ওয়ার্নার-রোভম্যানের দাপটে জয় দিল্লির

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্কঃ

আইপিএলে যে লড়াইটার দিকে তাকিয়ে ছিল ক্রিকেটবিশ্ব, সেই লড়াইটা জয় দিয়ে জমজমাট করে গেলেন ডেভিড ওয়ার্নার। পুরানো দল সানরাইজার্স হায়দরাবাদের বিরুদ্ধে জবাব দেওয়ার জন্য মুখিয়ে ছিলেন ওয়ার্নার। সঠিক সময়ে ব্র্যাবোর্নে জ্বলে উঠল অজি তারকা ক্রিকেটারের ব্যাট। চার-ছক্কার বন্যা বইয়ে দিয়ে ঝকঝকে ৯২ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলেন ওয়ার্নার। সুযোগ পেয়ে ঝড় তোলেন রোভম্যান পাওয়েলও। ব্যাটাররা তাদের কাজটা ঠিক মতো করে দেওয়ার পর বোলাররাও নিজেদের কাজটা যথাযথ পালন করলেন। যার ফল চলতি আইপিএলে পয়েন্ট তালিকায় ৫ নম্বরে উঠে এল ঋষভ পান্তের দিল্লি ক্যাপিটালস।

বৃহস্পতিবার (৫ মে) দিল্লির হয়ে ওপেনিংয়ে ডেভিড ওয়ার্নারের সঙ্গে নেমেছিলেন মনদীপ সিং। প্রথম ওভারেই অরেঞ্জ আর্মির অভিজ্ঞ তারকা ভুবনেশ্বর কুমার তুলে নেন মনদীপের উইকেট। ৫ বল খেলে কোনও রান না করে মাঠ ছাড়েন মনদীপ। শুরুতেই উইকেট হারানোর ধাক্কা সামলে মিচেল মার্শের সঙ্গে জুটি বাঁধেন ওয়ার্নার। দ্বিতীয় উইকেটে ওঠে ৩৭ রান। পঞ্চম ওভারের মধ্যে দ্বিতীয় উইকেট হারায় পান্তের দিল্লি। শন অ্যাবটের বলে কট অ্যান্ড বোল্ড হন অজি তারকা মিচেল মার্শ। করে যান ১০ রান। এরপর ক্যাপ্টেন পান্তের সঙ্গে দলকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার দায়িত্ব তুলে নেন ওয়ার্নার। এদিন আগুনে ফর্মে ছিলেন ঋষভও। তবে নবম ওভারে ছক্কার হ্যাটট্রিকের পর একটি চার মারেন। ওই ওভারের শেষ বলেও চার মারতে গিয়ে উইকেট দিয়ে বসেন পন্থ। ১৬ বলে ২৬ রান করেন দিল্লির অধিনায়ক।

ক্যাপ্টেনের উইকেট হারানোর পর রোভম্যান পাওয়েলের সঙ্গে জুটিতে মারকাটারি ইনিংস খেলে যান ওয়ার্নার। উমরান মালিকের গতি সামলে চার-ছক্কার বন্যা বইয়ে দেন ওয়ার্নার-পাওয়েলরা। গতির ঝড় তোলা উমরান উন্নতি করছেন ঠিকই। কিন্তু তিনি ডেভিড-রোভম্যান জুটির সামনে দাঁড়াতে পারেননি। পুরানো দল হায়দরাবাদের বিরুদ্ধে জ্বলে উঠল ওয়ার্নারের ব্যাট। সুযোগ বুঝে ক্যারিবিয়ান তারকা পাওয়েল দেখিয়ে দিলেন তার দক্ষতা।

মাত্র ৫৮ বলে অপরাজিত ৯২ রান করেন ডেভিড ওয়ার্নার। সানরাইজার্স হায়দরাবাদের হয়ে গতবার খেলেছিলেন অজি তারকা। কিন্তু মৌসুমের মাঝে তাকে টিম থেকে বাদ দেওয়া হয়েছিল। শুধু তাই নয়, নেতৃত্বও কেড়ে নেওয়া হয়েছিল। সেই জবাব দেওয়ার জন্য মুখিয়ে ছিলেন ওয়ার্নার। ১২টা চার ও ৩টি ছয় দিয়ে সাজিয়েছেন এই ম্যাচের ইনিংস। অল্পের জন্য সেঞ্চুরি পেলেন না সেটা ঠিকই, তবে টি-টোয়েন্টিতে এক অনন্য রেকর্ড করে ফেললেন। টি-২০ ক্রিকেটে ৮৯টি হাফসেঞ্চুরি হয়ে গেল ওয়ার্নারের। তিনি ভেঙে দিলেন ক্রিস গেইলের সবচেয়ে বেশি অর্ধশতরানের রেকর্ড।

