাবে জানিয়ে দায়িত্ব শেষ করেছে স্টেশন কর্তৃপক্ষ। কারণ অবৈধ সংযোগকারীরা স্থানীয়দের ছত্রছায়ায় প্রভাবশালী হওয়ায় অবৈধ সংযোগকারীদের কাছে অসহায়ত্ব স্টেশন কর্তৃপক্ষ। তবে কঠোর ভাবে আইনী ব্যবস্থা না নেওয়া হলে রেল বিভাগ লাখ লাখ টাকা রাজস্ব হারাবে বলে মন্তব্য এই কর্মকর্তার।

 
নাটোর পিডিবির নির্বাহী প্রকৌশলী মাহবুবুল আলম চৌধুরী সিল্কসিটি নিউজকে বলেন, রেল স্টেশনের ভিতরে যে লাইন গুলো টানা হয়েছে তা তামার তারের। যার কারনে হুক লাগিয়ে যে কেউ সহজেই বিদ্যুৎ ব্যবহার করতে পারছে। তবে রেল কর্তৃপক্ষ অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন বিষয়ে পিডিবির কাছে সহযোগিতা চাইলে তা করা হবে।

স/অ