করোনায় করণিকদের করণীয় ও সময়ের আমরা

করোনা সংকটে সম্মুখসারির যোদ্ধা ডা. মঈনকে হারালাম! হারিয়েছি অনেকগুলো তাজা প্রাণ। এ ব্যথা শব্দে প্রকাশের নয়! করোনারোগী পাঁচ হাজার ছাড়িয়েছে। সামনে কী ভয়াবহতা আসছে আল্লাহই জানেন! লিখব না ভেবেছিলাম। করোনার দেশের মূল করণিদের সময়মতো করণীয় নিয়ে ভাবছি। দৈনিক, অনলাইন, টিভি, সামাজিক অ্যাপস যেটাই খুলি করোনাময়। দেশে-বিদেশে মৃত, আক্রান্ত বা সুস্থতার খবর।

আমাদের আজকের অবস্থা হয়তো ঠেকানো যেত। অনেক ভালো অবস্থানে থাকতে পারতাম! কোরিয়া, সুইডেন, তাইওয়ানের মতো বহু দেশ করেছে। ওদের জনগণ সচেতন আগে হয়েছে। প্রতিটি রোগী চিহ্নিত ও বিচ্ছিন্ন করে সামাজিক সংক্রমণ ঠেকিয়েছে। আমাদের দেশেও ভালোভাবে শুরু হয়েছিল। ধারাবাহিকতা থাকেনি। সাধারণ মানুষকে সম্পৃক্ত করা যায়নি। গুজবের সংবাদ পড়ে সচেতনতা বা করোনা থেকে বাঁচার উপায় জানা যায় না। লকডাউন, আইসোলেশন, কোয়ারেন্টিন, হাঁচি-কাশির ড্রপলেটসের ভয়াবহতা, পিপিই, স্যানিটাইজার, ৩ ফুট দূরত্ব, ভাইরাস চারদিন গলায় থাকা ইত্যাদি আমরা ৮ মার্চের পর জেনেছি।

আমাদের গণমাধ্যমে অনেক সময়ই করোনার ভয়াবহতার চেয়ে গুজবের সংবাদ অগ্রাধিকার পায়। গুগলে ফেব্রুয়ারি মাসে করোনা সংক্রান্ত বাংলা সংবাদগুলো এমনই। গুজবের শিরোনাম ছাড়া বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা নির্দেশিত করোনার মূল সতর্কতা ও সচেতনতা উপেক্ষিতই থাকে। জাতির দুর্যোগে প্রতিটি নাগরিক দেশের সেবক। মহাদুর্যোগে সে দায়িত্ব বেড়ে যায়। জ্ঞানে মানে বড় হলে তাঁর দায়িত্ব আরো বেশি। বিবেকবান গণমাধ্যমসেবী ও কলমধারীগণ আরো বড়। আমেরিকান লেখক ও গণমাধ্যম আলোচক ট্রিসিয়া হ্যারিস বলেছেন, ‘The mass media, their influence is everywhere. They tell us what to do, what to think, and they tell us to think about ourselves all of the time’.

সরকারের পক্ষ থেকেও করোনা নিবারণে কাস্টম হাউস বেনপোলের পদক্ষেপের প্রশংসা করা হয়েছে। সরকারের একার পক্ষে এমন দুর্যোগ মোকাবেলা সম্ভব নয় বলে মিডিয়ার ভূমিকার কথাও বলা হয়। মিডিয়াকে পজিটিভ সংবাদ পরিবেশনে দায়িত্বশীল হওয়ার কথা বলছে সরকার। কাস্টমস ও ভ্যাট বিভাগে সিকি শতাব্দির কাজের অভিজ্ঞতা নিয়ে আমরা সরকারের নগণ্য কর্মী। রাষ্ট্রের সংবিধান আমাকে নির্দেশ দেয় ‘সকল সময়ে জনগণের সেবা করিবার চেষ্টা করা প্রজাতন্ত্রের দায়িত্বে নিয়োজিত প্রত্যেক ব্যক্তির কর্তব্য’ বাংলাদেশ সংবিধান: অনুচ্ছেদ ২১(২)। সেই দায়িত্ববোধ থেকে বেনাপোল কাস্টমস টিম নিয়ে করোনা দুর্যোগ প্রাদুর্ভাবের প্রথম থেকে লড়ছি। আমরা  নিজেদের তাগিদে কাজ করি। প্রয়োজনে করি। দেশ ও দেশের মানুষকে ভালোবেসে করি। মূল্যায়ন বা পুরস্কারের আশায় নয়। সম্প্রতি করোনা নিয়ে কাজের মূল্যায়ন প্রসঙ্গ এসেছে।

