করোনামুক্ত রাজশাহী নগরী, ঈদ ঘিরে খুলছে দোকানপাট, বাড়ছে আতঙ্ক

নিজস্ব প্রতিবেদক:


রাজশাহী বিভাগের মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ছিলো ২৪৯ জন। তবে গতকাল রাতে রাজশাহী ও বগুড়ার দুটি ল্যাবে নমুনা পরীক্ষা শেষে পাওয়া প্রতিবেদনে হয়তো আড়াই’শ ছাড়িয়ে গেছে আক্রান্তের সংখ্যা। আজ বুধবার বিভাগের করোনা আক্রান্তের তথ্য ঘোষণা করবে বিভাগীয় স্বাস্থ্য দপ্তর। তবে গতকাল দুপুর পর্যন্ত রাজশাহী সিটি করপোরেশন এলাকায় কোনো করোনা রোগী শনাক্ত করা যায়নি। এতে বলা যায়, গতকাল পর্যন্ত রাজশাহী সিটি করপোরেশন ছিলো করোনামুক্ত।

তবে ঈদকে ঘিরে খুলছে দোকানাপাট। এতে করে বাড়বে ক্রেতাদের সমাগম। ক্রেতাদের সামলাতে কতটা স্বাস্থ্যবিধি মানা সম্ভব তানিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়। তার পরেও ব্যবসায়ী নেতারা বলছেন- স্বাস্থ্যবিধি মেনে ব্যবসা করতে হবে। এর বিকল্প নেই।

এদিকে রাজশাহী নগরীকে করোনামুক্ত রাখতে এখানে প্রশাসনের পাশাপাশি সিটি মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন ও সদর আসনের সংসদ সদস্য ফজলে হোসেন বাদশরা ভূমিকা ছিলো চোখে পড়ার মতো।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, লিটন-বাদশার উদ্যোগে গত ৬ এপ্রিল শুরুতেই রাজশাহী শহরকে লকডাউন ঘোষণা করা হয়। এরপর সিটি করপোরেশনের উদ্যোগে নেওয়া হয় ব্যাপক হারে করোনা প্রতিরোধ কার্যক্রম। এমনকি সারা দেশে যখন জেলা শহরগুলোতে দোকানপাট খোলার হিড়িক পড়ে যায়, তখনো রাজশাহী শহরের দোকানপাট বন্ধ রাখার জন্য সার্বিক ব্যবস্থা গ্রহণ করে প্রশাসন। এটিও করা হয় এই দুই নেতা এবং জেলা প্রশাসক হামিদুল হকের উদ্যোগে। দোকানপাট খোলার দাবিতে গত রবিবার ও সোমবার পরপর দুদিন বিক্ষোভ করেছেন বিপাকে পড়া ব্যবসায়ী-কর্মচারীরা। কিন্তু তাতেও করোনাভাইরাস প্রতিরোধে কোনো ধরনের ছাড় দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। উল্টো দোকানপাট যেন খোলা না হয় সেইদিক নজর রাখার জন্য পুলিশের তৎপরতা লক্ষ্য করা যায়।

এদিকে করোনা প্রতিরোধে শুরু থেকেই রাজশাহী সিটি করপোরেশনের উদ্যোগে করোনাভাইরাস নিয়ে জনসচেতনতা সৃষ্টিতে দেড় লাখ লিফলেট বিতরণ, মহানগরজুড়ে মাইকিং, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার, ডিস লাইন ও ডিজিটাল ডিসপ্লে বোর্ডে সচেনতনতামূলক বক্তব্য প্রচার ও মসজিদে মসজিদে ইমামদের মাধ্যমে মানুষকে সচেতন করা হয়।

নগরীর ৩০টি ওয়ার্ডে কমিটি গঠন করে দেওয়া হয়। এসব কমিটি বিদেশ ফেরত নাগরিকদের হোম কোয়ারেন্টাইস ও সামাজিক দূরুত্ব বজায় রাখতে তদারকি করতে শুরু করে। এর বাইরে নিম্ন আয়ের মানুষদের বাড়ি বাড়ি পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে খাদ্য সামগ্রী। এখন পর্যন্ত প্রায় ৪০ হাজার পরিবারকে খাদ্য সহায়তার আওতায় আনা হয়। এটি এখনো অব্যাহত রয়েছে। পর্যায়ক্রমে এক লাখ পরিবারকে খাদ্য সহায়তা প্রদানের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। এছাড়াও ২০ হাজার মাস্ক ও এক হাজার লিটার স্যানিটাইজার তৈরি করে বিতরণ করা হয়েছে। মহানগরীর ২৭টি পয়েন্টে স্যানিটিইজার দিয়ে হাত ধোয়ার ব্যবস্থা করা হয়। যদিও পরবর্তিতে এ কার্যক্রম থমকে যায়। বিশেষ পরিস্থিতি মোকাবেলায় ৩০০জন স্বাস্থ্যকর্মীকে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়। ৫টি ওয়াটার ট্যাংকার দিয়ে মহানগরীর প্রধান প্রধান সড়ক ও হাট বাজারে জীবাণুনাশক ছিটানো হয়। তবে এ কর্যক্রমও এখন থমকে আছে।
এছাড়াও রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজের চিকিৎসকদের সুরক্ষায় চীন থেকে সংগ্রহ করা পিপিই হস্তান্তর করা হয়েছে। করোনো ভাইরাস আক্রান্ত রোগীকে বহনে অ্যাম্বুলেন্স প্রস্তুত রাখা হয়। করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে কেউ মারা গেলে তাকে দাফনে কবরস্থান নির্ধারণ ও সহায়ক টিম প্রস্তুত রাখা হয়। এই টিম বাঘার এক রোগী মারা যাওয়ার পরে রাজশাহী নগরীতেই দাফনের ব্যবস্থা করেন।

এদিকে রাজশাহী নগরী করোনামুক্ত সম্পর্কে জানতে চাইলে সনাকের রাজশাহী জেলা সভাপতি বলেন, ‘আমরা এখনো করোনামুক্ত আািছ। তবে মানুষ যে হারে রাস্তায় নামছে, তাতে যে কোন সময় এ মরণভাইরাস রাজশাহীতে ছড়িয়ে পড়তে পারে। এই অবস্থায় আমাদের দ্রুত সামাজিত দূরুত্ব বজায় রাখতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে হবে। কারণ দীর্ঘদিন মানুষকে ঘরে আটকে রাখা যাবে না। মানুষ এরই মধ্যে রাস্তায় নামতে শুরু করেছে। ফলে আমাদের সামাজিক দূরুত্ব বজায় রেখে আস্তে আস্তে দোকানপাট খোলারও অনুমতি দিতে হবে। তাহলেই করোনা পরিস্থিতি এখনকার মতোই রাখা যাবে।’

জানতে চাইলে রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, ‘রাজশাহী নগরীকে করোনামুক্ত রাখতে আমরা শুরু থেকেই নানা প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। এরই ধারাবাহিকতায় এখন পর্যন্ত নগরী করোনামুক্ত রয়েছে। তবে এর জন্য নগরবাসীকে আরও সচেতন হবে। ঈদকে কেন্দ্র করে মার্কেটমুখী হওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। ক্রেতাদের ভিড় বাড়লেই ব্যবসায়ীরা দোকানপাট খোলার চেষ্টা করবেন। আর ক্রেতা না থাকলে দোকান খুলে রেখেও লাখ হবে না। ফলে করোনা ছড়ানোর আতঙ্ক থাকবে না।’

স/আর