ঐক্যফ্রন্টে ড. কামালের নেতৃত্ব নিয়ে যা বললেন কাদের সিদ্দিকী

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

আট মাসের গাঁটছড়া ছিন্ন করে ড. কামাল হোসেনের জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে থেকে বেরিয়ে গেলেন কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী। বঙ্গবীরের বেরিয়ে যাওয়ার মধ্য দিয়ে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে গড়ে ওঠা দেশের বৃহত্তম রাজনৈতিক এ মোর্চায় ভাঙন স্পষ্ট হলো।

কাদের সিদ্দিকী ঐক্যফ্রন্টে থাকবেন না, এটি নিয়ে রাজনৈতিক মহলে বেশ কিছু দিন ধরে জল্পনা চলছিল। আজ সেটি বাস্তবে রূপ নিল।

সোমবার জাতীয় প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে ঐক্যফ্রন্ট ছাড়ার ঘোষণা দেন মুক্তিযুদ্ধে বীরত্বপূর্ণ অবদান রাখা এ রাজনীতিবিদ। আগের রাতে দলের নীতিনির্ধারণী বৈঠকে ঐক্যফ্রন্ট ছাড়ার সিদ্ধান্ত হয়। বৈঠকের সিদ্ধান্ত মোতাবেক ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গ ত্যাগের ঘোষণা দিলেন কাদের সিদ্দিকী। আজকের সংবাদ সম্মেলনে ঐক্যফ্রন্ট ছাড়ার কারণ ও ঐক্যফ্রন্টে ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্ব নিয়ে কথা বলেন কাদের সিদ্দিকী।

জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন প্রসঙ্গে কাদের সিদ্দিকী বলেন, ঐক্যফ্রন্টের আহ্বায়ক (শীর্ষ নেতা) ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্ব দিতে অনীহা রয়েছে। নির্বাচনের পর জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট জনগণের সঙ্গে থাকতে পারেনি। তাই সার্বিক বিবেচনায় আমরা মনে করি এই ফ্রন্টের আর প্রয়োজন নেই।

ড. কামাল ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা হলেও তার নেতৃত্ব এই জোটে খাটে না এমন অভিযোগ করে কাদের সিদ্দিকী বলেন, ‘কামাল হোসেন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা হলেও একাদশ সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন তার নেতৃত্বে দেয়া হয়নি। এমনকি মনোনয়নের কাগজপত্র জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের কার্যালয় থেকে দেয়া হয়নি। তা দেয়া হয়েছে খালেদা জিয়ার কার্যালয় থেকে। এতে বোঝা যায়, জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতৃত্ব দিয়েছে বিএনপি।

নির্বাচনের পর ড. কামালের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন কাদের সিদ্দিকী। বলেন, ‘নির্বাচনের পর ড. কামাল হোসেনের প্রয়োজন ছিল নির্বাচন প্রত্যাখ্যান ও পুনর্নির্বাচনের দাবি করা। এটিই ছিল জাতির প্রত্যাশা। কিন্তু তা না করায় জাতি হতাশ হয়েছে।’

ঐক্যফ্রন্ট জাতীয় কোনো সমস্যাকে জাতির সামনে তুলে ধরতে পারছে না, এমন দাবি করে কাদের সিদ্দিকীর ভাষ্য, জাতীয় কোনো সমস্যাকে তারা তুলে ধরতে পারছে না। এ রকম একটি জোট যে আছে তা দেশের মানুষ জানেই না। তিনি বলেন, জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের অস্তিত্ব বা ঠিকানা খোঁজার চিন্তা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে জনগণের সব সমস্যায় তাদের পাশে থাকার অঙ্গীকারে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ নতুন উদ্যমে পথচলা শুরু করবে।

জনগণের পাশে থাকার অঙ্গীকার করে কাদের সিদ্দিকী বলেন, আমরা সবসময় দেশবাসীর কাছে বিশ্বস্ত থাকার চেষ্টা করেছি, ভবিষ্যতে সেই চেষ্টা অব্যাহত থাকবে।

ঐক্যফ্রন্ট ছাড়ছেন কিনা বিষয়টি পরিষ্কার নয়, সাংবাদিকের এমন প্রশ্নের জবাবে কাদের সিদ্দিকী বলেন, ‘ঐক্যফ্রন্টের অস্তিত্ব বা ঠিকানা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে জনগণের সব সমস্যায় পাশে থাকার অঙ্গীকারে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ নতুন উদ্যমে পথচলা শুরু করছে। আমার মনে হয় না যে, এখানে কোনো অস্পষ্টতা আছে। সত্য কথা বলতে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট এখন খুঁজে পাওয়া যায় না। এর কোনো কর্মকাণ্ড নেই। সে জন্য সেখান থেকে আমরা চলে আসছি। বের হয়ে যাচ্ছি বা আমাদের প্রত্যাহার করছি, এই শব্দটি ব্যবহারের কথা যুক্তিযুক্ত মনে হয় নাই। সে জন্য তাদের খোঁজার কথাটা বলেছি। তাদের মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলেছি। এর অর্থ আপনি যেটি বলেছেন, সেটিকেই বোঝায়।

ঐক্যফ্রন্ট এখন আর কার্যকর নেই উল্লেখ করে কাদের সিদ্দিকী বলেন, জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা ড. কামাল হোসেন উপস্থিত না থাকায় গত ১০ জুন কোনো সিদ্ধান্ত ছাড়াই ঐক্যফ্রন্টের স্টিয়ারিং কমিটির সভা মুলতবি করা হয়। এর পর এক মাস পেরিয়ে গেলেও মুলতবি সভা আর আয়োজন করা হয়নি। কাদের সিদ্দিকীর দাবি, বাস্তবায়নের কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়নি। এতে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের নেতাকর্মীদের ক্ষোভ বেড়েছে। ঐক্যফ্রন্টের এমন কর্মকাণ্ডে তাদের নেতা কাদের সিদ্দিকীকে অবজ্ঞা করা হয়েছে বলেই মনে করেন তারা। এমন প্রেক্ষাপটেই গত বৃহস্পতিবার দলের বর্ধিতসভায় ঐক্যফ্রন্ট ছাড়ার দাবি তোলেন দলের নেতাকর্মীরা।

এর আগেও নির্বাচন-পরবর্তী ঐক্যফ্রন্টের নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগে তোলে জোট ছাড়ার ইঙ্গিত দিয়েছিলেন কাদের সিদ্দিকী।