করোনার আরও ভয়ঙ্কর ধরন নিয়ে যে হুঁশিয়ারি দিল বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা

সিল্কসিটি নিউজ ডেস্ক: দুই  বছর হল করোনা মাহামারীতে ভুগছে বিশ্ব। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ৪০ কোটি ছাড়িয়েছে। মারা গেছে ৫৮ লাখের বেশি মানুষ। এখনও জানা নেই, কবে শেষ হবে এই মহামারী। এমন অবস্থায় আমেরিকা-ইউরোপের দেশগুলো ঘোষণা করেছে, মহামারীকে সঙ্গে নিয়েই বাঁচতে হবে। এবং এই যুক্তিতে করোনা বিধি-নিষধে তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিচ্ছে তারা।

কিন্তু বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বারবারই বলছে, করোনাভাইরাসের আরও ভয়ানক ধরন তৈরি হতে পারে ভবিষ্যতে। ফলে সতর্ক থাকতে হবে। শুধু তা-ই নয়, বিজ্ঞানী ও স্বাস্থ্যসেবা কর্মীদের জন্য আরও কঠিন সময় আসতে পারে বলেও জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান বিজ্ঞানী সৌম্যা স্বামীনাথনের বক্তব্য, এখনও অনেক রাস্তা হাঁটা বাকী। একটি আমেরিকান সংবাদ সংস্থাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে মহামারী নিয়ে চলতে থাকা রাজনীতি নিয়েও হতাশা প্রকাশ করেছেন সৌম্যা। রাজনীতি যে হয়েছে, হচ্ছে ও হবে, তা উড়িয়ে দিতে পারবে না কেউই। সাধারণ মানুষের মন রাখতে, ভোট-ব্যাঙ্ক বাঁচাতে করোনা-বিধি কমাচ্ছে বহু দেশ। কিন্তু এখনই মহামারী শেষ হওয়ার কোনও সম্ভাবনা দেখছেন না বিশেষজ্ঞেরা। কবে শেষ হবে তা-ও জানা নেই।

সৌম্যা বলেন, ‘আমার মনে হয় না, কেউ বলত পারবেন কবে মহামারী শেষ হবে। দয়া করে বলবেন না, মহামারী শেষ হয়ে গেছে। কারণ কিছু লোকজন তেমন কাজই করছেন। সব করোনা বিধি-নিষেধ তুলে দেওয়া বোকামি হবে। অন্তত ২০২২ সালের শেষ পর্যন্ত এই সব বিধি-নিষেধ মেনে চলাই উচিত। যে কোনও জায়গায় নতুন ধরন তৈরি হতে পারে। একটু ভুল হলেই আবার আমরা সেই গোড়ার জায়গায় চলে যাব। সাবধানে থাকতে হবে সবাইকে’।

আমেরিকার বিভিন্ন প্রদেশ এক-এক করে সব করোনা বিধি-নিষেধ তুলে দিচ্ছে। ফেব্রুয়ারি-মার্চ মাসের মধ্যে মাস্ক পরার নিয়মও উঠে যাচ্ছে। ব্রিটেনও জানিয়েছে, আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে আগের স্বাভাবিক জীবনে ফিরবে তারাও। অর্থাৎ মাস্কহীন হয়ে যাবে। লকডাউনের প্রশ্নও নেই। এ ধরনের পদক্ষেপে মোটেই খুশি নয় বিশ্ব সাস্থ্য সংস্থা। ফের সংক্রমণ বাড়ার ভয় পাচ্ছে তারা।

আমেরিকায় এখনও দৈনিক সংক্রমণ মাত্রাছাড়া। দুই হাজারের উপরে দৈনিক মৃত্যু হচ্ছে এখনও। গত এক মাসে করোনায় ৬০ হাজারের উপরে মৃত্যু হয়েছে আমেরিকায়। এ অবস্থায় বিশেষজ্ঞেরা বারবার বলছেন, যত বেশি সংক্রমণ ঘটবে, তত বেশি নতুন ধরন তৈরির আশঙ্কা বাড়বে। এর মধ্যে করোনা বিধি-নিষধ তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিচ্ছে আমেরিকা।

ও দিকে, আমেরিকা যখন চতুর্থ ডোজ় দেওয়ার কথা ভাবতে শুরু করেছে, আফ্রিকা এখনও টিকার প্রশ্নে অন্ধকারে। সৌম্যা জানিয়েছেন, ৮৫ শতাংশ আফ্রিকান এখনও প্রথম ডোজ পাননি। সেটিও বেশ চিন্তার। একে টিকাহীন, তার উপরে করোনা পরীক্ষাও তেমন হচ্ছে না এই মহাদেশে। এই অবস্থায় আফ্রিকায় করোনাভাইরাসের আরও ভয়ঙ্কর নতুন ধরন তৈরির আশঙ্কা প্রবল।

তবে সৌম্যা এ-ও জানিয়েছেন, ধীরে ধীরে ভাইরাসের সঙ্গে বাঁচাই শিখতে হবে মানুষকে। তবে তার আগে সাধারণ মানুষকে স্বাস্থ্য-শিক্ষা ও বিজ্ঞান-শিক্ষা, এই দুই বিষয়েই সচেতন হতে হবে।

সূত্র: দেশ রুপান্তর