এমপি বিদেশে, বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানে প্রধান বাবা: ‘ক্ষুব্ধ’ চেয়ারম্যান

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

বিজয় দিবসে উপজেলা প্রশাসন আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকার কথা ছিলো স্থানীয় সংসদ সদস্যের। কিন্তু তিনি দেশের বাইরে থাকায় অনুষ্ঠানে উপস্থিত হতে পারেননি। পরে তার বাবাকে ওই অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি করা হয়। এ নিয়ে আপত্তি জানান উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান। মহান বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানে কুমিল্লার দেবিদ্বার উপজেলা প্রশাসনের এমন একটি সিদ্ধান্ত নিয়ে বিতর্ক ও একটি পক্ষে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।

এ বিষয়ে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের দাবি, উপজেলা প্রশাসন ওই অনুষ্ঠানে  নিয়মবহির্ভূতভাবে সংসদ সদস্যের বাবাকে প্রধান অতিথি বানিয়েছে। জনপ্রতিনিধি না হয়ে এমপির বাবা কোনভাবেই প্রধান অতিথির চেয়াররে বসতে পারেন না।

 

এদিকে, অনুষ্ঠান চলাকালে বিষয়টি নিয়ে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের সঙ্গে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) বাকবিতণ্ডার ঘটনাও ঘটেছে। লিখিত অভিযোগ পেলে ঘটনাটি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলছেন কুমিল্লার জেলা প্রশাসক (ডিসি)।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কুমিল্লা-৪ (দেবিদ্বার) আসনের সংসদ সদস্যসের সঙ্গে ওই উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের দীর্ঘদিন ধরে রাজনৈতিক বিরোধ চলে আসছে। উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে শুক্রবার (১৬ ডিসেম্বর) মহান বিজয় দিবসে জাতীয় পতাকা উত্তোলন, কুচকাওয়াজ ও শরীরচর্চা প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়। উপজেলা সদরের এবিএম গোলাম মোস্তফা স্টেডিয়ামে আয়োজিত অনুষ্ঠানে ইউএনও ডেইজি চক্রবর্ত্তীর সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকার কথা ছিল স্থানীয় সংসদ সদস্য রাজী মোহাম্মদ ফখরুলের। এতে বিশেষ অতিথি ছিলেন উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও কুমিল্লা উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মো. আবুল কালাম আজাদ। তবে স্থানীয় সাংসদ অসুস্থতার কারণে চিকিৎসা নিতে বর্তমানে থাইল্যান্ডে রয়েছেন। শুক্রবার বেলা সাড়ে ১০টার দিকে তার অনুপস্থিতিতে সাংসদের বাবা এএফএম ফখরুল মুন্সীকে প্রধান অতিথি হিসেবে ঘোষণা করেন ইউএনও। এ সময় বিষয়টি নিয়ে আপত্তি জানান উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান। তখনই চেয়ারম্যানের সঙ্গে বাকবিতণ্ডায় জড়ান ইউএনও।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত অন্তত ১০ জনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ঘটনার সময় বাকবিতণ্ডায় জড়িয়ে ইউএনও-কে উদ্দেশ করে উপজেলা চেয়ারম্যান বলেন, রাষ্ট্রীয় কর্মসূচিতে এমপি সাহেব অনুপস্থিত থাকলে উপজেলা চেয়ারম্যানই হবেন প্রধান অতিথি। জনগণের ভোটে নির্বাচিত উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান উপস্থিত থাকা অবস্থায় জনগণের প্রতিনিধি নয়, এমন কাউকে প্রধান অতিথি করার সুযোগ নেই। এখানে এমপি সাহেবের বাবা কোনভাবেই প্রধান অতিথি হতে পারেন না। এটা নিয়মবহির্ভুত। জবাবে ইউএনও চেয়ারম্যানকে বলেন, এমপি সাহেবের বাবা সাবেক উপমন্ত্রী এবং এমপি ছিলেন। সে হিসেবে তিনিই হবেন প্রধান অতিথি। বিষয়টি নিয়ে আপত্তি জানানোর পরও সাংসদের বাবাকে প্রধান অতিথির চেয়ারে বসিয়ে অনুষ্ঠান সম্পন্ন করা হয়। তবে অনুষ্ঠানের শেষ অংশে সাংসদের বাবাকে পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে উপস্থিত না থেকেই চলে যেতে দেখা গেছে। এ ঘটনার পর থেকেই বিষয়টি নিয়ে দেবিদ্বারে শুরু হয় তুমুল বিতর্ক।

