করোনাভাইরাস: শিশুদের কি বন্ধুদের সাথে খেলতে দেওয়া উচিৎ?

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্কঃ

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে সারা বিশ্বে একের পর এক দেশে স্কুল কলেজ বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে। এর ফলে নতুন করে সমস্যায় পড়েছেন শিশুদের অভিভাবকেরা- এই সময়ে বাচ্চারা কী করবে সেটা নিয়েও তারা একটু ঝামেলায় পড়েছেন। তারা বুঝতে পারছেন না যে বাচ্চারা কী করতে পারবে আর কী পারবে না।

এসময়ে কি তাদেরকে ঘরের বাইরে মাঠে ও পার্কে গিয়ে বন্ধুদের সঙ্গে খেলতে দেওয়া উচিৎ? সামাজিকভাবে বিচ্ছিন্ন করে রাখার অর্থ কি তাদের খেলাধুলাও বন্ধ?

দু’সপ্তাহ আগে ইতালিতে যখন কোভিড-১৯ ছড়িয়ে পড়ছিল, কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে লোকজনকে তখনও ঘরে থাকতে বলা হয়নি, তখন ক্যাথরিন উইলসন তার দুই বাচ্চাকে নিয়ে প্রতিবেশীর বাড়িতে রাতের খাবার খেতে গিয়েছিলেন। সেখানে আরো দুটো পরিবারও এসেছিলো।

“আমি ও আমার স্বামী ভেবেছি ওহ শুধু তো একজনের অ্যাপার্টমেন্টে যাচ্ছি, বড় কোন জমায়েত তো আর হচ্ছে না,” বলেন তিনি।

ক্যাথরিন উইলসনসহ আরো অনেক মা, পরে যখন বাচ্চাদের স্কুল বন্ধ করে দিল, তারা এটাকে ছুটি বা হলিডে হিসেবেই ধরে নিয়েছিলেন।

ভাবলেন বাচ্চাদের নিয়ে পার্কসহ বিভিন্ন স্থানে যাওয়ার এটাই তো সুযোগ। তখনও তিনি বুঝতে পারেন নি ভাইরাসটি ইতালি জুড়ে কী পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে।

এর কয়েকদিন পর ইতালিয়ান সরকার সারা দেশকেই অবরুদ্ধ করে ফেলার কথা ঘোষণা করলো যার অর্থ পার্কে যাওয়া তো দূরের কথা জরুরি কাজ ছাড়া ঘরের বাইরে যাওয়াও চলবে না।

শিশুরা পার্কে খেলা করছে।

ক্যাথরিন উইলসনের মতো সারা বিশ্বেই বহু মা বুঝতে পারছেন না এই পরিস্থিতিতে বাচ্চারা কী করতে পারবে আর কী করতে পারবে না।

বাংলাদেশেও স্কুল কলেজ বন্ধ করে দেওয়ার পর অনেক অভিভাবকই এনিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। সোশাল মিডিয়াতেও এসময় বাচ্চাদের নিয়ে ঘুরতে যাওয়ার বিষয়ে লোকজন কথাবার্তা বলেছেন।

সংবাদ মাধ্যমগুলোতে খবর বেরিয়েছে যে স্কুল বন্ধ থাকার কারণে দেশের পযর্টন স্পটগুলোতে লোকজনের ভিড় বেড়েছে।

শিক্ষামন্ত্রী দীপু মণি সতর্ক করে দিয়েছেন, স্কুল কলেজ বন্ধ করা হয়েছে ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে, বেড়াতে যাওয়ার জন্যে নয়। তিনি বলেছেন, বাচ্চাদেরকে অবশ্যই ঘরে থাকতে হবে। এবং এবিষয়ে স্থানীয় প্রশাসনকে নি্দেশনা দেওয়া কথাও তিনি জানিয়েছিলেন।

স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই অসুখের বিস্তার ঠেকাতে লোকজনকে সমাজের আর সকলের কাছ থেকে নিজেকে বিচ্ছিন্ন করে রাখতে হবে।

কিন্তু বাড়ির কাছে খেলার মাঠে কি যেতে পারবে? অথবা কোনো বন্ধুর বাড়িতে?

