কন্টেইনার খুলতে বেরিয়ে এলো ৩৪ কোটি টাকার অবৈধ সিগারেট!

ঘোষণায় ছিল বন্ড বা শুল্ক সুবিধার কাপড় এবং এক্সেসরিজ আমদানির, আর আমদানিকারক ছিল কুমিল্লা ইপিজেডের ‘বাংলাদেশ টেক্সটাইলস এন্ড কেমিক্যাল ফাইবার ইন্ডাষ্ট্রি লিমিটেড’। আজ  বৃহস্পতিবার কন্টেইনার খোলার পর চালানটিতে ঘোষণার এক ইঞ্চি পণ্য তো পাওয়া যায়নি। উল্টো মিলেছে সিগারেট আর সিগারেট। দুটি কন্টেইনার খোলার পর থরে থরে সাজানো সিগারেট মিলেছে এক কোটি ১৩ লাখ শলাকা; যার শুল্কসহ বাজার মূল্য ৩৪ কোটি টাকা। এরমধ্যে শুল্ক পরিমান দাঁড়ায় ২৭ কোটি টাকা। চট্টগ্রাম কাস্টমসের গোয়েন্দা দলের তৎপরতায় বিশাল শুল্কফাঁকি এবং অবৈধ সিগারেটের চালানটি ধরা পড়ে কাস্টমসের হাতে।

অভিযোগ উঠেছে, চালানটি চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছার আগে থেকেই আমদানিকারক ও সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট বিভিন্ন অপকৌশলে চালানটি রাতেই ছাড়ের একাধিক চেষ্টা করে। এমনকি গতকাল বুধবার রাতেও শেষ চেষ্টা হয় দুটি কন্টেইনার বন্দর থেকে ম্যানেজ করে কৌশলে খালাস করার। কাস্টমসের একাধিক কর্মকর্তাকে চালানটি আটক না করার হুমকিও দেয়া হয় রাজনৈতিক নেতাদের কাছ থেকে। কিন্তু বিষয়টি কাস্টমস দল আগে থেকে অবগত থাকায় তারা বন্দরের মাধ্যমে বাড়তি নিরাপত্তা নিশ্চিত করে।

জানতে চাইলে চট্টগ্রাম কাস্টমস গোয়েন্দা দল এআইআর শাখার প্রধান ও সহকারী কমিশনার রেজাউল করিম বলেন, একাধিক কৌশল ছিল সেই চক্রের কিন্তু আমরা তো সচেতন ছিলাম; পরে সতকর্তা আরো বাড়াই। যাতে কোনভাবেই চালানটি ছাড় না পায়।

তিনি বলেন, আমদানিকারক ৪১০ কেজি কাপড় এবং ১০ টন ২৭০ কেজি এক্সেসরিজ আমদানির ঘোষণা দেয় কিন্তু দিনভর কায়িক পরীক্ষার পর কোথাও সেই পণ্য পাওয়া যায়নি। কন্টেইনার খুলে কায়িক পরীক্ষার পর তিন ধরনের বিদেশি সিগারেট পাওয়া যায়। যেগুলোর শুধু শুল্কই আসে ২৭ কোটি টাকার। এই বিপুল রাজস্ব আমরা আটকে দিতে পেরেছি। এখন আমদানিকারক, সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টর বিরুদ্ধে আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

কুমিল্লা ইপিজেডের আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান ‘বাংলাদেশ টেক্সটাইলস অ্যান্ড কেমিক্যাল ফাইবার ইন্ডাস্ট্রি লিমিটেড’ চীন থেকে কাপড় ও কাপড়ের সরঞ্জাম ঘোষণায় বন্ড সুবিধার আওতায় দুই কন্টেইনার পণ্য আমদানি করে। চালানটি চীনের সাংহাই বন্দর থেকে চালানটি গত ১১ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছে। চালান খালাসে আমদানিকারকের নিয়োজিত সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট আলমগীর এন্ড সন্স লি. (এআইএন-৩০১১৪৩৮৮৬) ১৩ সেপ্টেম্বর বিল অব এন্ট্রি নং সি-২০৬৪৩৯ জমা দেন।

পরবর্তীতে আলোচ্য পণ্যচালানের বিষয়ে গোপন সংবাদ থাকায় কাস্টম হাউস, চট্টগ্রামের এআইআর শাখা কতৃক পণ্যচালানটি লক করে ১৬ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রাম বন্দরের অভ্যন্তরে সিএন্ডএফ এজেন্টের প্রতিনিধি, বন্দর নিরাপত্তা কর্মকর্তা ও অন্যান্য সংস্থার সদস্য ও প্রতিনিধিগণের উপস্থিতিতে এআইআর শাখার কর্মকর্তাগণ কতৃর্ক পণ্যচালানটির শতভাগ কায়িক পরীক্ষা করা হয়।

কায়িক পরীক্ষাকালে কাভার্ড ভ্যান থেকে সব পণ্য বের করে আনার পর দেখা যায়, ৫৬৫টি কার্টনের প্রতিটিতে সিগারেটের দুইটি কার্টন পাওয়া যায়। এতে বিদেশি ৩টি ব্রান্ডের মধ্যে ৪৪ লাখ শলাকা ইজি ব্রান্ডের, ৩৭ লাখ শলাকা এক্সএসও ব্রান্ডের এবং ৩২ লক্ষ শলাকা ওরিস ব্রান্ডের অর্থাৎ মোট এক কোটি ১৩ লাখ শলাকা সিগারেট পাওয়া যায়। যার আনুমানিক আমদানি মূল্য সাড়ে সাত কোটি টাকা। পণ্যচালানটিতে শর্ত সাপেক্ষে আমদানিযোগ্য ও উচ্চ শুল্কের পণ্য সিগারেট আমদানি করে আনুমানিক প্রায় ২৭ কোটি টাকা সরকারি রাজস্ব ফাঁকির অপচেষ্টা করা হয়।

ঘটনার সঙ্গে জড়িত সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট আলমগীর অ্যান্ড সন্স লি. এর মালিক আলমগীর কবিরকে অসংখ্যবার ফোন দেয়া হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি। পরে কালের কণ্ঠ পরিচয়ে বার্তা পাঠানোর পর থেকে ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।

 

সূত্রঃ কালের কণ্ঠ