শনিবার বিকেলে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো.আবুল কালাম আজাদ বলেন, রাষ্ট্রীয় কর্মসূচিতে উপজেলা প্রশাসন এমন কাণ্ডজ্ঞানহীন দায়িত্ব পালন করবে ভাবাই যায় না। অনুষ্ঠানে এমপি সাহেব অনুপস্থিত থাকায় তার পক্ষে বাণী পাঠ করেন উপজেলা পরিদের ভাইস চেয়ারম্যান মো. আবুল কাশেম ওমানী। এরপরও নিয়মের বাইরে গিয়ে অন্যায়ভাবে এমপি সাহেবের বাবাকে প্রধান অতিথি হিসেবে ঘোষণা দেন ইউএনও। আমি বিষয়টি নিয়ে আপত্তি জানালে ইউএনও রাষ্ট্রীয় নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করেই উল্টো আমার সঙ্গে বিতর্ক শুরু করেন। নিয়মানুযায়ী এমপি সাহেবের অনুপস্থিতিতে আমি সবার শেষে বক্তৃতা করার কথা থাকলেও ইউএনও এমপির বাবাকে সবশেষে বক্তৃতা করতে দিয়েছেন। এ ঘটনার নিন্দা জানাচ্ছি।

ওই অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে আরো উপস্থিত ছিলেন কুমিল্লা উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রোশন আলী মাস্টার, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান নাজমা বেগম, দেবিদ্বার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কমল কৃষ্ণ ধর, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সফিউদ্দিন সফিসহ বিশিষ্ট ব্যক্তিরা।

শনিবার বিষয়টি নিয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শফিউদ্দিন শফি সাংবাদিকদের বলেন, বিজয় দিবসের রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানে এমপির অনুপস্থিতিতে তার বাবাকে প্রধান অতিথি করে উপজেলা প্রশাসন নিয়মবহির্ভূত কাজ করেছেন। বিষয়টি নিয়ে তুমুল বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। এসব বিষয়ে তাদেরকে আরো দায়িত্বশীল হওয়া দরকার ছিল।

শনিবার বিকেলে ও রাতে এসব বিষয়ে কথা বলতে দেবিদ্বার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ডেইজি চক্রবর্ত্তীর সরকারি মোবাইল ফোন নম্বরে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।

এ প্রসঙ্গে কুমিল্লার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোহাম্মদ শাহাদাত হোসেন বলেন, শুক্রবার বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানের সময় দেবিদ্বারের ইউএনওকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।   সংসদ সদস্য মহোদয় অনুপস্থিত থাকলে সেক্ষেত্রে তার পক্ষে যেকোনো একজন সংসদ সদস্যের বাণী পাঠ করবেন। কিন্তু অনুষ্ঠানে অন্য কেউ নয়, সংসদ সদস্যই প্রধান অতিথি থাকবেন। প্রয়োজনে প্রধান অতিথির চেয়ার খালি রেখেই অনুষ্ঠান শেষ হবে। আর সংসদ সদস্যের পরে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সিনিয়র। সেক্ষেত্রে সংসদ সদস্য অনুপস্থিত থাকায় উপজেলা চেয়ারম্যান সবার শেষে বক্তব্য দেবেন। আমার জানামতে এভাবেই অনুষ্ঠান শেষ হয়েছে। তবে এর বাইরে কিছু হয়ে থাকলে বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখতে হবে।

কুমিল্লার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শামীম আলম বলেন, বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন মাধ্যমে শোনার পর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সঙ্গে এ নিয়ে কথা হলে তিনি জানান, বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানে কাউকে প্রধান অতিথি করা হয়নি। তারপরও উপজেলা চেয়ারম্যান যদি মনে করেন সেখানে তার অধিকার ক্ষুণ্ন হয়েছে, তাহলে তিনি লিখিত অভিযোগ দিতে পারেন। আমরা অভিযোগ পেলে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবো। সূত্র: কালের কণ্ঠ