গত ২৯ জানুয়ারির সচেতনতা সেমিনার ও ২০ ফেব্রুয়ারি কথিত করোনা রোগী আটক নিয়ে সময়ে এখন ইতিবাচক আলোচনা হচ্ছে। অনেক বিজ্ঞজনের সাথে উদার সংবাদসেবীরা এখন বলছেন, ‘আপনারা যশোর বেনাপোলকে বাঁচিয়েছেন! কিছু মানুষ ও মিডিয়া তখন বুঝে বা না বুঝেই আপনাদের ভিলেন বানিয়েছিল! আসলে দেশব্যাপী কাজ করার ওটাই উপযুক্ত সময় ছিল।’ অথচ ২৯ জানুয়ারি করোনা সেমিনার নিয়ে অনেক উপহাস হয়েছে। গণমাধ্যমের অনেকেই সেখানে ছিলেন। সেমিনারের সংবাদও গুরুত্ব পায়নি। বলেছেন, এত আগে তোড়জোড় কেন! এত প্রচারের দরকার কি! করোনা  আমেরিকা-ইউরোপের রোগ! আমাদের দেশে আসবে না! তাচ্ছিল্যের সুরে অনেকেই বলেছেন, আমরা প্যানিক তৈরি করছি, ক্রেডিট নেয়ার জন্য সেমিনার করেছি, বেহুদা প্রচারে নেমেছি।

দেশের সীমান্তে আমাদের অবস্থান বলেই সতর্কতা জরুরি ছিল। যেখানে চেকপোস্ট দিয়ে দিনে দশ হাজার মানুষের গমনা-গমন। ভাইরাসটির মারাত্মক সংক্রমণতা নিয়ে সে সময় কিছু পড়াশোনা করেছিলাম। জেলা ও উপজেলা স্বাস্থ্য দপ্তরের রাজি করিয়ে আমাদের টিম অক্লান্ত পরিশ্রমে মাত্র দুদিনে বৃহৎ সেমিনারের আয়োজন করেছিল। সরকারি-বেসরকারি সংস্থার দু’শ সদস্য করোনা সম্বন্ধে ধারণা নেন। যশোর-মনিরামপুরে একজন স্বাস্থ্যকর্মীর করোনা ধরা পড়ে। আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে ৪১ কিমি দূরে বেনাপোলে। আমার লোকজন ছাড়াও বেশ ক’জন সংবাদকর্মী ফোনে উদ্বিগ্ন। যেন তাদের করোনা ধাওয়া করছে। আমি বাঁচার উপায় বলে দেই! হয়তো আস্থা থেকেই কোনো কোনো সংবাদকর্মী পিপিই চাইলেন। মনিরাম পুরের আতঙ্ক বেনাপোলে কেন! মানুষ এখন ‘করোনা’ বোঝে। ভয়াবহতা জানে। আমাদের গণমাধ্যম এখানে সফল। কারণ ইতোমধ্যে তারাও করোনা ভয়াবহতা নিজেরা বুঝেছে। সবাই আড়াই মাস আগে বুঝলে জাতির জন্য অনেক ভালো হতো।

গত ২০ ফেব্রুয়ারি ভারত থেকে লিখিতভাবে পুশব্যাক করা করোনারোগীর বিষয়ে বেনাপোল কাস্টম হাউস সতর্ক পদক্ষেপ নেয়। পরে তার করোনা প্রমাণিত হয়নি। আজকে যদি ভারত লিখিত দিয়ে একজন করোনা রোগী বেনাপোল সীমান্তে পাঠায়, আমরা কী করব! অবশ্যই সেদিনের চেয়ে বেশি সতর্কতা নেব। কিন্তু আমরা সংবাদমাধ্যমকে বোঝাতে ব্যর্থ হলাম।

