সর্বাত্মক লকডাউনেও রাজশাহীতে টিসিবির পণ্য ক্রয়ে স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষিত

সাহেব বাজার জিরো পয়েন্টে টিসিবির পণ্যের ট্রাকের সামনে ক্রেতাদের স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষিত

নিজস্ব প্রতিবেদক:

করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে গত শুক্রবার বিকাল ৫টা থেকে রাজশাহী মহানগরীতে এক সপ্তাহের সর্বাত্মক লকডাউন চলছে। গতকাল শনিবার অলি-গলিতে চুপে-চাপে দুই-একটি দোকান-পাট খোলা দেখা গেলেও অধিকাংশ ছিল বন্ধ। সকল যানবাহন চলাচলও বন্ধ ছিল। কিন্তু রাজশাহী মহানগরীর ৬ টি পয়েন্টে ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) পণ্য বিক্রিতে ক্রেতারা মানছেন না স্বাস্থ্যবিধি। টিসিবির এই পণ্য ক্রয়ের লাইন থেকেও করোনার বিস্তার ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

এদিকে গত ৫ জুন থেকে নগরীর ৫টি পয়েন্টে করোনার র‌্যাপিড অ্যান্টিজেন পরীক্ষা চালু করা হয়েছে। শুরুর দিকে করোনার নমুনা পরীক্ষা (র‌্যাপিড অ্যান্টিজেন পরীক্ষা) ছাড়া টিসিবির পণ্য ক্রয়ে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও এখন অনেকেই করোনা পরীক্ষা না করেই পণ্য কিনতে লাইনে দাঁড়িয়ে যাচ্ছে। এতে করে করোনা বিস্তার ঘটতে পারে বলেও মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, নগরীতে বেশ কয়েকদিন থেকে র‌্যাপিড অ্যান্টিজেন পরীক্ষা চলছে। জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে নগরীর পাঁচটি স্থানে এ পরীক্ষা চলছে। তবে করোনা পরীক্ষায় মানুষের সাড়া কম। এ কারণে করোনা পরীক্ষায় অগ্রহী করে তুলতে জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে টিসিবি পণ্য বিক্রির ট্রাকের পাশে বুথ বসানো হয়। সেখানে ক্রেতাদের করোনা পরীক্ষা করে টিসিবি পণ্য কিনতে বলা হয়। র‌্যাপিড অ্যান্টিজেন পরীক্ষা শুরুর দিকে অনেকেই পরীক্ষার পর টিসিবির পণ্য কিনেছেন।

সাহেব বাজার জিরো পয়েন্টে টিসিবির পণ্যের ট্রাকের সামনে ক্রেতাদের স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষিত

কিন্তু শনিবার (১২ জুন) দুপুরে রাজশাহীর সাহেব বাজার জিরো পয়েন্ট ও শহীদ এএইচএম কামারুজ্জামান চত্বরে টিসিবির পণ্য ক্রয়ের ট্রাকের সামনে প্রায় দেড় ঘণ্টাব্যাপী দাঁড়িয়ে থেকে দেখা গেছে, লাইনে দাঁড়িয়ে যারা পণ্য ক্রয় করছেন তাদের অধিকাংশ করোনা পরীক্ষা না করেই লাইনে দাঁড়িয়ে গেছেন। শুধু তাই নয়; লাইনে গাদাগাদী করে (একজনের শরীরে সঙ্গে আরেকজনের শরীর লাগানো) দাঁড়িয়ে থেকে ক্রেতারা টিসিবির পণ্য ক্রয় করছেন। অনেকের মুখে মাস্ক থাকলেও তা ঝুলানো ছিল গলায়।

নগরীর সাহেব বাজারে সবজি ক্রয় করতে যাওয়া টিকাপাড়া এলাকার বাসিন্দা আব্দুল রউফ বলেন, ‘সাহেব বাজারে টিসিবির পণ্য ক্রয়ের ট্রাকের সামনে লাইনে গাদাগাদী করে দাঁড়িয়ে ক্রেতারা পণ্য ক্রয় করছেন। স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষা করে এভাবে দাঁড়িয়ে টিসিবির পণ্য ক্রয়ের সঙ্গে অনেকেই করোনাও ক্রয় করে বাসায় নিয়ে যাচ্ছেন।

