করোনা ভ্যাকসিন নেয়ার পরও আক্রান্ত ১২, একজনের মৃত্যু

কিশোরগঞ্জের ভৈরবে করোনা ভ্যাকসিন নেয়ার পরও ১২ জন করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। এই ১২ জনের মধ্য থেকে শামিম আহমেদ (৬৭) নামে একজন মারা গেছেন।

এখন পর্যন্ত এ উপজেলায় করোনায় মৃত্যুর সংখ্যা ১৬ জন। করোনার এ চিত্র স্বাস্থ্য বিভাগকে নতুন করে ভাবনায় ফেলেছে। এ অবস্থায় করণীয় নিয়ে তারা দফায় দফায় সভা করছেন।

স্বাস্থ্য বিভাগ জানায়, করোনার জন্য কিশোরগঞ্জ শুরু থেকেই হটস্পট জেলা। আক্রান্ত ও মৃত্যুর দিক দিয়ে জেলার শীর্ষে ভৈরব। তবে জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহ থেকে পরিস্থিতি উন্নতির দিকে যেতে শুরু করে।

ভ্যাকসিন গ্রহণ ও নিবন্ধন হার নিয়ে স্বাস্থ্য বিভাগ খুশি থাকলেও ১২ জনের আক্রান্তের তথ্য অস্বস্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ভ্যাকসিন নিয়ে মারা যাওয়া শামিম আহমেদ পৌর শহরের ভৈরবপুর এলাকার বাসিন্দা ছিলেন।

আগস্টে এসে পরিস্থিতি প্রায় নিয়ন্ত্রণে চলে আসে। ৪ হাজার ৯৮৬ জনের নমুনা থেকে এখন পর্যন্ত সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে ৮২৬ জনের। মঙ্গলবার পর্যন্ত ভ্যাকসিন নিয়েছেন পাঁচ হাজার ৪৬১ জন।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, শামিম ভ্যাকসিন নেন ৮ ফেব্রুয়ারি। ১৪ ফেব্রুয়ারি থেকে তিনি অসুস্থবোধ করেন এবং শরীরের উপসর্গ দৃশ্যমান হয়। ওই দিনই তিনি কিশোরগঞ্জের সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হন। সেখানে পরীক্ষা হয় এবং ১৫ ফেব্রুয়ারি করোনা শনাক্ত হয়। ১৯ ফেব্রুয়ারি তার অবস্থার অবনতি ঘটলে তাকে ঢাকার কুর্মিটোলা হাসপাতালে পাঠানো হয়। পরদিন ওই হাসপাতালেই তিনি মারা যান।

ভ্যাকসিন নেওয়ার পর ৬০ বছর বয়সী এক ব্যক্তি দ্বিতীয়বারের মতো আক্রান্ত হন। প্রথমবার আক্রান্ত হওয়ার পর সুস্থ হন। পরে তিনি এসে ভ্যাকসিন নেন। ভ্যাকসিন নেওয়ার কয়েক দিন পর ফের আক্রান্ত হন।

এদিকে ভ্যাকসিন নেওয়ার পরও মৃত্যু এবং আক্রান্ত হওয়ার তথ্য জানার পর এলাকার নতুন করে করোনা ভীতি ছড়িয়ে পড়েছে। বিশেষ করে আক্রান্তের হার বেড়ে চলায় ভীতি কাজ করছে বেশি।

হাসপাতালের দেওয়া তথ্যমতে, সর্বশেষ এক সপ্তাহে নমুনা দিয়েছেন ১০৬ জন। এর মধ্যে আক্রান্ত সংখ্যা ১৯। অথচ এক মাস আগেও বেশিরভাগ দিনে আক্রান্ত সংখ্যা থাকত শূন্য। নমুনা দিতে আসা লোকজনের সংখ্যা ছিল খুবই কম।

স্থানীয়দের ধারণা ভৈরবে হঠাৎ করোনা মাথাচাড়া দেয়ার পেছনে মূল কারণ নির্বাচন। এক মাস ধরে ভৈরবে নির্বাচনী ডামাডোল চলছে। প্রতিদিন অসংখ্য মিছিল সড়কে দৃশ্যমান হচ্ছে। মিছিলে অংশ নেওয়া কারও মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি মানার সামান্য উপলব্ধি লক্ষ্য করা যায়নি। স্বাস্থ্য অনুসরণে প্রশাসনের ভূমিকা ছিল কেবলই খাতাকলমে।

ভৈরবের কোভিড-১৯ পরিস্থিতির সার্বিক চিত্র সম্পর্কে জানতে চাওয়া হয় উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মো. খোরশেদ আলমের কাছে। তিনি উপজেলা করোনা প্রতিরোধ কমিটির সদস্য সচিব। বর্তমান চিত্রে সবচেয়ে হতাশ তিনি।

খোরশেদ আলম বলেন, প্রথম কথা হলো ভ্যাকসিন নেওয়ার তিন সপ্তাহ পর শরীরে প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি হয়। সেটিও ৫২ থেকে ৬৫ ভাগ। বুস্টার ডোজ প্রয়োগের পর সেটি গিয়ে দাঁড়ায় ৯৫ ভাগ। আমাদের সমস্যা হলো টিকা গ্রহণ করার পর ব্যক্তিটি নিজেকে শতভাগ নিরাপদ ভেবে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যাচ্ছেন। ফলে যা হওয়ার তাই হচ্ছে।

এ মুহূর্তে তার পরামর্শ হলো- অবশ্যই সবাই যেন শতভাগ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলে এবং টিকা গ্রহণে আগ্রহী হয়। বিশেষ করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরামর্শ অনুযায়ী অন্তত এক বছর যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে চলতে হবে।

দুঃখ করে খোরশেদ আলম জানালেন, এখন পর্যন্ত ভৈরবে টিকা নেওয়ার জন্য নিবন্ধিত হয়েছেন সাত হাজার ৮৬১ জন। এর মধ্যে এখনো দুই হাজার ৪০০ জন টিকা নিতে কেন্দ্রমুখী হননি।

 

সুত্রঃ যুগান্তর