স্থানীয় সাংবাদিকরা বেনাপোল ভালো চেনেন। ঝুঁকি কোথায় বুঝেছিলেন। তাঁরা বাস্তবতা তুলে ধরতে চাইলেন। স্থানীয়দের এড়িয়ে ঢাকার অতিউৎসাহীরা এগিয়ে গেলেন। যার কাজ সে না করলে যেমন হয়। কয়েকজন রিপোর্টার আমাদের সতর্কতার ভুল ব্যাখ্যা করলেন। সকল গণমাধ্যম বড় শিরোনামে গুজব ছড়ানোর অপবাদ দিলেন। অতি ধীমান কয়েকজন আসামির  কাঠগড়ায় দিলেন। চাকরিচ্যুতির সুপারিশও করলেন। বেনপোলবাসীর সাথে দেশের মানুষও ভুল বার্তা পেল। সবাই ভেবে নিলেন, করোনা চীনে তৈরি, আমেরিকা ইউরোপের জন্য! একটি জাতীয় দৈনিকের প্রিন্ট ও অনলাইনে আমাদের বিরুদ্ধে কয়েকটি রিপোর্ট গেলো। গুজব ছড়ানোর গুরুতর অভিযোগ। এক জাতীয় দৈনিকের প্রতিবেদক আমার সাথে কথাও বলেননি। প্রথম সারির বা অনলাইন পোর্টালগুলোর কথা না বললাম। পরে ওই জাতীয় দৈনিক থেকে বলা হলো এসব আসলে স্থানীয় প্রতিনিধির অর্বাচীনতা! আর স্থানীয় প্রতিনিধি বলেন, ঢাকা অফিসের অতিউৎসাহে এমনটা হয়েছে।

অনেকের আক্রোশ দেখে মনে হয়েছে আমি যেন যুদ্ধাপরাধী! কমিশনার পদে এমন নাদান তাঁরা দেখেননি। টেলিফোনে শিক্ষণীয় অশোভন শব্দাগার শেষ করে মনের মাধুরী মিশিয়ে লিখলেন। পরে শুনেছি দুরাচারের কারণে তিনি ওই দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি পেয়ে কোয়ারেন্টিনে গেছেন। আমরা শিখেছি অনেক হারিয়ে। শিখলাম যখন ছয় লক্ষাধিক বিদেশ ফেরত মানুষ ষোল কোটিতে মিশে গেলো। ৮ মার্চের পরও লকডাউন, আইসোলেশন, কোয়ারেন্টিন বুঝতে কয়েক সপ্তাহ লেগে গেল। আমাদের পাঠকদের আগে জানাতে পারলে লকডাউনে মানুষ ড্রামে করে লুকিয়ে পালানো, কুরিয়ারের গাড়ি ভেতরে করে যাওয়া, গার্মেটস খুলে দিয়ে লক্ষ শ্রমিক রাস্তায় নামিয়ে দেওয়া, ভারতে তাবলীগ জামাতের জমায়তে বাঙালির মৃত্যু, প্রবাসীদের দুসপ্তাহ লুকিয়ে রাখা কিংবা ব্রাহ্মনবাড়িয়ায় হাজার মানুষের মারামারির ঘটনা ঘটত না। এখন হলে কি আমরা করতাম! ভারতের সনাক্ত করা সম্ভাব্য করোনা রোগী আমরা লুকাবো? চূড়ান্ত পরীক্ষায় তার করোনা ধরা পড়ুক বা নাপড়ুক। করোনা নিয়ে আমরা ইতোমধ্যে দেশি-বিদেশি সংবাদমাধ্যম থেকে অনেক কিছু জেনেছি। সীমান্তে ফেরত পাঠানো করোনা সন্ধিগ্ধ ব্যক্তিকে সাবধানে গ্রহণ ও তার কোয়ারেন্টিন কিভাবে নিশ্চিত করা হবে তা জেনে গেছি। পালানো ঠেকাতে পাহারা বসাতে হবে। যেমন বাগ-এ-জান্নাতে কোয়ারেন্টিন সেন্টার না হওয়ার জন্য মিডিয়াসহ পুরো বেনাপোল ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সফলও হয়েছে।

