কথায় শতভাগ হয় না, কাজ দেখে সিদ্ধান্ত: বি চৌধুরী

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:  শুধু কথায় শতভাগ হয় না। এগুলো কাজে দেখার বিষয়। আমরা দেখবো, তারপর নিজেদের মধ্যে আলাপ-আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেবো নির্বাচনে যাবো কি যাবো না। আমরা কখনই বলিনি কালই নির্বাচনে যাবো। কেউ বলেনি।

শুক্রবার (২ নভেম্বর) রাতে গণভবনে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা নেতৃত্বাধীন ১৪ দলের সঙ্গে সংলাপ শেষে নিজ বাসায় সাংবাদিকদের একথা জানান তিনি।

বিকল্পধারার সভাপতি যুক্তফ্রন্ট চেয়ারম্যান ডা. একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরী বলেন, আমরা আলোচনায় বলেছি লেভেল প্লেইং ফিল্ড নিশ্চিত করতে হবে। এটা ছিল মূল দাবি।

‘একশতভাগ রাষ্ট্রপতির অধীনে চলে যাবে। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন এটা যুক্তিসংগত। নীতিগতভাবে তিনি এটা মেনে নিয়েছেন। তিনিতো থ্রি ইন ওয়ান। একদিকে তিনি প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভাপতি। অন্যদিকে তিনি বঙ্গবন্ধু কন্যা।’

অন্যদল বা জোট নির্বাচনে না এলে আপনারা নির্বাচনে যাবেন কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে বি চৌধুরী বলেন, আমিতো আজ টেলিভিশনের স্ক্রলে দেখলাম, কামাল হোসেন বলেছেন, নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টি হলে তারা নির্বাচনে যাবে। তাহলে কোন দল নির্বাচনে যাচ্ছে না।

বিএনপি বলেছে সংলাপ ভালো হয়নি, তারা সন্তুষ্ট না- এ বিষয়ে বি চৌধুরী বলেন, তারা বলেছে ঠিক আছে। এখন তারা নিজেদের মধ্যে মীমাংসা করুক।

সেনাবাহিনীকে ক্ষমতা না দিলে নির্বাচনে যাবেন কিনা? এর জবাবে তিনি বলেন, এ ব্যাপারে রাজি হননি প্রধানমন্ত্রী। সব কি আর পজেটিভ হয়? এটা নেগেটিভ। সেনাবাহিনীর ম্যাজিস্ট্রেসির ব্যাপারে বলা হয়েছিল। এটা সংবিধানে নেই। কামাল হোসেনকেও প্রশ্ন করা হয়েছিল। উনি তখন উত্তর দেননি। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, আমরা সামরিক বাহিনীকে এমন কোনো ক্ষমতা দিতে চাই না, যেটা পরে প্রশ্নবিদ্ধ হবে। সামরিক বাহিনী ডিফেন্সের আন্ডারে। হোম মিনিস্ট্রির আন্ডারে নয়।

তিনি বলেন, আমরা বলেছি তফসিল ঘোষণার পর এমপিরা তাদের সংশ্লিষ্ট এলাকায় কোনো প্রকল্প উদ্বোধন করবেন না। সেজন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। মন্ত্রী-এমপিদের সব সুযোগ-সুবিধা প্রত্যাহার করতে হবে। প্রধানমন্ত্রী সবার সামনে বলেছেন এগুলো তিনি গ্রহণ করবেন।

এরপর বলেছি সরকারি দলের প্রার্থীদের বিলবোর্ড-ব্যানার-পোস্টার অবিলম্বে অপসারণ করতে হবে। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, বিলবোর্ডের ব্যাপারে আমরা নিজেরাই ক্লান্ত। তিনি বলেছেন, তফসিল ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গেই এগুলো দেখবেন না। আমরা যেসব বলেছি তিনি নীতিগতভাবে একমত হয়েছেন। এর ফলে একটা সুন্দর-সুষ্ঠু নির্বাচন হওয়া সম্ভব বলে তিনি প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। আমরা এটা বিচেনায় রেখেছি।

আমরা বলেছিলাম, নির্বাচনকালীন একটা নিরপেক্ষ সরকার চাই। এ ব্যাপারে তারা একমত হননি। আমরা বলেছি, নির্বাচনের সময় সরকারের ক্ষমতা সম্পূর্ণ সীমিত করতে হবে। তারা বলেছেন, ক্ষমতা সীমিত করা যেতে পারে। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ক্ষমতা সীমিত করবো এবং নিরপেক্ষতা বজায় রাখবো।

