করোনায় অনলাইনে দায়সারা চিকিৎসাসেবা দিচ্ছেন রাজশাহীর জ্যেষ্ঠ চিকিৎসকরা

নিজস্ব প্রতিবেদক:


করোনা আতঙ্কে অনলাইনে দায়সারা প্রাইভেট প্রেক্টিস করেছেন রাজশাহীর জ্যেষ্ঠ চিকিৎসকরা। এ নিয়ে রোগীদের মাঝে চরম অসন্তোষ সৃষ্টি হলেও বাধ্য হয়েই সেই চিকিৎসায় নিতে হচ্ছে। রাজশাহীর ইসলামী ব্যাংক হাসপাতাল, পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টার, জমজম হাসপাতালসহ বিভিন্ন ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিখ সেন্টারে বসে জ্যেষ্ঠ চিকিৎসকরা প্রাইভেট প্রেক্টিস করছেন অনলাইনে। বাইরে চিকিৎসকদের এটেন্ডেন্টদের বসিয়ে রেখে চেম্বারের ভিতরে বা বাড়িতে বসে নললাইনে রোগী দেখা হচ্ছে। আর এই চিকিৎসাকে প্রবাদ বাক্যের ‘নাই মামার চেয়ে কানা মামা ভালো’ বলে উল্লেখ করেছেন বিশেষজ্ঞরা।

সরেজমিন গতকাল রবিবার বিকেলে রাজশাহীর পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ঘুরে দেখা গেছে, কিডনী বিশেষজ্ঞ মনোয়ারুল ইসলামের চেম্বারে সামনে রোগীদের ভিড়। বাইরে বসে তাঁর এটেন্ডেন্ট রোগীর নিকট থেকে ৮০০ টাকা ফি নিয়ে ওয়েব ক্যামেরার সামনে বসিয়ে রেখে চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলাচ্ছেন রোগীকে। কোনো পরীক্ষা নীরিক্ষা করতে হলেও এটেন্ডেন্টকে বলে দেওয়া হচ্ছে ওয়েব ক্যামেরার মাধ্যমে। এরপর রোগীর সেই পরীক্ষা-নীরিক্ষার রিপোর্টও স্ক্যান করে পাঠানো হচ্ছে চিকিৎসকের কাছে। রিপোর্ট দেখে চিকিৎসক ওষুধপত্র লিখে দিচ্ছেন রোগীর জন্য। এভাবেই রোগীকে কাছ থেকে না দেখেই ওয়েব ক্যামেরার মাধ্যমে অনলাইনে চিকিৎসা দিচ্ছেন রাজশাহীর এই জ্যেষ্ঠ চিকিৎসক।

শুধু তিনি নয়, তাঁর মতো এই ডায়াগনস্টিক সেন্টারে অন্তত ২০ জন জ্যেষ্ঠ চিকিৎসক এভাবে চিকিৎসাসেবা দিচ্ছেন করোনা আতঙ্কের কারণে। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন চিকিৎসক মঞ্জুর ই এলাহী, আব্দুল বাসেদ, রাখি দেব, সাদেকুজ্জামান, শফিকুল ইসলাম, হাসিনা আক্তার প্রমুখ।

জানতে চাইলে পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টারের ব্যবস্থাপক শামিক উদ্দিন বলেন, ‘চিকিৎসকরা করোনা আতঙ্কে ভুগছেন। অনেকেই সরাসরি রোগী দেখতে গিয়ে করোনা আক্রান্ত হচ্ছেন। আক্রান্ত চিকিৎসকদের কেউ কেউ করোনা চিকিৎসা নিতে এখন মৃত্যুময্যায়। আবার রোগীদের চাপ বাড়ছে দিনকে। এই অবস্থায় বাধ্য হয়ে অধিকাংশ চিকিৎসকই এখন অনলাইনে চিকিৎসা দিচ্ছেন। তাতে চিকিৎসা না পেয়ে অন্তত ঘুরে যেতে হচ্ছে না কাউকে।’

ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘বর্তমান এই সময়ে যে কোনো উপায়ে রোগীদের চিকিৎসাসেবাটায় বড় কথা। আমরা সেদিক বিবেচনা করে এইভাবে সেবা দিয়ে যাচ্ছি।’

তবে চিকিৎসক মঞ্জুর এলাহীর কাছে চিকিৎসা নিতে আসা গোলাম রসুল নামের এক রোগী বলেন, ‘আমার শরীরের কি অবস্থা চিকিৎসক যদি সামনা-সামনি বসে না দেখেন বা না শোনেন, তাহলে কিভাবে ভিডিও কলে কথা বলে পুরোপুরি নিশ্চিত হবেন। আবার চারদিন আগে যে পরীক্ষা আমি অপর এক চিকিৎসকের কাছে চিকিৎসা নিতে গিয়ে করেছি, সেই পরীক্ষায় আবার এই চিকিৎসকও দিয়েছেন ভিডিও কলে কথা বলে। তাতেই বোঝা যাচ্ছে, সঠিক চিকিৎসা পাচ্ছি না আমরা।’

রাজশাহীর ইসলামী ব্যাংক হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগী হযরত আলী বলেন, ‘আমার সিরিয়াল ছিলো ১৪। যখন ডাক পড়লো তখন কাছে গিয়ে দেখি একটা কম্পিউটারের সামনে বসালো। এরপর দেখছি ওপার থেকে একজন লোক (চিকিৎসক) আমাকে জিজ্ঞেস করছে কি সমস্যা। তাকে খুলে বললাম। তিনি শুনে বললেন ঠিক আছে। এরপর যিনি টাকা নিলেন তিনি একটা ওষুধের কাগজ ধরিয়ে দিলেন হাতে। বললেন এই ওষুধগুলো কিনে খাবেন। আর কয়েকটা পলীক্ষা করায়ে নিয়ে আসবেন সামনের দিন। আমার কি চিকিৎসা হলো, কি ওষুধ দিলো আমি কিছুই বুঝলাম না।’

তবে আরেক রোগী আলী আকবর বলেন, ‘কয়েকদিন আগে এসে একবার ঘুরে গেছি। চিকিৎসা করাতে পারিনি। এখন ভিডিও কলে হলেও চিকিৎসা করাতে পারলাম এটাই বড় শান্তনা।’

এদিকে অনলাইনে এ চিকিৎসা ব্যবস্থা নিয়ে জানতে চাইলে রাজশাহী বিভাগীয় স্বাস্থ্য কর্মকর্তা গোপেন আচার্য বলেন, ‘চিকিৎসকরা করোনা আতঙ্কেরর কারণে এই ধরনের চিকিৎসাসেবা দিচ্ছেন। তাতে একেবারে চিকিৎসা না পেয়ে ঘুরে যাওয়ার চেয়ে রোগীরা অন্তত কিছুটা হলেও চিকিৎসাসেবা পাচ্ছেন। এটা টেলিমেডিসিনের নতুন সংস্করণ বলা যেতে পারে। যাকে নাই মামার চেয়ে কানা মামা ভালো হিসেবেও ধরে নেওয়া যায়।’