সেদিনের ঘটনা সংক্ষেপে বলা দরকার। ২০ ফেব্রুয়ারি, ২০২০। ভারতীয় রেলের সিনিয়র গার্ড কৃষ্ণেন্দু বোস নিজে আসেন। পুশব্যাক করা একজন বাংলাদেশিকে করোনা রোগী বলে লিখিত দিয়ে কাস্টমসের হাতে তুলে দেন। তার সাম্প্রতিক অতীতে চীন ভ্রমণের বৃত্তান্ত ছিল। আমরা আরো সাবধানী হলাম। বেনপোলের পনেরো হাজার মানুষের সংক্রমণ নিরপত্তায় উদ্বিগ্ন ছিলাম। ইতোমধ্য করেনার ভয়াবহ সংক্রমণতা নিয়ে কয়েকটা নিবন্ধ পড়েছিলাম। আমরা বেশি সতর্ক ছিলাম! নিজেদের স্বার্থেই। সেমিনার জ্ঞান ও এ নিয়ে পড়াশোনার কারণেও। বহির্দেশীয় সরকারি প্রতিনিধির সশরীরে লিখিত দেয়া, দেশের সরকারি বিভাগ উপেক্ষা করে না। আমরাও পারিনি। সীমান্তের দু’দেশের প্রথাগত শিষ্টাচারের ঐতিহ্যও বিবেচ্য। আমরা তাৎক্ষণিক ফেসবুকে যাত্রীর পরিচয়সহ পোস্ট দিয়ে সবাইকে সতর্ক করলাম। তখনো তিনি করোনা রোগী কিনা স্বাস্থ্যকর্মীরা নিশ্চিত ছিলেন না। যশোরে করোনা পরীক্ষার ব্যবস্থা ছিল না। মাননীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রীও একথা বলেছেন। তাঁরা ঢাকায় কথা বলে তিনি করোনামুক্ত লিখিত সনদ দেন। আমরা সেটি সবাইকে জানিয়ে দিয়ে পোস্ট দেয়ার এক ঘণ্টারও কম সময়ে আগের পোস্ট মুছে নতুন পোস্ট দেই।

বিশ্বব্যাপী প্রথম করোনা কেস ধরা পড়ে ২০ ফেব্রুয়ারির আগের দিন পর্যন্ত। যুক্তরাষ্ট্রে ১ জানুয়ারি, ইতালি ৩১ জানুয়ারি, স্পেন ১ ফেব্রুয়ারি, যুক্তরাজ্য ৩১ জানুয়ারি, জার্মানি ২৭ জানুয়ারি, ফ্রান্স ২৪ জানুয়ারি ও ভারতে ৩০ জানুয়ারি।

করোনা দুর্যোগে বেনাপোল কাস্টমসের কার্যক্রম:

জানুয়ারি
তারিখ ২৯ : ২০০ অংশীজন নিয়ে কাস্টমস ক্লাবে সচেতনতা সভা;  প্রস্তুতি তিন দিন আগে শুরু।
৩০ : কাস্টম হাউসে মাস্ক ও হ্যান্ডগ্লাভস বিতরণ।
৩০ : বিভিন্ন গণমাধ্যমে করণীয় ও সেমিনার খবর প্রচার।
৩১ : অভ্যন্তরীণ সচেতনতা ও প্রায়োগিক কার্যক্রম।
৩১ : পরিচ্ছন্নতা ও নিবারক সামগ্রি সংগ্রহ কার্যক্রম অব্যাহত।

ফেব্রুয়ারি 
তারিখ ২০ : বেনাপোল রেলস্টেশনে ভারত ফেরত করোনা সন্দেহ যাত্রী নিয়ে সতকর্তা কার্যক্রম।
২২ : করোনার ভয়াবহতা নিয়ে সিএন্ডএফ নেতৃবৃন্দের সাথে আলোচনা।
২১ :  বেনাপোল কাস্টম হাউস ও কমিশনারের ফেসবুক পেইজে লাগাতার প্রচারণা।
২৫ : ভাইভার গ্রুপে ২০০+ কর্মকর্তা কর্মচারিকে সচেতনতায় উদ্বুদ্ধকরণ।

