করোনা পরীক্ষায় ধীরগতি, পরিস্থিতির অবনতি ঘটাতে পারে

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

জ্বর, সর্দি, কাশি ও গলাব্যথাসহ করোনাভাইরাসের নানা উপসর্গ নিয়ে থাকা রোগীদের পরীক্ষায় যেখানে সারা বিশ্বে খুব দ্রুততার সঙ্গে কাজ করা হচ্ছে, স্বাস্থ্যসেবা তথা করোনা পরীক্ষার বিশেষ ভ্যান নিয়ে ডাক্তারদের টিম রোগীর বাড়িতে হাজির হচ্ছে, সেখানে আমাদের অবস্থা একেবারে বিপরীত।

আমাদের সক্ষমতা আছে দৈনিক সাড়ে পাঁচ হাজার মানুষের টেস্ট করানোর; কিন্তু সেখানে আমরা করাচ্ছি হাজারেরও কম। অনেকটা ‘কম টেস্ট কম আক্রান্ত’ নীতি যেন এখনও কার্যকর রয়ে গেছে।

মহামারীর ক্ষেত্রে যথাসম্ভব বেশি মানুষকে পরীক্ষা করে ভাইরাসের উপস্থিতি পাওয়া গেলে তাদের চিকিৎসা করানো ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার মধ্যে সবার কল্যাণ নিহিত। তারপরও আমাদের দেশে কেন কম পরীক্ষা করা হচ্ছে, তা আমাদের বোধগম্য নয়।

এছাড়া নমুনা সংগ্রহকারীদের পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ না থাকা, ল্যাবগুলোর সক্ষমতা কাজে না লাগানো ও নমুনা সংগ্রহে গলদের মতো সমস্যাও রয়েছে। বলার অপেক্ষা রাখে না, পর্যাপ্ত পরীক্ষা ছাড়া করোনার ভয়াবহতা নিরূপণ করা সম্ভব নয়।

এ অবস্থায় সারা দেশে বুথ করে, মানুষের ঘরে ঘরে গিয়ে প্রয়োজনে পরীক্ষা করাতে হবে। অন্যথায় কম আক্রান্ত বলে আমরা তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলতে থাকব; কিন্তু পরিস্থিতি চলে যেতে পারে নিয়ন্ত্রণের বাইরে।

অবশ্য কেবল আমাদের দেশেই নয়, বিশ্বের অনেক দেশেই কম সংখ্যক পরীক্ষা হচ্ছে। আক্রান্ত বেশিরভাগ মানুষই হয়তো পরীক্ষার বাইরে থেকে যাচ্ছে। হতে পারে সেটা নিজেদের সক্ষমতার অভাব ও নানা সীমাবদ্ধতার কারণে।

এর প্রমাণ পাওয়া যায় বিভিন্ন অনুসন্ধান ও গবেষণার তথ্য থেকে, যেগুলোতে বলা হচ্ছে বিশ্বজুড়ে মোট আক্রান্তের মাত্র ৬ থেকে ৮ শতাংশের তথ্য আসছে আমাদের কাছে। প্রকৃত আক্রান্ত কোটি ছাড়িয়ে যাবে।

আমরা মনে করি, এসব গবেষণার যথার্থতা নিয়ে প্রশ্ন থাকলেও আমাদের দেশসহ অনেক দেশেই যে প্রকৃত আক্রান্তের সংখ্যা বেশি হতে পারে তাতে সন্দেহ নেই।

এ অবস্থায় উপসর্গ সামান্য হোক বা বেশি, করোনার উপসর্গ দেখা দিলেই বা যে কেউ পরীক্ষা করতে চাইলেই তাকে পরীক্ষা করে তিনি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত কিনা, তা নিশ্চিত হওয়া দরকার। দেশের স্বার্থে, মহামারী নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে দ্রুত পরীক্ষার গতি বাড়ানোর বিকল্প নেই।

মহামারী, ভাইরাস বা যে কোনো রোগে আক্রান্ত হওয়া স্বাভাবিক বিষয়। যে কেউ যে কোনো সময় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হতে পারেন।

ফলে সরকারের যেমন পরীক্ষা বাড়িয়ে রোগী চিহ্নিত করে প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে এগিয়ে আসা দরকার, তেমনি মানুষেরও উচিত নিজে সচেতন হয়ে পরীক্ষায় এগিয়ে আসা, করোনার উপসর্গ দেখা দিলে সেটি না লুকানো।

দেখা যাচ্ছে, সচেতনতার অভাবে অনেকে উপসর্গধারী ব্যক্তির নমুনা সংগ্রহ করা মাত্রই তাকে রোগী বানিয়ে অপপ্রচার চালাচ্ছে। মনে রাখতে হবে, এতে করে কারোরই ক্ষতির বদলে কোনো লাভ হবে না।

যেখানে উন্নত বিশ্বের দেশগুলো করোনাভাইরাসের রোগীদের চিকিৎসায় হিমশিম খাচ্ছে, সেখানে ভাইরাসটি বেশি হারে ছড়িয়ে পড়লে আমাদের মতো দুর্বল স্বাস্থ্যব্যবস্থা, দুর্বল অর্থনীতি ও ঘনবসতির দেশের অবস্থা যে কেমন হবে, তা সহজেই অনুমেয়।

আমাদের উচিত বেশি বেশি পরীক্ষা, কঠোর লকডাউন ও করোনাভাইরাস প্রতিরোধের যতগুলো উপায় আছে সবগুলোকে দৃঢ়ভাবে কাজে লাগানোর মাধ্যমে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখার সর্বোচ্চ চেষ্টা করা।