এসডিজি বাস্তবায়নের চ্যালেঞ্জ: অর্থ পাচার রোধ করতে হবে

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) আয়োজিত ‘ডেলিভারিং এসডিজি ইন বাংলাদেশ : রোল অব নন-স্টেট অ্যাক্টরস’ শীর্ষক আলোচনা সভায় বক্তারা টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) সুষ্ঠুভাবে বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে অর্থ পাচার মূল বাধা বলে মন্তব্য করেছেন।

উল্লেখ্য, সভায় ‘এসডিজির ৪ বছরে বাংলাদেশের অগ্রগতি’ শীর্ষক বইয়ে ওয়াশিংটনভিত্তিক গবেষণা ও পরামর্শক প্রতিষ্ঠান গ্লোবাল ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টিগ্রিটির (জিএফআই) যে প্রতিবেদন তুলে ধরা হয়েছে, সেখানে আশঙ্কা প্রকাশ করে বলা হয়েছে, আমদানি ও রফতানির আড়ালে বাংলাদেশ থেকে প্রতি বছর বিপুল পরিমাণ অর্থ পাচার হয়ে যাচ্ছে, যা ২০৩০ সাল নাগাদ ১৪ দশমিক ১৩ বিলিয়ন ডলার (এক লাখ ২০ হাজার কোটি টাকা) ছাড়িয়ে যেতে পারে। অর্থ পাচারের এ ধারা অব্যাহত থাকলে ২০৩০ সালের মধ্যে এসডিজির সফল বাস্তবায়ন বাধাগ্রস্ত হবে, তা বলাই বাহুল্য।

স্মরণ করা যেতে পারে, বছর দেড়েক আগে সিপিডি একটি ‘ত্বরিত মূল্যায়ন জরিপের’ আয়োজন করেছিল। জরিপে অংশ নেয়া ব্যবসায়ীদের ৬১ শতাংশ দেশ থেকে টাকা পাচার বাড়ছে- এ অভিমত ব্যক্ত করে সে সময় বলেছিলেন, ব্যাংক ও শেয়ারবাজারে (আর্থিক খাত) বিশৃঙ্খলা নিয়েও তারা চিন্তিত এবং এসব থেকে পরিত্রাণ পেতে সরকারের রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত দরকার।

বেসরকারি খাতে বিনিয়োগের পরিমাণ বৃদ্ধি পেলে, সেই সঙ্গে দুর্নীতির মাত্রা কমিয়ে আনা গেলে বিদেশে অর্থ পাচার হ্রাস পাবে, এতে কোনো সন্দেহ নেই। বলার অপেক্ষা রাখে না, এক্ষেত্রে রাজনৈতিক সদিচ্ছা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

উদ্বেগের বিষয় হল, কেবল আমদানি-রফতানি প্রক্রিয়া নয়, আরও নানাভাবে প্রতি বছর দেশ থেকে টাকা পাচার হচ্ছে। বিদেশে অর্থ পাচার একটি গুরুতর অপরাধ। এজন্য শাস্তির বিধান রেখে আইনও করা হয়েছে।

তারপরও টাকা পাচারের ঘটনা বন্ধ হচ্ছে না কেন, এ এক প্রশ্ন বটে! আইনগতভাবে দেশের বাইরে টাকা নিয়ে যাওয়ার সুযোগ না থাকলেও গত ১৪ বছরে অনেকে মালয়েশিয়া, ইংল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, কানাডা, যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া ইত্যাদি দেশে বাড়ি-ফ্ল্যাটসহ বিভিন্ন ব্যবসা-বাণিজ্যে হাজার হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছেন।

বহুল আলোচিত পানামা ও প্যারাডাইস পেপার্সেও বাংলাদেশিদের নাম অন্তর্ভুক্ত থাকার সংবাদ গণমাধ্যমে এসেছে। পুঁজি পাচারের ঘটনা ঘটে মূলত সঞ্চয় ও বিনিয়োগের মধ্যে ভারসাম্যহীনতা সৃষ্টির পরিপ্রেক্ষিতে। আশঙ্কার বিষয় হল, দেশে সঞ্চয় বাড়লেও বিনিয়োগ বাড়ছে না।

টাকা পাচারের আরেকটি বড় কারণ দুর্নীতি। দুর্নীতি বেড়েছে বলেই অর্থ পাচারের হারও দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। অভিযোগ রয়েছে, টাকা পাচারের বিষয়টি সরকার অবহিত থাকলেও কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না; কারণ প্রধান দুটি রাজনৈতিক দলের প্রভাবশালীদের অনেকেই অর্থ পাচার প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত।

তবে অর্থ পাচার প্রক্রিয়ায় কেবল রাজনীতিক নন, দেশের অনেক ব্যবসায়ী, সরকারি চাকরিজীবীসহ বিভিন্ন পেশাজীবী জড়িত। তারা নীতি-নৈতিকতা ও দেশপ্রেম ভুলে বিদেশে অর্থ পাচার করছেন, যা থেকে মুক্তির উপায় খোঁজা জরুরি। এসডিজির সফল বাস্তবায়ন তো বটেই; দেশের সামগ্রিক উন্নয়ন ও সুশাসন নিশ্চিত করতে হলে টাকা পাচারের ঘটনাকে হালকাভাবে নেয়ার সুযোগ নেই।