করোনাকালে কেমন আছে পথশিশুরা

আমরা একটি বৈশ্বিক মহামারী মোকাবেলা করছি। শুধু স্বাস্থ্যগত হুমকি নয়, পৃথিবীতে অর্থনৈতিক মন্দা দেখা দিয়েছে। মালিকপক্ষ কর্মচারীদের বেতন না দিতে পেরে ছাঁটাই করে দিতে বাধ্য হচ্ছে।

বহু মানুষকে শহর ছেড়ে গ্রামে চলে যেতে হচ্ছে। বহু কিন্ডারগার্টেনের শিক্ষক বেকার হয়ে পড়েছেন। জাতির এমনই ক্রান্তিলগ্নে পথশিশুরা কেমন আছে?

পথশিশু বলতে সেসব শিশুকেই বোঝায়, যাদের কাছে রাস্তাই (ব্যাপক অর্থে বস্তি, পতিত জমি ইত্যাদিও এর অন্তর্ভুক্ত) তাদের স্বাভাবিক বাসস্থান এবং/অথবা জীবিকা নির্বাহের উৎস হয়ে উঠেছে। দেশে যত পথশিশু রয়েছে তাদের ৭৫ শতাংশই রাজধানী ঢাকায় বসবাস করে।

মানব উন্নয়ন সূচকে ১৩৮তম স্থানে থাকা একটি দেশ, যেখানে জনসংখ্যার অর্ধেক দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করে, সেখানে এই শিশুরা সামাজিক স্তরগুলোর মধ্যে সর্বনিম্ন স্তরের প্রতিনিধিত্ব করে। দেশের জনসংখ্যা যেমন বেড়েছে, তেমনি রাস্তার শিশুর সংখ্যাও বেড়েছে।

এই শিশুদের বসবাসের জায়গা নেই, এমনকি নেই ঘুমানোর জায়গাও। বর্তমান করোনা পরিস্থিতি পথশিশুদের কষ্ট আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। তাদের কষ্ট লাঘবে এ সময় আমাদের দানের হাত আরও প্রশস্ত করা প্রয়োজন।

রাস্তার অনেক ছেলেমেয়ে কম বয়সে মারা যায়, তারা প্রয়োজনীয় যত্ন পায় না। প্রতি বছর জলবাহিত রোগে বহু শিশুর মৃত্যু হয়। এ শিশুরা স্বাস্থ্যকর খাবার কিনতে অক্ষম। ফলে অনেক সময় তারা স্বাস্থ্যের জন্য উপযুক্ত নয় এমন খাবার খেতে বাধ্য হয়।

সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো ছাড়াও ইউনিসেফ ও এনজিওগুলো অনেক সময় তাদের সহায়তা প্রদান করে থাকে। এসব সংস্থার মধ্যে রয়েছে- বাংলাদেশ স্ট্রিট চিলড্রেন ফাউন্ডেশন, দ্য স্ট্রিট চিলড্রেন অ্যাকটিভিস্ট নেটওয়ার্ক, ঢাকা আহসানিয়া মিশন, চিলড্রেন ফেরদৌস, জাগো ফাউন্ডেশন, বাংলাদেশ স্ট্রিট চিলড্রেন অর্গানাইজেশন ও বিগ স্কুল। এছাড়া কিছু সংগঠনও রাস্তার শিশুদের অনুদান তুলে দেয়। কিছু এনজিও আবার পথশিশুদের, বিশেষ করে যারা নির্যাতিত ও যৌন নির্যাতনের শিকার, তাদের অবস্থার উন্নতির জন্য কাজ করছে।

দেশে পথশিশুদের স্কুলে যাওয়ার সামর্থ্য নেই। তাই তাদের সঠিক শিক্ষা লাভের সুযোগও নেই। অথচ এ শিশুদের জন্য শিক্ষা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, তাদের যদি সঠিক শিক্ষা না থাকে, তাহলে তাদের বাকি জীবনটাও দুর্বিষহভাবে কাটাতে হবে। অনেক সময় তারা অবৈধ উপায়ে অর্থ উপার্জন করবে। তবে কিছু এনজিও পথশিশুদের মাঝে শিক্ষার প্রসারে কাজ করে যাচ্ছে।

কেউ মায়ের পেট থেকে বের হয়েই পথশিশু হয়ে যায়নি। পরিস্থিতি তাদের পথশিশু করে দিয়েছে। এমনও দেখা গেছে, কিছুসংখ্যক শিশু দিনের বেলায় বিভিন্ন জনসমাগম এলাকায় ভিক্ষা করছে একটু খাবারের জন্য আর রাতের আঁধারে ওরা মাথা গোঁজার ঠাঁইটুকুও পায়নি। আসুন, আমরা পথশিশুদের প্রতি সদয় হই। তাহলে সৃষ্টিকর্তা আমাদের প্রতি সদয় হবেন।

তাসনিম হাসান মজুমদার : শিক্ষার্থী, চট্টগ্রাম কলেজ

 

সুত্রঃ যুগান্তর