যুক্তরাষ্ট্রে জন্স হপকিন্স ব্লুমবার্গ স্কুল অফ পাবলিক হেলথের রোগতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. কেরি আলথফ বলছেন, “সামাজিকভাবে বিচ্ছিন্ন হয়ে থাকা মানে সবাইকেই এটা মানতে হবে- ছোট বড় সবাইকে। একজনকে আরেকজনের কাছ থেকে সবসময় ছয় ফুট দূরে থাকতে হবে। তার মানে ফুটবল বা বাস্কেটবলের মতো খেলার কোন সুযোগ নেই।

তবে কিছু খেলা আছে যেগুলোতে আরেকজনের খুব কাছে যেতে হয় না, যেমন টেনিস কিম্বা লুকোচুরি বা হাইড এন্ড সিক, সেগুলো খেলতে পারে।

কিন্তু ফুটবলের মতো খেলার মাঠে খেলোয়াড়দের মধ্যে দূরত্ব থাকে না।

তিনি বলছেন, করোনাভাইরাস যে মানবদেহের বাইরে কয়েকদিন বেঁচে থাকতে পারে সেটা বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত হয়েছে। সেকারণে খেলার মাঠ এবং খেলার সামগ্রী এড়িয়ে চলা উচিত।

স্কুল বন্ধ থাকায় বাচ্চাদের নিয়ে চিন্তায় পড়েছে অভিভাবকেরা।

শিশুরা এই ভাইরাসে খুব কমই আক্রান্ত হচ্ছে কিন্তু তারা এই ভাইরাসটি অন্যের দেহে ছড়িয়ে দিতে পারে।

এর অর্থ হলো: আপনার সন্তান এবং তার বন্ধুরা হয়তো সুস্থ আছে, কিন্তু তারপরেও তাদের মাধ্যমে এই ভাইরাসটি তাদের পরিবারের সদস্যদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়তে পারে।

আরেকজন রোগ-তত্ত্ববিদ ড. ক্যাথরিন সেমারাও বলছেন, লোকজন সামাজিকভাবে কতোটা বিচ্ছিন্ন থাকছে সেবিষয়ে স্থানীয় প্রশাসন ও কর্তৃপক্ষকেও সতর্ক থাকতে হবে।

“আজ আমরা যা করবো তার প্রভাব আমার দেখতে পাবো আগামী দুই, তিন, চার সপ্তাহে,” বলেন তিনি।

তিনি বলেন, এমনকি আপনি যেখানে থাকেন সেই এলাকাটিও যদি অবরুদ্ধ না হয়ে থাকে, তার পরেও আপনার উচিত হবে যতোটা সম্ভব বাইরে যাওয়া বন্ধ করে দেওয়া।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আগামী দিনগুলোতে পিতামাতাকে হয়তো আরো একটু কঠোর হতে হবে এবং স্কুল বন্ধ থাকায় কীভাবে সময় কাটানো যায় তা নিয়ে সন্তানদের সাথে আলোচনা করে ঠিক করে নিতে হবে।

“এই পরিস্থিতিতে যতোটা সম্ভব অনলাইনে বা ইন্টারনেটে যোগাযোগ করাই নিরাপদ। বিভিন্ন ভিডিও অ্যাপের মাধ্যমেও কথা বলতে পারেন,” বলছেন তারা।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আশেপাশে বন জঙ্গলের মতো খোলামেলা প্রাকৃতিক জায়গা থাকলে বাচ্চাদের নিয়ে সেসব জায়গায় হাঁটতে যাওয়া যেতে পারে। সেখানে তারা সাইকেলও চালাতে পারে।