ওয়ার্নারের পাশাপাশি রোভম্যান পাওয়েলের ব্যাট জ্বলজ্বল করছিল অরেঞ্জ আর্মির বিরুদ্ধে। ৩৫ বলে নট আউট ৬৭ করতে গিয়ে পাওয়েল মেরেছেন ৬টি ছয় ও তিনটি চার। ওয়ার্নার-পাওয়েল জুটিতে ভর করে দিল্লি ২০৮ রানের টার্গেট দেয় হায়দরাবাদকে।

রান তাড়া করতে নেমে দিল্লির মতো শুরুতেই উইকেট খুইয়ে বসে হায়দরাবাদ। দ্বিতীয় ওভারেই খালিল আহমেদ ফেরান অভিষেক শর্মাকে। ৭ রান করে সাজঘরের পথে রওনা দেন অভিষেক। পঞ্চম ওভারের মাথায় ক্যাপ্টেন কেন উইলিয়ামসনের উইকেট তুলে নেন অনরিখ নর্টজে। মাত্র ৪ রান এসেছে উইলিয়ামসনের ব্যাট থেকে। রাহুল ত্রিপাঠীও সামলাতে পারেননি মার্শ-নর্টজেদের। ১৮ বলে ২২ রান করে ফিরে যান ফর্ম খুঁজতে থাকা রাহুল। তিন উইকেট হারিয়ে নিকোলাস পুরানকে সঙ্গে নিয়ে দলকে রানে ফেরান এইডেন মার্করাম। চতুর্থ উইকেটে ওঠে ৬০ রান। শার্দূল-কুলদীপদের বিরুদ্ধে ছন্দে ছিলেন প্রোটিয়া তারকা মার্করাম। টি-২০ ক্যারিয়ারে এদিন ২ হাজারতম রান পূর্ণ করে ফেলেছেন মার্করাম। ২৫ বলে ৪২ রান করে যান মার্করাম। তার ইনিংসে ছিল ৪টি চার ও ৩টি ছয়।

দলের কঠিন পরিস্থিতিতেও হাফসেঞ্চুরি পূর্ণ করে ফেলেন নিকোলাস পুরান। মার্করামের পর তিনি শশাঙ্কের সঙ্গে জুটি বাঁধেন। ওই জুটিতে ৩৭ রান ওঠে। ১৫তম ওভারে শশাঙ্ককে সাজঘরের রাস্তা দেখান শার্দূল। তবে একপ্রান্ত থেকে অরেঞ্জ আর্মির সৈন্যরা পরপর ফিরে গেলেও ক্রিজে অটল ছিলেন পুরান। ৭ রান করে উইকেট দিয়ে বসেন শন অ্যাবট। তবে পরপর দুইটি হাফসেঞ্চুরি করে ফেললেন পুরান। চেন্নাইয়ের বিরুদ্ধে গত ম্যাচে ৬৪ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলেও জেতাতে পারেননি দলকে। আর আজ ৩৪ বলে গুরুত্বপূর্ণ ৬২ রান করলেন ক্যারিবিয়ান তারকা। ১৮তম ওভারে এসে পুরানের গুরুত্বপূর্ণ উইকেট তুলে নিয়ে দিল্লিকে ম্যাচে ফেরান শার্দূল। মার্করাম-পুরান জুটি দলকে অক্সিজেন দিলেও শেষ অবধি হারের হ্যাটট্রিকই প্রাপ্তি হল উইলিয়ামসনদের। শেষ ওভারে কার্তিক ত্যাগীকে ফেরান কুলদীপ। নির্ধারিত ২০ ওভারে ৮ উইকেট হারিয়ে ১৮৬ রানে থেমে যায় হায়দরাবাদ। ২১ রানে ম্যাচ জিতে লিগ টেবিলে উন্নতি করলেন পান্তরা।

সংক্ষিপ্ত স্কোর-

দিল্লি ক্যাপিটালসঃ ২০৭-৩ (২০ ওভার)

সানরাইজার্স হায়দরাবাদঃ ১৮৬-৮ (২০ ওভার)

 

সূত্রঃ বাংলাদেশ প্রতিদিন