মার্চ 
তারিখ ১ : হ্যান্ড স্যানিটাইজার, গ্লোবাল ও মাস্ক সংগ্রহ কার্যক্রম চলমান।
১০ : চেকপোস্টে যাত্রীদের মধ্যে হ্যান্ড স্যানিটাইজার, মাস্ক, টিস্যু বাক্স বিতরণ।
১০ : চেকপোস্টে কাস্টমস, বন্দর, পুলিশ, কর্মকর্তাদের মধ্যেও বিতরণ।
১০ : কাস্টম হাউসের মূল গেইটে হাত ধোয়ার ব্যবস্থাকরণ।
১০ : কাস্টম হাউসের ভেতরে প্রবেশকারী প্রত্যেকের শরীরের তাপমাত্রা মাপার ব্যবস্থা।
১১ : সচেতনতার জন্য বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রচার।
১১ : করোনা সচেতনতায় দৃশ্যমান স্থানে পোস্টার লিফলেট স্থাপন।
১৯ : সীমান্তে কার্গো শাখায় পানির লাইনসহ বেসিন স্থাপন।
১৯ : সীমান্ত ড্রাইভার ও স্টাফদের হাত ধোয়া বাধ্যতামূলেককরণ।
২০ : কাস্টম হাউসের এন্ট্রি শাখায় সিএন্ডএফ কর্মচারীদের জন্য কল ও বেসিন স্থাপন।
২২ : কাস্টমস মূলগেট, শুল্কায়ন গ্রুপ ও কিপয়েন্টে হ্যান্ড স্যানিটাইজার সংরক্ষণ।
২২ : করোনা সচেতনতায় কমিশনারের উদ্যোগে বেনাপোলে বিভিন্ন স্থানে মাইকিং।
২২ : বিশেষ উদ্যোগে পৌরমেয়রের সহায়তায় কাস্টম হাউস চত্ত্বরে করোনা জীবানুনাশর ওষুধ স্প্রেকরণ।
২৩ : মসজিদে কমিশনারের বিশেষ সচেতনতা বক্তব্য, আলোচনা ও দোয়া।
২৪ : কমিশনারের উদ্যোগে এ দুর্যোগে দু:স্থ ও গরীব কর্মচারীদের জন্য তহবিল গঠন।
২৪ : চেকপোস্টে প্রবেশেচ্ছু ভারতীয় ছাত্রদের খাবার বিতরণ।
২৪ মার্চ: সিএন্ডএফ নেতৃবৃন্দের মাধ্যমে ভারতীয় ছাত্রদের মধ্যে মাস্ক বিতরণ।
২৫ : ফুট, হ্যাং ও লং ব্যানার দিয়ে প্রচারণা।
২৬ : কাস্টম হাউ ও কমিশনারের ফেসবুক পেইজ অব্যাহত সচেতনতা কার্যক্রম।
২৮ : দুস্থ সিপাই, মালি, বাবুর্চি, বলবয়, সেবক, সহায়কদের নগদ সহায়তা।
২৯ : গ্রামে দৈনিক আয় নির্ভর ৬২টি পরিবারের মধ্য নগদ অর্থ বিতরণ।
৩০ : চেকপোস্ট ও কার্গোতে সরাসরি স্পর্শে সম্পৃক্ত কর্মকর্তাদের জন্য পিপিই সংগ্রহ।