বি চৌধুরী বলেন, আমরা বলেছিলাম সেনাবাহিনীকে নির্বাচনের সময় কাজে লাগাতে হবে। যেহেতু আমাদের সেনাবাহিনী পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে কাজ করে, শান্তি রক্ষা করছে। আমাদের দেশে করবে না কেন? এ ব্যাপারে তারা বলেছেন, হ্যাঁ সেনাবাহিনী দেওয়া যেতে পারে, কিন্তু তারা স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে থাকবে। উপজেলা অঞ্চলে থাকবে। যেখানে প্রয়োজন সেখানে তারা যাবে। কমিশনের অধীনে সরকারি কর্মচারী যারা নির্বাচন পরিচালনা করবেন, তারা যদি প্রয়োজন মনে করেন, সেখানে সেনাবাহিনী যাবে। এই পর্যন্ত তারা রাজি আছেন, ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা কখনো দেওয়া হয়নি এবং দেওয়া হবে না। শুধু এ ব্যাপারে তারা সম্পূর্ণ ভিন্নমত পোষণ করেছেন তারা।

চলছে ব্রিফিং‘ইভিএম (ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন) এর ব্যাপারে আমরা বলেছি এটা আমাদের দেশের জন্য নতুন প্রযুক্তি। এর দু’টি অংশ আছে। যারা চালাবেন তারা এখনও এটা ব্যবহারে অভিজ্ঞ নয়। সুতরাং ইভিএমে ভর করা উচিত না। অপরদিকে আমাদের দেশের মানুষও ইভিএমে ভোট দিয়ে অভ্যস্ত হয়নি। ইভিএম যারা আবিষ্কার করেছে সেই নেদারল্যান্ডে ইভিএম নিষিদ্ধ হয়েছে। জার্মানিতে বাতিল করা হয়েছে। সুতরাং, আমরা বলেছি ইভিএম ব্যবহার করা যাবে না। এর প্রতি উত্তরে প্রধানমন্ত্রী বললন, এ ব্যাপারে একটি অর্ডিন্যান্স হয়েছে। তিনি প্রেসিডেন্টের সঙ্গে কথা বলবেন। সুতরাং, এখানে আমরা একটু আশার আলো দেখতে পাচ্ছি।’

বি চৌধুরী বলেন, আমরা আরও বলেছি নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক কারণে আটক বন্দিদের মুক্তি দিতে হবে। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, আমি আগেই রাজি হয়েছি। গতকাল যারা মিটিং করেছে তাদেরও বলেছি।

এসময় রাজনৈতিক বন্দিদের মধ্যে খালেদা জিয়া পড়েন কিনা জানতে চাইলে বি চৌধুরী সরাসরি কোনো উত্তর না দিয়ে বলেন, আমরা সব রাজবন্দির মুক্তি চেয়েছি। সন্ত্রাসীদের নয়।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমাদের সংলাপ আন্তরিকভাবে হয়েছে। সরকার যদি কথা রাখেন, তাহলে একটা আশাবাদের দিকে যাচ্ছে। এটাই বলবো। যদি সরকারকে নিরপেক্ষকরণ করা যায়, যদি নির্বাচন কমিশন পুরোপুরি রাষ্ট্রপতির অধীনে হয়ে যায়, সরকার থেকে নিরপেক্ষ থাকতে পারে, আলাদা থাকতে পারে, সরকার যদি ক্ষমতা প্রয়োগ না করে তাহলে অবশ্যই একটা পরিবেশ সৃষ্টি হবে। তাহলে একটা নিরপেক্ষ নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টি হবে। তারপরে আমরা সিদ্ধান্ত নেবো, নির্বাচনে যেতে পারি কিনা।

বিকল্পধারার মহাসচিব মেজর অব. আব্দুল মান্নান বলেন, আমরা আমাদের দাবি-দাওয়া নিয়ে আজ প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সংলাপ করেছি। সেখানে আমাদের যুক্তফ্রন্টের ৮টি দলের ২১ জন নেতা ছিলাম। জনগণের দাবিগুলো অত্যন্ত আন্তরিকতার সঙ্গে তুলে ধরেছি।

এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন বিকল্পধারার প্রেসিডিয়াম সদস্য শমসের মবিন চৌধুরী, গোলাম সারোয়ার মিলন, আবদুর রউফ মান্নান,  ইঞ্জিনিয়ার মুহম্মদ ইউসুফ, সহ-সভাপতি মাহমুদা চৌধুরী, সাংগঠনিক সম্পাদক ব্যারিস্টার ওমর ফারুক, সাবেক সংসদ সদস্য এইচ এম গোলাম  রেজা, বিএলডিপির সভাপতি নাজিম উদ্দিন আল আজাদ, সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন, বাংলাদেশ ন্যাপ সভাপতি জেবেল রহমান গানি, মহাসচিব গোলাম মোস্তাফা ভূইয়া, এনডিপির চেয়ারম্যান গোলাম মোর্ত্তুজা, মহাসচিব মঞ্জুর হোসেইন ইসা প্রমুখ।