পুঠিয়ায় অপারেশন টেবিলে নবজাতকসহ প্রসূতির মৃত্যু, পলাতক ভুয়া চিকিৎসক গ্রেপ্তার

মইদুল ইসলাম মধু, পুঠিয়া:
রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলায় একটি বেসরকারি ক্লিনিকে সিজারিয়ান অপরেশন করার সময় ভুল চিকিৎসায় অপারেশন টেবিলে নবজাতকসহ প্রসূতি মৃত্যুর ঘটনায় দীর্ঘদিন যাবত পলাতক সেই ভুয়া ডাক্তারকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গত রবিবার দিবাগত রাতে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে নাটোরে অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেফতার করে পুঠিয়া থানা পুলিশ।

গ্রেফতারকৃত সেই ভূয়া ডাক্তার হলেন, নাটোর জেলা সদর এলাকার দক্ষিনপুর মহল্লার বাহাজ উদ্দিন প্রামানিকের ছেলে আবদুল করিম (৫০) কিন্তু সে নিজেকে ক্যাপ্টেন (অবঃ) ডা. মোঃ জাহাঙ্গীর আলম নাম ব্যবহার করে পরিচয় দেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন পুঠিয়া থানার ইন্সপেক্টর (তদন্ত) ও মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা রাকিবুল হাসান।

চলতি বছরের ৯ আগস্ট উপজেলা সদরে অবস্থিত বেসরকারি ক্লিনিক আল-মাহাদি ইসলামি হাসপাতাল নামের ওই ক্লিনিকে ডাক্তারের ভুল চিকিৎসায় পেটের ভেতর নবজাতকসহ পান্ন বেগম নামের এক প্রসুতির মৃত্যু হয়। ঘটনার পর নিহত পান্ন বেগমের স্বামী বাদী হয়েছে ভূয়া চিকিৎসক, ক্লিনিক মালিক মুনসুর রহমানসহ ৪ জনকে আসামী করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা রাকিবুল হাসান জানান, ঘটনার পর দীর্ঘদিন যাবৎ আবদুল করিম (জাহাঙ্গীর আলম নাম ব্যবহার করা ভূয়া ডাক্তার) আত্মগোপনে ছিলো সে সব জায়গায় তার ভুয়া নাম ব্যবহার করায় কোন মতেই তাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিলো না। পরে উন্নত প্রযুক্তির পাশাপাশি অতিরিক্ত সোর্স নিয়োগ করে তার আসল পরিচয় বের করে তার অবস্থান নিশ্চিত হয়ে গতকাল গভীর রাতে নাটোর জেলার বড়াইগ্রাম উপজেলার রয়না চকপাড়া গ্রাম তার স্বশুর বাড়ি এলকায় অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

জানা যায়, ১৯৮৫ সালে আবদুল করিম বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সৈনিক পদে চাকুরিতে যুক্ত হন। তার ঠিক এক বছর পরেই তার চাকরি চলে যায়। তারপর থেকে নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলা সদরে অবস্থিত একটি ফার্মেসি দোকানে চাকরি নেন। সেই থেকে তার প্রথম ঔষধের প্রেস্কিপশন হাতে নেয়া।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা রাকিব জানান, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আঃ করিম ওরুফে জাহাঙ্গীর আলম জানান, ফার্মেসির দোকানে চাকরির সুবাদে সে প্রথম প্রেস্কিপশন হাতে নেয় এবং একসময় সে নিজেই রুগির প্রেস্কিপশন লিখে। তারপর একটি বেসরকারি ক্লিনিকে ডাক্তারের সহযোগী হিসেবে কাজ করেন এবং তার কিছুদিন পরেই তিনি নিজেকে এমবিবিএস ডাক্তার হিসেবে পরিচয় দেন এবং নিজের নাম আঃ করিম পরিবর্তন করে ক্যাপ্টেন (অবঃ) ডা. মোঃ জাহাঙ্গীর আলম নাম ব্যবহার করেন। ওসি তদন্ত রাকিব আরো জানান, সোমবার দুপুরে তাকে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে প্রেরন করা হবে এবং আদালতে দশ দিনের রিমান্ডের আবেদন করা হবে।

প্রশঙ্গত, গত ৯ আগস্ট বুধবার পুঠিয়া উপজেলা সদরে অবস্থিত আল-মাহাদি ইসলামি হাসপাতাল নামের বেসরকারি ক্লিনিকে সিজারিয়ান অপারেশনের সময় অপারেশন টেবিলে ভুল চিকিৎসায় পেটের ভেতর নবজাতকসহ প্রসূতির মৃত্যু হয়। খবর পেয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহীনির সদস্যরা ক্লিনিকে অভিযান চালিয়ে নার্স মারুফা খাতুনকে আটক করে পরে দায়ের করা হত্যা মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে জেল হাজতে চালান দেয়। তবে ক্লিনিক মালিক ও ভুয়া ডাক্তার সেখান থেকে পালিয়ে যায়। ঘটনার সঙ্গে সঙ্গে উপজেলা প্রশাসন ক্লিনিকটি সিলগালা করে দেন।

 

স/আ