এপ্রিল
তারিখ  ১ : সামাজিক দূরত্ব রক্ষা করে বেনাপোল বন্দরের দৈনিক আয়নির্ভর ও কর্মহীন ১৫০ পরিবারে ‘ফুড ব্যাগ’ বিতরণ।
৩ : অসুস্থ ও রোগীর হাসপাতাল বিল সহায়তা।
৪ : বেনাপোল সংবাদকর্মীদের ত্রাণে সহায়তা।
৮ : বিশেষ জরীপের মাধ্যমে বাছাইকৃত ১৭০টি প্রকৃত দুস্থ পরিবারের বাড়িতে ‘ফুড ব্যাগ, পৌছে দেওয়া।
১৩ : কাস্টম হাউসের ফটকে সবার জন্য ইনফ্রারেড থার্মোমিটার বাধ্যতামূলক ও বহিরাগত প্রবেশ সীমিতকরণে রেজিস্টার চালু।
১৪ : মূল ফটকে ব্লিচিং পাউডার মেশানো পানির ট্রেতে জুতার তলা ভিজিয়ে ভেতরে প্রবেশ।
১৬ : আগেও বলেছি, করোনা বিশ্বময় ভয়াবহ হতে যাচ্ছে, বিশ্ব মিডিয়ার সাথে আমাদের মিডিয়াও জানতো। প্রথম থেকেই জাতির কাছে করোনার সম্ভাব্য ভয়াবহতা তুলে ধরতে পারত। মুক্ত মনে আমাদের ভুল শুধরানোর পথ দেখাতে পারতেন। সবাই মিলে ভালো কিছু করা যেত। যেমন এখন হচ্ছে। মাননীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রীও বলেছেন, সরকারের একার পক্ষে মহামারী সামলানো সম্ভব নয়। মিডিয়াসহ সকলকে দায়িত্বশীল হতে বলেছেন। আমাদের গণসচেতনতা সময়মতো হয়নি। একজন নিজে শুরু করলেও পাশের জনকে বোঝাতে পারেনি। আমাদের গণমাধ্যম সময়মতো মাঠে নামেনি।
১৭ : দুএকজন প্রশিক্ষণহীন, মানহীন অনভিজ্ঞ সংবাদকর্মীর অপরিণাদর্শী লেখনির দায়ভারও সমগ্র গণমাধ্যমের নয়, আমরা জানি। কিছু ভুলের মাশুলও হয়না। এ অপরিণামদর্শিতায় মানুষ বার্তা পেল, এদেশে কখনো করোনা আসবে না। সাবধান হবার দরকার নেই। বেনাপোলের অনেকে তাদের দ্বারা দিক্ষিত হয়েছিল।
অনুযোগের জন্য নয়। আগামিতে আমাদের ও কলম সেনাপতিদের সঠিক অবস্থান খোঁজার জন্য আমার এ লেখা। মাননীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রীও সে কথাই বলেছেন।
১৮ : আজ করোনা রোগী নিয়ে করণীয় ও সতর্কতা আমরা জানি! সরকারী অসরকারী ব্যক্তি, সংস্থা ও মিডিয়ার কর্মকান্ড স্পষ্ট! সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করছেন। ডাক্তার, নার্স, পুলিশ, সেনাবাহিনী, প্রশাসন ও জরুরী সেবাদানকারীরা আজকের মুক্তিযাদ্ধা। আমাদের গণমাধ্যম শক্তিশালী। কিছু ক্ষেত্রে গর্বেরও। যেমন সন্ত্রাস দমনে। মাদক প্রতিরোধে। তাদের মাধ্যমে পাঠকরা আজকে জানছে বলেই পরিবার থেকে খবর দিয়ে করোনা রোগীর পরীক্ষা করাচ্ছে। আজ পলােযন ঠেকাতে, লকডাউন মানতে, গার্মেন্টস শ্রমিক বের নাকরতে, আইসোলেশন সচেতনতায় সবার সাথে গণমাধ্যমের সক্রিয় অংশগ্রহণ দৃশ্যমান।
১৯ : আমরা পাঠক। পাঠকবান্ধব সত্যনির্ভর গণমাধ্যম পাঠকের প্রত্যাশা। মানসম্মত সংবাদ কর্মী এর মুখ্য অনুষঙ্গ। ট্রিসিয়া হ্যারিসের সুরে বলতে হয়, সংবাদ হবে সবার। উদার, সর্বগামী ও সবসময়ের। গণমানুষের কল্যাণের পথিকৃত। সংবাদে নিরপেক্ষতা ন্যায়ানুগতা থাকবে। ব্যক্তির চেয়ে সমাজ প্রাধান্য পাবে। সংবাদ মানুষের ভাবনা ও করণীয় বলবে।
২০ : করোনার ভয়াবহতা অনুমান করা যায়নি। সময়ের আমরা সময়ের সাথে থাকতে পারনি। কভিড-১৯ উন্নত পশ্চিমাদের ছাড় দেয়নি। পুরো পৃথিবীকে বুঝিয়েছে, সময় গেলে সাধন হয় না। দেরিতে হলেও নাহবার চেয়ে ভালো। সামনে পনের দিন কঠিন সময়! যার যা আছে তা নিয়েই স্বাস্থ্যবিধি মানি। কষ্ট করে ঘরে থাকি।

মাননীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে কৃতজ্ঞতা! তিনি আমাদেরকে মূল্যায়ন ও পুরস্কারের কথা বলেছেন। আপনার এ স্বীকৃতিই আমাদের প্রাপ্তি ও অনুপ্রেরণা।

কত দিন পৃথিবীতে আছি জানি না! করোনা বাঁচার সব হিসেব বদলে দিয়েছে। সময় গড়িয়ে জীবন যেন আরো অনিশ্চিত! যতোক্ষন বেঁচে আছি যেন দেশ ও মানুষের কাজে আসি, দেশের সংবিধান সমুন্নত রাখতে পারি, এ দোয়া চাই।

লেখক: কমিশনার অব কাস্টমস, কাস্টম হাউস, বেনাপোল

 

সুত্রঃ কালের কণ্ঠ