সরেজমিনে নগরীর সাহেব বাজার জিরো পয়েন্টে টিসিবির পণ্য বিক্রির ট্রাকের সামনে দেখা গেছে, কয়েকজন পুলিশ সদস্য টিসিবির পণ্য ক্রয়ের ট্রাকের পাশে দাঁড়িয়ে দায়িত্ব পালন করছেন। কিন্তু কোনোভাবেই ক্রেতাদের সামাজিক দূরত্ব পালনে বাধ্য করতে পারছেন না। এভাবেই প্রায় ঘণ্টা খানেক কেটে গেল। এই অবস্থা পর্যবেক্ষণ করতেই নগরীর বোয়ালিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নিবারণ চন্দ্র বর্মণ টিসিবির ট্রাকের সামনে এসে ক্রেতারা সামাজিক দূরত্ব না মানলে টিসিবির পণ্য বিক্রি বন্ধের নির্দেশ দেন। তারপর দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যরা ক্রেতাদের কিছুটা হলেও সামাজিক দূরত্ব মানাতে পারেন।

জানতে চাইলে বোয়ালিয়া থানার ওসি নিবারণ চন্দ্র বর্মণ বলেন, ‘করোনার পরিস্থিতি রাজশাহীতে কতটা ভয়াবহ হয়েছে সাধারণ মানুষ সেটি এখন পর্যন্ত আঁচ করতে পারছে না। এখনো তারা সচেতন হচ্ছে না। যার কারণেই কিন্তু সর্বাত্মক এই লকডাউন দেয়া হয়েছে। আমার থানায় এলাকায় যেখানে টিসিবির পণ্য দেয়া হচ্ছে- দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি ক্রেতাদের সচেতন করতে আমি নিজেই ঘুরে ঘুরে পর্যবেক্ষণ করছি, তাদেরকে সচেতন করছি।’

টিসিবির রাজশাহী বিভাগীয় কর্মকর্তা মো. রবিউল মোর্শেদ বলেন, করোনার পরীক্ষা বাড়ানোর জন্য বুথের কাছে টিসিবির পণ্য বিক্রির পরামর্শ দিয়েছিলেন জেলা প্রশাসক। এ কারণে বুথের পাশে টিসিবির পণ্য বিক্রি করা হয়। আমার জানামতে, অধিকাংশ ক্রেতাই করোনা পরীক্ষা করে পণ্য কিনেছেন। এছাড়া আমার কর্মীদের নিদের্শনা দেয়া আছে- স্বাস্থ্যবিধি না মানলে টিসিবির পণ্য বিক্রি বন্ধ করে দেয়ার।’

রাজশাহীর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. শরিফুল হক বলেন, করোনা পরীক্ষায় মানুষকে আরও বেশি আগ্রহী করে তুলতে টিসিবির পণ্য করোনা টেস্টের বুথের পাশে রাখার পরামর্শ দেওয়া হয়েছিলো। এ সময় করোনা টেস্ট করিয়ে তারপর পণ্য কিনতে মানুষকে আগ্রহী করা হয়। তখন করোনা টেস্টে মানুষের ভালো সাড়া পাওয়া গেছে। কিন্তু যারা লাইনে দাঁড়িয়ে পণ্য ক্রয় করছেন তারা যদি টেস্ট না করিয়ে দাঁড়ায় সে ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

উল্লেখ্য, রাজশাহীতে গত শুক্রবার রাজশাহীর দুটি পিসিআর ল্যাবে ৩৬৬ জনের নমুনা পরীক্ষা করে ১৪৩ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। যা মোট পরীক্ষার ৩৯ দশমিক ০৭ শতাংশ। এর আগে দিন বৃহস্পতিবার (১০ জুন) দুটি পিসিআর ল্যাবে ৩৭৩ জনের নমুনা পরীক্ষা করে ১৪৩ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে (৩৮ দশমিক ৩৪ শতাংশ)। এর আগের দিন রাজশাহীতে ২১৬ জনের করোনার নমুনা পরীক্ষা করে ১০০ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন (৪৬ দশমিক ৩০ শতাংশ)।

এএইচ/এস