এমপির দাবি মেয়ের বয়স ১৯, কাগজপত্র বলছে ১৫!

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক: মুক্তাগাছা উপজেলাকে ৩১ জানুয়ারি বাল্যবিয়ে মুক্ত ঘোষণা করা হয়। আর ১৭ ফেব্রুয়ারি (শুক্রবার) ময়মনসিংহ-৫ আসন মুক্তাগাছার জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য সালাউদ্দিন আহমেদ মুক্তি তার দুই মেয়ের বিয়ে দেন। দুই মেয়ের মধ্যে ছোট মেয়ে আফসানা মীম প্রিয়ন্তির বাল্যবিবাহ হয়েছে বলে অভিযোগ ওঠেছে। এমপির দাবি, তার মেয়ের বয়স ১৯ বছর। কিন্তু রঘুনাথপুর দাখিল মাদ্রাসায় প্রিয়ন্তির দেওয়া ভর্তির তথ্য অনুয়ায়ী তার বয়স ১৫ বছর ১ মাস ১৬ দিন।

রঘুনাথপুর দাখিল মাদ্রসারা সুপারিনটেনডেন্ট আব্দুল হান্নান বলেন, ‘প্রিয়ন্তি ২০১৫ সালে মাদ্রাসায় ৮ম শ্রেণিতে ভর্তি হয়। ওই বছরই সে জেডিসি পরীক্ষায় অংশ নেয়। বর্তমানে প্রিয়ন্তি ১০ শ্রেণিতে পড়ছে। ভর্তির সময় দেওয়া কাগজপত্র অনুযায়ী তার জন্ম তারিখ ২০০২ সালের ৩১ ডিসেম্বর।’ ভর্তির সময় প্রিয়ন্তি মাদ্রাসায় কোনও জন্ম নিবন্ধনের সনদ জমা দেয়নিও বলেও তিনি জানান।

এ বিষয়ে জানতে এমপিকে কয়েকবার ফোন করা হয়। তবে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

প্রসঙ্গত, ১৭ ফেব্রুয়ারি উপজেলা প্রশাসন চত্বরে বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদসহ স্থানীয় প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে এমপি সালাউদ্দিন তার বড় মেয়ে মাসফুরা মীম পায়েল ও ছোট মেয়ে আফসানা মীম প্রিয়ন্তির বিয়ে দেন।

বাল্যবিয়ে মুক্ত এলাকায় এমপি তার মেয়ের বাল্যবিয়ে দিয়ে সমালোচনার মুখে পড়েন। এ নিয়ে  রবিবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) সংবাদ সম্মেলন করেন এমপি সালাউদ্দিন। তিনি জানান, তার মেয়ে প্রিয়ন্তি রঘুনাথপুর দাখিল মাদ্রাসার দশম শ্রেণিতে পড়ছে। তার জন্ম তারিখ ১৯৯৮ সালের ১ জানুয়ারি। সে অনুযায়ী প্রিয়ন্তির বয়স এখন ১৯ বছর ১ মাস ১৮ দিন।এমপি সালাউদ্দিন

তিনি সাংবাদিকদের মুক্তাগাছা পৌরসভা থেকে ২০১৪ সালের ৮ জুলাই তৎকালীন মেয়র মো. আব্দুল হাই আকন্দের সই করা প্রিয়ন্তির একটি জন্ম নিবন্ধন সনদপত্রও দেখান। যার নিবন্ধন নম্বর ১৯৯৮৬১২৬৬০৬০৬৫৩৫৩।

বর্তমান মেয়র শহিদুল ইসলাম জানান, তার সময়ে প্রিয়ন্তির নামে কোনও জন্ম নিবন্ধন সনদপত্র ইস্যু করা হয়নি। আগের মেয়রের সময় সনদ দেওয়া হতে পারে। বিষয়টি তিনি খতিয়ে দেখবেন।

এ বিষয়ে সাবেক মেয়র আব্দুল হাই বলেন, ‘এমপি সালাউদ্দিন তার মেয়ে প্রিয়ন্তির নামে জন্ম নিবন্ধন সনদপত্র নিয়ে থাকতে পারেন। আমি এই মুহুর্তে তা মনে করতে পারছি না।’

মুক্তাগাছার সাবেক এমপি খোন্দকার আব্দুল মালেক শহীদুল্লাহ বলেন, ‘আইন যারা প্রনয়ণ করেন, তারাই যদি না মানেন, তবে এটা আত্মহত্যার সামিল।’ এমপি কন্যার বাল্যবিয়ে দেওয়ার বিষয়টি সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের খতিয়ে দেখার অনুরোধ করেছেন।

মুক্তাগাছা উপজেলা মহিলা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক সুরাইয়া মালেক বলেন, ‘সত্যিকারের অর্থেই যদি এমপি সাহেবের মেয়ের বয়স ১৮ বছর না হয়ে থাকে, তবে তা নারী সমাজের জন্য পীড়াদায়ক। বাল্যবিয়ে বন্ধে আমরা দীর্ঘ দিন ধরে আন্দোলন করে আসছি। এই আন্দোলনের কারণেই চলতি বছরের ৩১ জানুয়ারি এমপি সাহেব নিজেই মুক্তাগাছাকে বাল্য বিবাহমুক্ত ঘোষণা করেছেন। তিনিই যদি আইন না মানেন তবে সাধারণ মানুষ কি করে আইন মানবে?

মুক্তাগাছা উপজেলা নির্বাহী অফিসার জুলকার নায়ন বলেন, ‘এমপি মেয়ের বিয়ে বাল্য বিয়ে কিনা, এটা আমি বলতে পারবো না।’

সূত্র: বাংলাট্রিবিউন